ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নলকূপের ‘পকেট গ্যাস’ নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নলকূপের ‘পকেট গ্যাস’ নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : নতুন বাড়ির আঙিনায় নলকূপ (টিউবওয়েল) বসানো হয়েছে। সেই নলকূপে পানির পরিবর্তে উঠছে প্রাকৃতিক গ্যাস। আগুন দিলে জ্বলছে। টানা এক সপ্তাহ এভাবে গ্যাস নির্গত হচ্ছে।

নলকূপে গ্যাস বের হওয়ার খবর রটে গেছে পুরো এলাকায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসুক জনতার হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নলকূপের মালিক যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠী ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের ধারণা, এখানে গ্যাসের খনির সন্ধান মিলতে পারে। এজন্য তিনি বিশেষজ্ঞদের অপেক্ষায় আছেন। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও আশা করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ‘পকেট গ্যাস’। কয়েকদিন পরেই নিভে যাবে, ভয়ের কিছু নেই।

জানতে চাইলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটাকে পকেট গ্যাস বলা হয়। এই গ্যাস প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। সাধারণত ডোবা, খাল ভরাট জায়গায় এই ধরনের গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ পচে পকেট গ্যাস হয়। কিছু দিন পর এটি এমনিতেই নিভে যায়।

তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গার গ্যাস নির্গতের ভিডিও দেখেছি। গ্যাস নির্গতের গতি কম। অল্প দিনে নিভে যাবে। এতে কোনো ঝুঁকি নেই।’’

সরেজমিন নলডাঙ্গা গ্রামের সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নলকূপের সঙ্গে লাগানো একটি চিকন লোহার পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। পাইপের মাথায় আগুনও জ্বলছে। নলকূপ ঘিরে উৎসুক মানুষ। কৌতূহলী মানুষের নানা প্রশ্ন। এদের শত শত প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সোহেল রানা ও তার পরিবার। তারপরও তিনি অপেক্ষায় আছেন, আসল ব্যাপারটা উদঘাটনের। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেশি এক বৃদ্ধা বলছিলেন, যেখানে নলকূপ বসানো হয়েছে, সেখানে এক সময় খাল ছিল। সেটি ভরাট হয়ে গেছে। সেই জমিতে বাড়িঘর তুলেছে সোহেল। সেখানে নলকূপ বসানোর পর গ্যাস বের হচ্ছে। গ্রামের আরও কয়েকজন বললেন, এই এলাকায় গত ২০-২৫ বছরে কোনো নলকূপ বসানো হয়নি।

সোহেল রানা বলেন, রাস্তার পাশে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে নতুন বাড়ি করেছেন। বাড়িতে নলকূপ দরকার। এই জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিস্ত্রি দিয়ে নলকূপ বসানো শেষে পাইপের মুখ বসানোর সময় বুদবুদ করে ধোঁয়ার মতো বের হতে থাকে। বিষয়টি দেখে সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দিলে জ্বলে ওঠে। নলকূপ বসানোর পর একটি পাইপ লাগানো হয়েছে। সেই পাইপ দিয়ে সাত দিন ধরে গ্যাস বের হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নলকূপ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় উৎসুক জনতা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিড় করছে। সবচেয়ে ভিড় থাকে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। আর শত শত মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

সোহেল রানা বলছিলেন, তার ধারণা এখানে গ্যাসের খনি থাকতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে দেখে গেছেন। তারা বলেছেন, উপরের লোকজন আসবে। কিন্তু আর কেউ আসেননি। তিনি চান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসল রহস্যটা বের করা হোক।

নলকূপ স্থাপনের মিস্ত্রি হাফিজুর রহমান বলেন, নলকূপ স্থাপনের জন্য ১৭০ ফুট গভীরে পাইপ বসানো হয়। কাজ শেষে মুখবন্ধ করার সময় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই গ্যাসে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আগুন দিলে জ্বলছে।



রাইজিংবিডি/যশোর/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/বি এম ফারুক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়