ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমেরিকানরা কেন কিউবায় চিকিৎসা নিতে যায়?

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমেরিকানরা কেন কিউবায় চিকিৎসা নিতে যায়?

শাহিদুল ইসলাম : লাতিন আমেরিকার ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র কিউবা। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামরিক ও ভৌগোলিক অবরোধের মধ্যে রয়েছে। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের এই অবরোধের কারণে কিউবাকে বারবার বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে কিউবার অর্থনীতি আশানুরুপ উন্নত হয়নি। তবে অবরোধ ও শত বাধা-বিপত্তির পরও হার মানেনি মহামতি ফিদেল কাস্ট্রোর এই দেশটি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুটি মৌলিক সেবা খাতের উন্নয়নে বিশ্বের বহু উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন তারা। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেশটি যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধন করেছে, তা উন্নত বিশ্বের কাছে বিস্ময়কর।

কিউবার স্বাস্থ্য সুবিধা এতটাই উন্নত ও সহজলভ্য, যা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ঈর্ষার বিষয়।    কিউবায় চিকিৎসাসেবা সস্তা, সহজলভ্য ও গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য রোগী চিকিৎসার জন্য কিউবায় যান। তবে দীর্ঘদিন অবরোধের কারণে মার্কিনিদের কিউবা গমন নিষিদ্ধ। সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করলেও চিকিৎসার জন্য মার্কিনিদের কিউবা গমন এখনো আগের মতো নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেক মার্কিনি চিকিৎসা লাভের জন্য আইন ভেঙে কিউবায় যান। বিশেষ করে, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বহু মার্কিনি কিউবায় ভিড় জমান।



জুডি ইঙ্গেলস নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী সম্প্রতি কিউবা থেকে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, কিউবার স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো। কিন্তু খরচ অনেক কম। যে স্বাস্থ্যসেবা আমি নিয়েছি, তা আমার দেশে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যদিও আমি দেশের প্রচলিত আইন ভেঙে কিউবা গিয়েছি, তবে তা আমার পৃথিবীতে বেঁচে থাকাকে নিরাপদ করেছে। তিনি আরও বলেন, আমি এই আইন ভাঙার ব্যাপারে মোটেও উদ্বিগ্ন নই। কারণ তা আমাকে প্রথমবারের মতো প্রকৃত জীবনের স্বাদ পেতে সাহায্য করেছে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ইঙ্গেলসের ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাকে জানানো হয়, তিনি একেবারেই ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে আছেন। চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দেন, যত দ্রুত সম্ভব তাকে সিমাভেক্স ইঞ্জেকশন নিতে হবে। এই ইঞ্জেকশন আমেরিকাতে একেবারেই অপ্রতুল কিন্তু কিউবাতে সহজলভ্য। ফলে তাকে বাধ্য হয়ে কিউবায় যেতে হয় চিকিৎসা নিতে।

জুডি ইঙ্গেলস ও তার  পরিবার কিউবাতে লা প্রাদেরা রিসোর্টে ছিলেন। লা প্রাদেরা অন্য আর দশটা যেকোনো রিসোর্টের মতো নয়। এটি একটি হেলথ রিসোর্ট। এখানে যারা আসেন তারা সাধারণ পর্যটক নন। তারা সবাই নানা ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য এসেছেন এবং দিব্যি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিউবাতে চিকিৎসা, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত মিলিয়ে ইঙ্গেলসের খরচ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ডলার।

মিসেস ইঙ্গেলস আক্ষেপের সুরে বলেন, কিউবার এই সহজলভ্য ও উন্নত চিকিৎসা পৃথিবীর কোটি কোটি লোকের জীবন রক্ষা করছে। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমে এই অতুলনীয় চিকিৎসাসেবার খবর উঠে আসে না  বললেই চলে।

(বিবিসি অবলম্বনে)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৭/শাহিদুল/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়