ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আইসিসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় ৭ জয় (শেষ পর্ব)

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইসিসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় ৭ জয় (শেষ পর্ব)

রুহুল আমিন : তথাকথিত বড় দলগুলোকে বাংলাদেশ হারাতে পারে না, আগে নিয়মিতই এই কথা শোনা যেত। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ঠিক যতটুকু যোগ্য বলে দাবিদার বাংলাদেশ সেটুকুও যেন দিতে চায় না বড় দলগুলো বা তথাকথিত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। সব সময় বাংলাদেশ দল আন্ডাররেটেড এবং প্রাপ্য প্রশংসাটুকুও করা হয় না। তবে বাংলাদেশ সমালোচকদেরকে সব সময় জবাব দিয়েছে এবং কখনো কখনো লজ্জায়ও ফেলেছে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাদের বেশ কয়েকটি স্মরণীয় জয় আছে। আর তাদের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ও আশ্চর্যজনক জয়টি ছিল ২০০৫ সালে কার্ডিফে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো।



এ ছাড়াও বিশ্ব আসরে বেশ কয়েকবার তারা তাদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আট দলের অংশগ্রহণে নক আউট পদ্ধতির আইসিসি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েও তারা তাদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে আবার। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে এই পর্যন্ত সাতবার পরাজিত করেছে। যা সত্যি অবিস্মরণীয় বাংলাদেশ দলের জন্য। চলুন দেখে আসি সেই সাত জয়:

৫. ২০১১ বিশ্বকাপ, চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় : দেশের মাটিতে হাজার হাজার দর্শকদের সামনে বাংলাদেশ দলের দারুণ এক সুযোগ শক্তিশালী কোনো দলের বিপক্ষ জয় লাভ করা। কারণ আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে লজ্জাজনকভাবে অলআউট হয়ে বিশ্বকাপ সহ-আয়োজক দেশ হিসেবে দর্শকদের খানিকটা হতাশায় ডুবিয়েছেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। এই ম্যাচে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। শুরুতেই চট্টগ্রামের ফ্লাট উইকেটে স্পিং আক্রমণের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড। ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ধুঁকতে থাকে। পরে জনাথন ট্রট ও ইয়ন মরগান ইংল্যান্ডের ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন। তারা ১০৯ রানের জুটি গড়েন। নাঈম ইসলামের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মরগান ৬৩ রান করেন। আর ট্রট ৯৯ বল খেলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন। ৪৯ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ২২৫ রান করতে সক্ষম হয়। 

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে তামিম ইকবাল ২৬ বলে ৩৮ রানের দূরন্ত এক শুভসূচনা করেন। কিন্তু এরপর দ্রুতই উইকেট পড়তে থাকে এবং ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ধুঁকতে শুরু করে। তবে এ সময় ইমরুল ও সাকিব ৮২ রানের কার্যকরী এক জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। অবশ্য তখনো অনেক বাকি। কারণ বাংলাদেশ ১৫৫ রানে ৩ উইকেট থেকে হঠাৎই ১৬৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে। ইংল্যান্ড দলের বোলার আজমল শাহজাদ ও সোয়ান এই ধস নামান বাংলাদেশের ইনিংসে। তখন ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাস। দরকার ১০ ওভারে ৫৬ রান। এই দুই ব্যাটসম্যান সোয়ানকে টার্গেট করলেন এবং তার এক ওভারে দুই চার ও এক ছয় মারেন। তারপর ৪৬তম ওভার করতে আসা জেমস অ্যান্ডারসনের ওভার থেকে নেন ১১ রান। শেষ পর্যন্ত রিয়াদ ও শফিউল দলের কান্ডারি হন। বাংলাদেশ ২ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয়।  

 



৬. ২০১৫ বিশ্বকাপ, অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় : গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড কেবল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে। আর বাকিগুলোতে হেরে বাংলাদেশের বিপক্ষের এই ম্যাচ ছিল তাদের বাঁচা মরার লড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালে কোয়ালিফাই করতে হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছাড়া আর কোনো রাস্তা ছিল না তাদের। টস জিতে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ইয়ন মরগান বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। শুরুতে তামিম ও ইমরুলের উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ চাপে পড়ে। তবে সৌম্য ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে তোলেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা ১৪১ রান করে দলকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি স্কোর দেন। মাহমুদুল্লাহর ১০৩ রানের অনবদ্য এক ইনিংস ও সৌম্যের ৪০ এবং শেষের দিকে মুশফিকুর রহিমের ৮৯ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৫ রান করতে সক্ষম হয়।

ইংল্যান্ড তাদের ব্যাটিং শুরু করে। তাদের শুরু দেখে যেকেউ ভেবেছিল ম্যাচ জেতা ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবছেনা তারা। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল ৬৩ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন। এক সময় ২ উইকেটে ১২১ রান হয়। কিন্তু তারপরই হঠাৎ যেন খেই হারিয়ে ফেলে তারা। ১২১ থেকে ১৬৩ রানে যেতে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড।

এই ধসের শুরুটা হয় মোটামুটি সেট ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলস ও জো রুটকে দিয়ে। তারপর মরগান শূন্য ও জেমস টেইলর ১ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর অবশ্য জস বাটলার ও ক্রিস ওয়াকস ইংল্যান্ডকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু তাসকিন আহমেদ বাটলারকে আউট করলে শেষবারের মতো ইংল্যান্ডের আশার তরী ডুবতে থাকে। এক প্রান্তে ওকস ৪২ রান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। অন্যপ্রান্তে রুবেল হোসেন এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের শেষ স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেন। ১৫ রান বাকি থাকতে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায়। ৫৩ রান দিয়ে রুবেল হোসেন ৪ উেইকেট নেন এবং মাহমুদুল্লাহ অনবদ্য সেঞ্চুরির জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।

 



৭. ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় : চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য দুই দলকেই ম্যাচটি জেতা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। যে জিতবে সে সেমির দৌড় এগিয়ে থাকবে এমন ক্যালকুলেশন থেকে শুরু হওয়া খেলায় টসে জিতে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ভাল হয়নি। তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে উইলিয়ামসন ও রস টেইলর ৮৩ রান করে প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরান।  কিন্তু পার্টটাইম অফ স্পিন বোলার মোসাদ্দেক হোসেন খুবই কার্যকরী এক স্পেলে বোলিং করে নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন। ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মোসাদ্দেক। সব মিলিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড ২৬৫ রান করতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই কিউই পেস বোলার টিম সাওদি একাই টপ ওর্ডার ধসিয়ে দেন। তিনি টপ অর্ডারের তিনজনকে শুরুতে সাজঘরে ফেরান। তার সঙ্গে অ্যাডাম মিলনে নেন এক উইকেট। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন চরম এক বিপদে। তখন সম্মানজনক হারার জন্য লড়াই করা ছাড়া কোনো উপায় যেন নাই বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু কে জানত এই অবস্থান থেকে রেকর্ড রানের পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরাবে। দলের সিনিয়র খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২২৪ রেকর্ড রানের পার্টনারশিপ গড়েন। পুরো বিশ্বের ক্রিকেট দর্শকরা যেন অবাক। দুজনেই অনবদ্য সেঞ্চুরি করেন। সাকিব ১১৪ রানে আউট হন। যদিও সাকিব চেয়েছিলেন খেলা শেষ করে মাঠ ছাড়তে। কিন্তু তিনি আউট হয়ে যান। তবে মাহমুদুল্লাহ আইসিসি টুর্নামেন্টে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি ১০২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। নিউজিল্যান্ডের যেন কিছু করার ছিল না। এক প্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করে নিউজিল্যান্ড। ১৬ বল হাতে থাকতে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়