ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে আনসারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে আনসারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জনগণের সাংবিধানিক ভোটাধিকার যেন যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আপনাদের প্রতিটি সদস্যকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন আরো সমৃদ্ধ হোক, জনগণ যেন সঠিকভাবে তার সাংবিধানিক অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারে। সে বিষয়টায় আপনাদের যথাযথভাবে নজর দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা সোমবার সকালে গাজিপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার একাডেমিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৮তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। এ সময় তিনি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা আনসার সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মনে রাখবেন, মানুষের নিরাপত্তা, বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং শান্তির পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র শপথ এবং দায়িত্ব। জননিরাপত্তা বিধানের যে পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত আছে তা সঠিকভাবে পালন করবেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাভূত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।’

তিনি এ সময় দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি এই বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনারা সব সময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে জাতীয় সংকটকালে এবং জরুরি মুহূর্তে আপনাদের কর্মতৎপরতায় এ বাহিনী সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিণত করেছে। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা, মহাসড়কে নাশকতা রোধ এবং মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ রুখতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সব শ্রেণিপেশার নাগরিকদের দিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের তাদের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কি করে তা ভালভাবে খোঁজ খবর রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের শাসনকালে দেশ আজ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা দেশের সকল বাহিনীর উন্নয়নে যেমন পদক্ষেপ নিই তেমনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও কাজ করি। ২০০৮ থেকে এই পর্যন্ত কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

এ সময় ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকে তিনি দেশের স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে তার সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান করায় বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে।

তার নির্বাচনী ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে ডিজিটাইজেশন করায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি, আজকে সকলের হাতেই মোবাইল ফোন, ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সার্ভিস পায়। ডিজিটাল সেন্টারগড়ে তুলে গ্রাম পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।



দেশ আজ পরমাণু যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং আগামী মার্চ নাগাদ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ জল, স্থল, আকাশ সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ বিরাজমান।’

নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছি।’

দেশের বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করে উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ের একটি মানুষও আর গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও ক্ষুধায় কাতর হবে না, প্রতিটি মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে, প্রতিটি ছেলে-মেয়ে স্কুলে যাবে-লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মত মানুষ হবে।

শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্কুল-কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, মাধ্যমিক পর্যায়ে সারা দেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণসহ তার সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার সবসময় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে তৎপর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান হতে শুরু করে আপনাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিসিএস কর্মকর্তাদের পদের মানোন্নয়ন সবই আমাদের সরকার করেছে।

তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট-কোম্পানি কমান্ডার, বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার, কোয়ার্টার মাস্টার ও অধঃস্থন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪০০ টাকা ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডারদের যথাযথ ভাতা প্রদানের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আপনাদের সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ৩২ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি সম্পন্ন হবে।

সরকার প্রধান বলেন, আপনাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক দায়িত্বশীলতার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রবর্তন করেছে। এই পদক প্রদান যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে লক্ষে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা এবং ১৫ আগষ্ট নিহত তার পরিবারের সদস্য, জাতীয় চার নেতা, ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা বোনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি আনসার বাহিনীর বীর সৈনিকের ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের কথাও স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয়। তাদের ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে বীরত্ব ও সাহসিকাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি ভিডিপি পদক, বাংলাদেশ আনসার সার্ভিস মেডেল, রাষ্ট্রপতি আনসার সার্ভিস মেডেল, বাংলাদেশ ভিডিপি সার্ভিস মেডেল এবং ভিডিপি সার্ভিস মেডেল বিতরণ করেন। এ সময় ১২৬ জনকে পদকে ভূষিত করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসারের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন এবং একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাইফউদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনিতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে আনসার ও ভিডিপির বিশেষ দরবারেও অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপির পরিবেশনায় মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়