ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল-টাটা মেমোরিয়ালের সমঝোতা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৪ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল-টাটা মেমোরিয়ালের সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রক্তরোগসহ ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।

রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের বি ব্লকের ডা. মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান এবং টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের পরিচালক (একাডেমিকস) প্রফেসর এস. বানাভালি ও প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক সুমীত গুজরাল।

সভাপতিত্ব করেন হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। হেমাটোলজি বিভাগের কার্যক্রম তুলে ধরেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।  অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসান, শিশু অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, প্রক্টর অধ্যাপক সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, নবনিযুক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও ভারত নানাভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। আজকের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও ভারতের সহায়তার অংশ বলেই আমি মনে করি। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার ফলে এটি দেশের ক্যান্সার রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট অত্যন্ত জরুরি। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চালু করা সম্ভব হবে। এতে করে দেশের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা সহজলভ্যে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পাবেন এবং অনেক রোগী অকালে মৃত্যুবরণ থেকে রক্ষা পাবেন।

উল্লেখ্য, ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েছেই চলেছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর (২০১৫) ৮৮ লাখ (৮.৮ মিলিয়ন) মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। এরমধ্যে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হলো রক্তরোগের ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়েলোমা ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে গত ২০১২ সালের তুলনায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রক্তরোগের ক্যান্সার ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বংলাদেশে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ হাজার ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। প্রতিবছর নতুন করে রক্তরোগের বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারে প্রায় ১২০০ রোগী চিহ্নিত করা  হয়।  এসব রোগীর অধিকাংশেরই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাটি দেশে সহজলভ্য এবং নিয়মিতভাবে চালু না থাকার কারণে অনেক রোগীই অকালে মৃত্যুবরণ করছে। অনেক রোগী বিদেশ চিকিৎসা নিচ্ছে এতে করে প্রচুর মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার ফলে অটোলোগাস ও অ্যালোজেনিক পদ্ধতিসহ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (বিমটি) পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে।

বিএমটি-এর অটোলোগাস চিকিৎসায় দেশের বাইরে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং অ্যালোজেনিক চিকিৎসায় ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৩ মাস পর নিয়মিতভাবে অটোলোগাস এবং ৬ মাস পর অ্যালোজেনিক পদ্ধতির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চালু করা হবে। এখানে চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে। পূর্ণাঙ্গভাবে নিয়মিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট চালু হলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

শিক্ষা বিনিময় ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ায় উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও চিকিৎসার স্বার্থে রোগীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হস্তান্তরের নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হবে।

উভয় প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক বা বিশেষজ্ঞবৃন্দ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মার্চ ২০১৯/শাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়