ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চীনের অনুদানে পূর্বাচলে হবে বাণিজ্য মেলা কমপ্লেক্স

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১০ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চীনের অনুদানে পূর্বাচলে হবে বাণিজ্য মেলা কমপ্লেক্স

কেএমএ হাসনাত : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার চীনের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে। ২০২০ সালের মধ্যে এ কমপ্লেক্স নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ২০১৯ সালেই শেষ হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের আগে নির্মাণ শেষ হলে ২০১৯ সালে এখানেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে। এজন্য মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

যানজট এড়ানোর পাশাপাশি বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থান পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র আগারগাঁও থেকে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি শহরের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর রাজধানীর পাশে পূর্বাচল উপশহরে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ঠিকানা চূড়ান্ত করা হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য থেকে জানা যায়, প্রকল্পে ৪৭৫ কোটি দেবে সরকার, চীন সরকার প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দেবে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ইপিবির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা, চীনা সরকারের প্রকল্প সাহায্য ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ইপিবির নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ কোটি ১৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

১৯৯৫ সাল থেকে ইপিবি আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ সচিবালয় নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে হয়ে আসছিল। কিন্তু এই বাণিজ্যমেলা আয়োজনের জন্য প্রতি বছরই টেন্ডার দিয়ে কোটি টাকা ব্যয় করে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো।

১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁওস্থ পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় মেলার স্থায়ী প্রাঙ্গণ নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০০৯ সালে তেজগাঁওস্থ পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় ৩৯.৪৫ একর জমির ওপর ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। চীন সেখানে ২১০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছিল। একই বছর ৯ ডিসেম্বর একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। কিন্তু সিভিল এভিয়েশন থেকে আপত্তির কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। পরবর্তীতে এটির স্থায়ী কেন্দ্র করার জন্য বড় আকারের জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ঢাকার অদূরে পূর্বাচল উপশহরে স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইপিবির প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) এই মেলার কেন্দ্র নির্মাণে পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে ১০ একর জমির বিপরীতে ১৩৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পরে চীন সরকার বাংলাদেশের এই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা অর্থায়ন করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে।

ইপিবি বরাদ্দকৃত জমিতে ভূগর্ভস্থ কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা বিবেচনায় রেখে স্কিমেটিক ডিজাইন প্রণয়নের জন্য চীনা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের মতামতে প্রকল্পের ডিজাইনে ১৫০০ ভূগর্ভস্থ কার পার্কিং ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। চীন সরকার কর্তৃক বেইজিং ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচারাল ডিজাইন (বিআইএডি) কর্তৃক প্রাথমিক মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাটির গাঁথুনি শক্ত নয় এবং পানির স্তর উচ্চ পর্যায়ে। তারা কার পার্কিংয়ের জন্য অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থা গ্রহণ বা আলোচ্য প্রকল্প বাতিলের অনুরোধ জানায় চিঠিতে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরো ১০ একর জমি দেওয়ার জন্য রাজউককে অনুরোধ জানায়।

এদিকে, রাজউকের পরিচালকের (প্রশাসন) এক চিঠিতে বলা হয়েছে, পূর্বাচল উপশহরে শিল্প পার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে প্রথমে ১০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অতিরিক্ত আরো ১০ একরসহ মোট ২০ একর জমি মেলা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই জমির কাঠাপ্রতি মূল্য ধরা হয় ১০ লাখ টাকা। নতুন করে জায়গা পাওয়ার ফলে ১ হাজার গাড়ি উন্মুক্ত স্থানে এবং ৫০০ গাড়ি দ্বিতীয় ভবনের পার্কিংয়ে রাখা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২১০ কোটি টাকার বিষয়ে চীন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি আর্থিক চুক্তি সম্পাদিত আগেই হয়েছিল। চীনা অনুদান বাড়িয়ে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত হওয়ায় এ ব্যাপারে সরকারের নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। নতুন নকশা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা চীন সরকারকে অবহিত করার জন্য পেশ করা হবে। এরপর ইআরডি ও চীন সরকারে মধ্যে আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৮/হাসনাত/রফিক  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়