ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

স্পিন এবার উল্টো বাংলাদেশের ‘জুজু’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্পিন এবার উল্টো বাংলাদেশের ‘জুজু’

ইয়াসিন হাসান, মিরপুর থেকে : প্রয়োজন ছিল উইকেটে থিতু হয়ে থাকা। প্রয়োজন ছিল ২২ গজের উইকেটে ধৈর্য্যর চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়া। প্রয়োজন ছিল রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে একেকটি বল, একেকটি ওভার, একেকটি সেশন পার করা। কিন্তু সব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাংলাদেশের কাছে হয়ে থাকল অপ্রয়োজনীয়!

যদি অপ্রয়োজনীয় না হয়ে থাকে, তাহলে এরকম বিভীষিকাময় ব্যাটিং কি কোনো দল ঘরের মাঠে করতে পারে! প্রথম ইনিংসে ১১০, দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩! ব্যক্তিগত কোনো ক্রিকেটারের ব্যাটিং পারফরম্যান্স নয় এটি। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্স। মুমিনুল হক যেখানে চট্টগ্রামে দুই ইনিংসে একাই করেছিলেন ২৮১ রান, সেখানে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২৩৩! ৪৮ রান কম।

দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ আবারো ফিরল নিজেদের পুরোনো দুঃস্বপ্নের অতীতে। ২০০২ সালের ৮ ডিসেম্বর। ঢাকায় মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ করেছিল ২২৬ রান। ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল তিন দিনে। আজ ১৫ বছর পর আবারো ফিরল সেই দুঃস্মৃতি।

চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ পেয়েছিল আত্মবিশ্বাস। ওই আত্মবিশ্বাসে বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টে নিয়েছিল ঝুঁকি। স্পিন উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশ চেয়েছিল সিরিজ জিততে। কিন্তু নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে উল্টো সিরিজ হারল স্বাগতিকরা। আড়াই দিনেই শেষ ঢাকা টেস্ট। ম্যাচের ৪০ উইকেটের ৩২টি স্পিনারদের পকেটে। দুই দলের স্পিনারদের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকল শ্রীলঙ্কাই।



ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরেই শেষ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাও এ ধরনের স্পিন উইকেট তৈরি করে। ওরা স্পিনে দুর্বল বলেই ওই পরিকল্পনা। কিন্তু লঙ্কান এ দলটি স্পিনে দুর্বল নয়। বরং স্পিনে অন্যতম সেরা দল। সেই স্পিন এবার উল্টো বাংলাদেশের জুজু’! লঙ্কানরা বাংলাদেশকে হারাল আড়াই দিনে। বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল তিন দিনে, অস্ট্রেলিয়াকে চার দিনে। সবকিছুতেই ঢাকা টেস্টে উল্টো পথেই হেঁটেছে বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে লঙ্কানরা করে ২২২ রান। জবাবে ১১০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১১২ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিং করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৬ করে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। তাতেই ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বাংলাদেশের। ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্যে বাংলাদেশ ম্যাচ হারল ২১৫ রানের বড় ব্যবধানে।

২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সবশেষ টেস্ট সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর ঘরের মাঠে টানা চারটি টেস্ট সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ। প্রতিটি সাফল্যেই বাংলাদেশের ছায়াসঙ্গী ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সেই হাথুরুসিংহের ছায়া সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের এ ভয়াবহ পরিণতি!



পুরোনো শিষ্যদের হারাতে ছক কষতে ভুল করেননি হাথুরুসিংহে। রঙ্গনা হেরাথ ও দিলরুয়ান পেরেরার সঙ্গে নতুন মুখ আকিলা ধনঞ্জয়া। ডানহাতি এ অফ স্পিনারই ‘জুজু’ হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। অভিষিক্ত এ স্পিনার একাই ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট।  দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার পাঁচটি। হেরাথের পকেটে ৪টি এবং শুরুর ধাক্কাটা আসে দিলরুয়ানের থেকে। উইকেট থেকে স্পিন ও বাউন্স আদায় করে শ্রীলঙ্কান স্পিনাররা যেভাবে উইকেট পেয়েছে তাতে মনে হয়েছে তারা গাছ থেকে পাড়ছেন পাকা টমেটো’! চাইলেই যে পাওয়া যায়।

২ উইকেট হাতে রেখে আজ তৃতীয় দিনের লড়াই শুরু করে শ্রীলঙ্কা। আগের দিনের স্কোরের সাথে ২৬ রান যোগ করতে শেষ ২টি উইকেট হারায় তারা।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট। পেরেরার সোজা বলে এলবিডব্লিউ তামিম।  বড় স্কোর গড়ার অপরিহার্য শর্ত জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে সেটাই করতে চাইলেন ইমরুল-মুমিনুল। কিন্তু দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, বিরতির আগে জিতলে টেস্টে বোনাস পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ!



হেরাথকে তিনবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে শট খেলেছেন ইমরুল। মুমিনুল হালকা হাতে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে দুবার ক্যাচ দেন স্লিপে, বেঁচে যান।  কিন্তু জীবন পাওয়ার পরও সতর্ক হতে পারেননি তারা। ইমরুল হেরাথের বলে এগিয়ে এসে ছক্কা মারলেও পরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। বিরতির পর ফিরে এসে মুমিনুলও ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ওই হেরাথের বলে।

এরপর লিটন কুমার দাসকে ফিরিয়ে আকিলা ধনঞ্জয়া বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত করেন। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ পঞ্চম উইকেটে ২২ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের স্কোরকে তিন অঙ্কে নিয়ে যান। ব্যাটিং ধসের শুরু সেখানেই। প্রথম ইনিংসে ৩ রানে হারায় শেষ ৫ উইকেট। এবার ২৩ রানে শেষ ৬ উইকেট! যার ৪টি নেন ধনঞ্জয়া।

এগিয়ে এসে পাগলাটে শটে স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকুর রহিম হেরাথের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্টাম্পড হন। সাব্বির রহমান ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে ক্যাচ দেন শর্ট লেগে। এরপর আব্দুর রাজ্জাক ও মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হয়ে ধনঞ্জয়াকে দেন পঞ্চম উইকেটের স্বাদ।



তাইজুল ইসলামকে আউট করে শেষ উইকেটটি নেন হেরাথ। আর এ উইকেট নিয়েই হেরাথ টেস্ট ইতিহাসে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হন (৪১৫)। বাঁহাতি স্পিনার পেছনে ফেলেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরামকে (৪১৪)।

বিশাল ব্যবধানে হারের পর ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশ শিবির। উল্টো চিত্র শ্রীলঙ্কা শিবিরে, এক টুকরো সুখি পরিবার লঙ্কান ড্রেসিং রুমে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার ট্রফি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন আকিলা ধনাঞ্জয়া। কিন্তু রোশেন সিলভার নায়কোচিত ইনিংসগুলো কীভাবে এড়িয়ে যায়। প্রথম ইনিংসের ৫৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসের অপরাজিত ৭০ রানে ম্যাচ সেরা রোশন। সিরিজে ১১৭.৫০ গড়ে ২৩৫ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান হয়েছেন সিরিজ সেরাও।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়