ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হচ্ছে আম্পায়ার মুকুলের

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হচ্ছে আম্পায়ার মুকুলের

ক্রীড়া প্রতিবেদক: বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের বেশিরভাগ যুবকই বড় হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন নিয়ে। মাসুদুর রহমান মুকুলও আলাদা ছিলেন না এবং সেই লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যান দীর্ঘদিন।

কঠিন পথ পেরুলেও সাফল্যের শেষটুকু দেখা হয়নি তার। অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলেই শেষ তার পদচারণা। জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াতে না পারলেও পথ হারানি মুকুল। দেশকে প্রতিনিধিত্বের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন আম্পায়ারিংয়ে।

খেলোয়াড়ী জীবনের আক্ষেপ অবশেষে পূরণ হতে চলল। আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজে ৪২ বছর বয়সি এ আম্পায়ারের অভিষেক হতে চলছে। ২১ জানুয়ারি আইসিসি এলিট প্যানেলের আম্পায়ার ব্রুছ অক্সেনফোর্ডের সাথে মাঠে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচ পরিচালনা করবেন মুকুল। এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও মাঠে থাকবেন। 

২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে দুটি ওয়ানডেতে টিভি আম্পারের দায়িত্বে ছিলেন মুকুল। এবার আর টিভিতে নয়, মাঠেই দাঁড়িয়ে পালন করবেন দায়িত্ব। তবে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া ক্রিকেটে চারদিনের ম্যাচে মাঠে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। 

১২টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং ৩০টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলা মুকুলের খেলোয়াড়ী জীবন অনেকটাই বিবর্ণ! কিন্তু মাঠের আম্পায়ারিংয়ে তার রয়েছে বেশ সুনাম। সেই সুনামটা ছড়িয়ে দিতে চান আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

বাংলাদেশের কোনো আম্পায়ার নেই আইসিসির এলিট প্যানেলে। চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন মুকুল। তার বিশ্বাস আইসিসির এলিটন প্যানেলে শীঘ্রই যাবে বাংলাদেশের কোনো আম্পায়ার। শুক্রবার সকালে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হন মুকুল। কথোপকথনের কিছু অংশ দেওয়া হলো রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য,
 


রাইজিংবিডি: খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার হতে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই বেশ রোমাঞ্চিত?
মাসুদুর রহমান মুকুল: অবশ্যই। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করার পর আম্পায়ারিংয়ে যখন ঢুকেছি তখন থেকেই আমার টার্গেট ছিল যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করব। এটা যখন পেয়ে যাচ্ছি…অনেক বেশি রোমাঞ্চিত।

রাইজিংবিডি: দীর্ঘদিনের পরিশ্রম রয়েছে এর পিছনে। এখন নিজেকে কিভাবে তৈরী করছেন?
মাসুদুর রহমান মুকুল: নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করার জন্য যে হোমওয়ার্ক গুলো করার দরকার সেগুলো করছি।

রাইজিংবিডি: আপনার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের শুরুটা কিভাবে?
মাসুদুর রহমান মুকুল: আসলে খেলোয়াড়ী জীবন থেকেই হুট করে আম্পায়ারিং শুরু হয়ে যায়। তখন ক্রিকেট খেলা হতো বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হঠাৎ একদিন ল্যান্ডফোনে আমাদের বড় ভাই মাসুদ ভাই জানাল, মুকুল আম্পায়ারিং করতে হবে। তখন কেপি ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসে। আমরা পরীক্ষা দিলাম। সাথে একটা কোর্স করলাম। এরপর খেলা চালিয়ে যায় দীর্ঘদিন। ২০০৭ এ যখন খেলা ছাড়লাম তখন সৈকত (শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ), আনিস ভাই (আনিসুর রহমান),  মনি ভাই (এনামুল হক) আম্পায়ারিং করছে। এবং তারা ভালো করছিল। আমাদের সমসায়মিক যারা খেলা ছাড়ছিল তারা এক দল কোচিংয়ে যাচ্ছে আরেক দল আম্পায়ারিংয়ে যাচ্ছে। মূলত মনি ভাইকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি যে একটা পজিশনে যাওয়া যাবে। ২০০৭ থেকে পেশাদার কোচিং শুরু।

প্রশ্ন: আমাদের তো আইসিসি এলিট প্যানেলে কোনো আম্পায়ার নেই। বড় মঞ্চেও আমাদের আম্পায়াররা দায়িত্ব পালন করেন না। খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগের একটা গ্যাপ থাকায় অনেক সুযোগ হারাচ্ছেন। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
মাসুদুর রহমান মুকুল: খেলোয়াড়দের সাথে আমাদের যোগাযোগের এবং স্কিলের বিষয়টি  যেটি বললেন…এটা বিশাল একটা পয়েন্ট। তবে আমার কাছে মনে হয়না আমরা যোগাযোগ ও স্কিলের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছি। আইসিসিও জানে যে, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-ভারত-পাকিস্তানের মাতৃভাষা ইংরেজি না। এটা মূল বিষয় না। 
 


প্রশ্ন: তাহলে আমরা পারছি না কেন?
মাসুদুর রহমান মুকুল: মূল বিষয় হচ্ছে আমাদেরকে আরও উন্নতি করতে হবে। আমাদের শারীরিক ভাষা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, এবং সর্বোপরি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরও উন্নতি করতে হবে। আমার মনে হয় আরও উচুঁ পর্যায়ে যাওয়ার মতো যোগ্যতা আমাদের আম্পায়ারদের রয়েছে। আমরা হয়তো সুযোগের জন্য পারছি না। আশা করছি এটা বেশিদিন থাকবে না। খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ থেকে খুব ভালো-ভালো আম্পায়ার আইসিসি এলিট প্যানেলেও দেখবেন। এটা আমার বিশ্বাস।

প্রশ্ন: বিপিএল আপনাদের প্রস্তুত করতে কতুটুক ভূমিকা রাখছে?
মাসুদুর রহমান মুকুল: এটা শুধু আমাকে না আমাদের সব আম্পায়ারদের অনেক সাহায্য করেছে। ওখানে টপ লেভেলের খেলোয়াড়রা খেলে। ওদের অ্যাটিটিউড, মাঠে ওদের মুভমেন্ট এবং ম্যাচের পরিস্থিতির সাথে অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া যায়। ওরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেভাবে খেলে বিপিএলেও ঠিক একইভাবে খেলে। এটা প্রচণ্ড সাহায্য করে। আর বিপিএল যেহুতে সম্পচার করা হয়, ম্যাচের পর আমি আমাকে রিভিউ করতে পারি। আমি কোন জিনিসটা ভালো করলাম, কোন জিনিসটা খারাপ করলাম। আবার আমার শারীরিক ভাষা কেমন ছিল।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জানুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/শামীম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়