ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও বিনাশী রোগ

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ১০ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও বিনাশী রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : লুপাস হলো বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় ও বিনাশী এক রোগ, যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন করতে পারে।

লুপাসের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো- চুল পড়া, মাথাব্যথা, নাক ও গালের ওপর প্রজাপতির পাখার মতো লাল চাকা, চরম ক্লান্তি বা অবসাদ, জ্বর, মুখে বা নাকে ঘা, গিরায় ব্যথা বা ফোলা, অস্বাভাবিক রক্তজমাট, রক্তশূন্যতা, বুকে গভীর নিশ্বাসের সময় ব্যথা, রোদ বা আলোয় শরীরের চামড়ায় প্রভাব বা জ্বালাপোড়া, ঠাণ্ডায় আঙ্গুল সাদা বা নীলাভ হয়ে যাওয়া এবং হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা ইত্যাদি।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব লুপাস দিবসের র‌্যালি শেষে সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, প্রকৃতপক্ষে লুপাস বা এসএলই মানে সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস। এসএলই রোগে রোগীর রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেম নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে। এই রোগকে সিস্টেমিক বলা হয়, কারণ এই রোগটি শরীরে বিভিন্ন সিস্টেম (যেমন- চর্ম, রক্তসঞ্চালন তন্ত্র, কিডনি ইত্যাদিকে) আক্রমণ করে। ইরাথেমেটোসাস শব্দটির অর্থ ত্বকের কিছু অংশ লাল হয়ে যাওয়া। লুপাস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ নেকড়ে। যেহেতু এই রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মতো আকস্মিক, তাই একে লুপাস বলা হয়। আজ পর্যন্ত এই রোগের সঠিক কোনো কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি।

এ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে লুপাস বা এসএলই সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগ, লুপাস ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে রোগীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট, লুপাস গাইড বই বিতরণ করাসহ রোগীদের সাথে সচেতনতামূলক পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া সেশন বা মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠান ও সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান। সভাপতিত্ব করেন লুপাস ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এন আলম। আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লুপাস ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, রিউমাটোলজি সোসাইটির বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীন প্রমুখ।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার তার বক্তব্যে লুপাস রোগীদের হতাশ না হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে থাকার প্রবণতা ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, লুপাস রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় যাতে রোগীদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

অন্য বক্তারা বলেন, বিশ্বে ৫০ লাখ লুপাস রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এ রোগ প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ১৫০ জনের হতে পারে। শতকরা ৯০ ভাগ লুপাস রোগী কমবয়সী মহিলা। শতকরা ৬৫ ভাগ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ৫৫-এর মধ্যে, শতকরা ২০ ভাগ ১৬ বছরে নিচে এবং শতকরা ১৫ ভাগ ৫৫ বছরের বেশি। ছেলেদের এই রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম। অন্য বক্তারা এ রোগের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বিশেষ করে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন পদ সৃষ্টি ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মে ২০১৮/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়