ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উইম্বলডন শিরোপার মাথায় আনারস কেন?

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ১৬ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উইম্বলডন শিরোপার মাথায় আনারস কেন?

আমিনুল ইসলাম : উইম্বলডনে পুরুষ এককের ফাইনালে বাংলাদেশ সময় রোববার সন্ধ্যায় মুখোমুখি হবেন রজার ফেদেরার ও মারিন চিলিচ। ফাইনালে যে-ই জিতুক, শূন্যে উঁচিয়ে ধরবেন শিরোপা। তখন হয়তো কারও কারও চোখ যাবে শিরোপার ওপরের অংশে। সেখানে একটি আনারসের প্রতিকৃতি দেখে কৌতুহলী হয়ে উঠতে পারেন। নিজের অজান্তেই মনের কোণে প্রশ্ন জাগতে পারে- উইম্বলডন শিরোপার মাথায় আনারস কেন? আপনাদের সেই কৌতুহল মেটাতেই এই আয়োজন।

অনেকের কাছে এখনো হয়তো উইম্বলডন শিরোপার ওপরের অংশে সোনালী রংয়ের আনারসের প্রতিকৃতি রহস্যময় কিছু। তবে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রচলিত কাহিনি অাছে।


তার একটি ঠিক এরকম- সপ্তদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যে আনারস জন্মানো অসম্ভব ছিল। তখন এখানে আনারস হতোই না। সে কারণে বাইরে থেকে এটা আমদানি করতে হতো। যেকোনো আপ্যায়নে আনারস দেওয়াটা ছিল কৃতিত্ব পাওয়ার মতো বিষয়। আপনি যদি এখনো যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন, দেখবেন যে অনেক বাড়ির দরজায় আনারসের ছবি আছে। অনেক বাড়িতে দেখবেন আনারসের প্রতিকৃতি তৈরি করা আছে। দুষ্প্রাপ্য বলে এটাকে সবাই কদর করত। শক্তিমত্তা ও সামর্থের বিষয় হিসেবে পরিগণিত হতো। সে কারণেই সে সময় উইম্বলডনের ওপরে এই আনারসের প্রতিকৃতি দেওয়া হয়।

কেউ কেউ মনে করেন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই উইম্বলডন শিরোপার মাথায় আনারসের প্রতিকৃতি দেওয়া হয়েছে।

আর একটি তথ্য অনুযায়ী, ফল মূলত সম্মানের প্রতীক। আমরা কাউকে অভ্যর্থনা জানালে আপ্যায়ন করার ক্ষেত্রে ফল দিয়ে করি। এটা মূলত অতিথিকে সম্মানিত করার বিষয়। দুর্লভ ও জনপ্রিয় হওয়ায় সে সময় আনারস ছিল সম্পদ ও প্রাচুর্যের প্রতীক। আপ্যায়ন, প্রাচুর্য ও সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে উইম্বলডনের ওপরের অংশে আনারসের প্রতিকৃতি দেওয়া হয়।


আরো একটি মতবাদ প্রচলিত আছে। সেটা হলো সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেনরা যখন ঘরে ফিরতেন, তখন ঘরের দরজায় একটি আনারস রেখে দিতেন। সেই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উইম্বলডনের মাথায় আনারসের আকৃতি রাখা হয়।

একটা সময় ছিল যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপের কোথাও আনারস জন্মাতো না। সেই সময় থেকে আনারস দুষ্প্রাপ্য ও জনপ্রিয় একটি ফল হয়ে ওঠে। প্রাচুর্য ও মর্যাদাকর জিনিস হয়ে ওঠে। সেই সময় কোনো আচার-অনুষ্ঠানের জন্য আনারস ভাড়ায় পাওয়া যেত! ভাড়ায় যে আনারস আনা হতো, সেটা কেবল প্রদর্শনের জন্য রাখা হতো। মূলত টেবিলে আনারস থাকাটা স্ট্যাটাসের একটি বিষয় ছিল। সে সময় একটি আনারস এক রাতের জন্য ভাড়া করলে বর্তমান মূল্য অনুযায়ী ৫ হাজার পাউন্ড গুনতে হতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ক্রিস্টোফর কলম্বাস সর্বপ্রথম ইউরোপ অঞ্চলে আনারস নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ওই অঞ্চলে আনারসের আবাদ শুরু হয়। ইউরোপের মানুষজন আনারসের রাজকীয় স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পায়। তখন থেকে আনারস এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, বাড়ির ছাদের ওপরে, দরজায়, জানালায়, এখানে-ওখানে আনারসের প্রতিকৃতি তৈরি করতে শুরু করে। এখনো আপনি যদি লন্ডনে যান এবং একবার যদি আনারসের প্রতিকৃতি চোখে পড়ে, তাহলে সেগুলো দেখতেই থাকবেন। যেদিকে চোখ যাবে, কোথাও না কোথাও আনারসের প্রতিকৃতি দেখতে পাবেন। 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৭/আমিনুল/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়