ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১০ মার্চ ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন

মো. মোশাররফ হোসেন এশিয়া প্যাসিফিক ফেডারেশন অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট। ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন অব পিপল ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনেরও তিনি বোর্ড মেম্বার।

 

মো. মোশাররফ হোসেন‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (বিএসএইচআরএম) সভাপতি। এ ছাড়া তিনি আইসিডিডিআরবি’র হেড হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অফিস অব দ্য চিফ অপারেটিং অফিসার পদে দায়িত্বে রয়েছেন। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন। ছবি তুলেছেন রাইজিংবিডির সিনিয়র ফটো সাংবাদিক শাহীন ভূইয়া।

 

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন?

মো. মোশাররফ হোসেন : জি, আল্লাহ ভাল রেখেছেন।

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন,  কতজন নিয়ে শুরু এখন কতজন সদস্য আছে, আপনারা কতদূর এগিয়েছেন?

মো. মোশাররফ হোসেন: দশ জনে যখন এই সংগঠনটা শুরু করি তখন এটা ছিলো একটা হাসির পাত্র। এরপর যাত্রা শুরু ১৩ জন সদস্য নিয়ে। এখন আমদের সদস্য এক হাজার নয়’শ। আমি প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। চার বছর সাধারন সম্পাদক ছিলাম। চার বছরে আমরা প্রায় ৬’শ সদস্য পেয়েছি। তারপর আমি সভাপতি নির্বাচিত হই। দুইবার সভাপতি ছিলাম। তখন ৮’শর মত সদস্য। তারপর আবার সভাপতি হই। আমি আসার পর এশিয়া প্যাসিফিকের সদস্য হলাম। সদস্য হওয়ার পর আমাদের সুবিধা যা হয়েছে তা হল আমরা বেস্ট অব দা ওয়ার্ল্ডের সাথে কানেক্টেড হলাম। সদস্যপদ নিতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সদসপদ পাওয়ার দুই বছর পরে নির্বাচন হল। সেই নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হই এবং বাংলাদেশ থেকে এটাই প্রথম কেউ নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ইতোপূর্বে আর কেউ হয় নি। সভাপতি হওয়ার কারণেই বোর্ড সভা বাংলাদেশে হচেছ। আগামী ১২ মার্চ বোর্ড সভা হবে। ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন অব পিপল ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনের বিশ্বের ১৩ জন সদস্যের একটি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে ১০ জন হল ৫ টা ফেডারেশন থেকে । এছাড়া বাইরের তিনজন রয়েছে। সেখোনেও আমি বোর্ড মেম্বার হিসেবে আছি। অরাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য এটা বিরাট বড় এচিভমেন্ট।

রাইজিংবিডি: আপনার তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যেতে হয়, এর ব্যয় কি সংগঠন বহন করে?

মো. মোশাররফ হোসেন: সংগঠনকে এক টাকাও চার্জ করি না। সব টাকাই নিজের থেকে খরচ করি। যেখানে যাওয়া লাগে, নিজস্ব খরচেই যাই। আমি একটা উদাহরণ হতে চাই, ভলান্টিয়ার মানে ভলান্টিয়ারই।

রাইজিংবিডি: এটা কেন করেন? সংগঠনের খরচে তো যেতে পারেন।

মো. মোশাররফ হোসেন: এটা করি এই জন্য, আমি মনে করি এটা আমার একটা কন্ট্রিবিউশন  টু দ্য এইচআর কমিউনিকেশন। বিএসএইচআরএম আসলে ‘ইজ ভেরি ক্লোজড টু মাই হার্ট।’ যে গড়ে তার কিন্তু অনেক মায়া দয়া থাকে। কেউ যদি কিছু না করে তাহলে বাংলাদেশে ভাল কিছু কোনদিন হবে না। সবাই যার যার পকেট ভরলো, যার যার স্বার্থ দেখলো- এটা তো আসলে হয় না।

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশ মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে হলে কী করা দরকার?

মো. মোশাররফ হোসেন: বাংলাদেশের মানবসম্পদ ছাড়া আর তো কোন সম্পদ ওই ভাবে নাই। গ্যাস আছে আবার শুনি শেষ হয়ে যাচ্ছে, তেল আছে শুনি কিন্তু আমরা সন্ধান করতে পারছি না। জমি আমাদের যা আছে বাড়ানোর স্কোপ নেই। লিমিটেশন্স, তো সেই জায়গায় কিন্তু আমাদের বিরাট বড় ব্লেসিং, উই হ্যাভ হিউম্যান রিসোর্সেস। আমি মনে করি বাংলাদেশকে যদি মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে দরকার দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা। এটা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে একদম উন্নত দেশে নিয়ে যেতে পারবে। এখন আমি মনে করি এটাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিএসএইচআরএম- এর মত ছোট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের জন্য সম্পূর্ণ কিছু করা সম্ভব নয়। এখানে আমাদের অবশ্যই সবার সহযোগিতা চাই। সরকারি বেসরকারি যত প্রতিষ্ঠান আছে, যত মানুষ আছেন সবার সহযোগিতা দরকার। তাছাড়া কিছু হবে না।

রাইজিংবিডি: আপনি যে নিজে এতো কষ্ট করেন এতো টাকা খরচ করেন, এর ফলাফল কেমন পেয়েছেন।

মো. মোশাররফ হোসেন: পৃথিবীতে কোন কিছু বৃথা যায় না যদি ভাল কিছু করেন। অনেক সময় দিয়ে, অনেক শ্রম দিয়েছি, অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছি। ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বার্ষিক আমার খরচ হয়। আমার জন্য, আমার দেশের জন্য রিটার্ন কিন্তু অনেক হাই। এই জন্য উদ্দেশ্য মহৎ থাকতে হবে এবং সবার কাজ করতে হবে।

রাইজিংবিডি : মানুষগুলির ডেভেলপমেন্ট করতে গেলে কি ভাবে করতে হবে?

মো. মোশাররফ হোসেন: এখানে ধরেন আমাদের এডুকেশন সিস্টেমটার মধ্যে কাজ করতে হবে। যে পারবে না, এইট পাস করার পর তাকে সরিয়ে ভোকেশনালে নিয়ে যাওয়া বা এসএসসি থেকে সরিয়ে ভোকেশনালে বা পলিটেকনিকে নিয়ে যাওয়া। আমাদের ওয়ার্কফোর্সটা ডায়ভার্স করতে হবে। সবাই এমএ পাস ওয়ার্কফোর্স, সব বিবিএ হলে হবে না। আমার সব ধরনের দক্ষ লোক দরকার। আমার কাজ হবে যোগ্য করে গড়ে তোলা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব আছে, আমাদের সংগঠনগুলোর দায়িত্ব আছে। আমার অর্গানাইজেশনে একজন লোক নিয়োগ করলাম কিন্তু তাকে আমি ডেভেলপ করলাম না, তাহলে তো আমি তাকে দিয়ে ভাল কাজ করাতে পারবো নরা। এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব আছে।

রাইজিংবিডি: সংগঠন করার পর সরকারিভাবে কী ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন?

মো. মোশাররফ হোসেন: আমাদের তো ‍উদ্বোধনই করলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। তবে সরকারের কোন পৃষ্ঠপোষকতা পাই নি। আমরা ট্রেনিং করিয়ে বা মেম্বারশিপ থেকে যা পাই তাতে সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স ঠিকমতই দেই। কোন সুবিধা পাই নি। কোন জায়গা, অফিস  বা কোন অনুদান- বরাদ্দ কিছুই পাই নি।

রাইজিংবিডি: আপনি তো অনেক রাষ্ট্র ঘুরেছেন, আমরা সময় সম্পর্কে আসলে কতটা সচেতন, বাইরের রাষ্ট্রের সাথে আমাদের তফাত কতটুকু?

মো. মোশাররফ হোসেন: আমরা সময় সম্পর্কে মোটেও সচেতন না। কেউ থাকুক আর না থাকুক প্রোগাম সময় মত শুরু হবে। আমাদের দেশে প্রোগামে এই যে মাননীয় বলতে বলতে হয়রান হয়ে যাওয়ার অভ্যাসটাও আমাদের ছাড়তে হবে। মঞ্চে বসে থাকাদের নাম বলতে বলতে, মাননীয় বলতে বলতেই ১০ মিনিট চলে যাবে।

রাইজিংবিডি: আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্য কি?

মো. মোশাররফ হোসেন : এশিয়া-প্যাসিফিকের মধ্যে যারা সফল সেই লোকগুলি থাকবে। আমরা তাদের কথা শুনবো । আমার মনে হয়, আমার তো একটা প্ল্যাটফরম লাগবে। এই প্ল্যাটফর্ম যদি না থাকে তাহলে আমরা তো কিছু করতে পারবো না। এই কনফারেন্সটাকে আমরা একটা প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করবো।

রাইজিংবিডি: এইচআর নিয়ে সরকার কাজ করতে চাইলে আপনারা কী ধরনের সহযোগিতা দিতে পারবেন ?

মো. মোশাররফ হোসেন: এইচআর  নিয়ে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নেই। সরকার যদি এইচ আর নিয়ে কিছু করতে চায় উন্নত বিশ্বের মত, আমাদের সংগঠন থেকে ফ্রি সার্ভিস দেবো। আমাদের কোন পদও দিতে হবে না, পয়সাও দিতে হবে না।

রাইজিংবিডি: মানবসম্পদ উন্নয়নে কোন কোন মন্ত্রণালয়ের একসাথে কাজ করা দরকার বলে আপনি মনে করেন।

মো. মোশাররফ হোসেন: আমাদের চারটা মন্ত্রণালয় সবাই এইচআরে কাজ করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, তারা বদলি গুলো করে। লেবার মিনিস্ট্রি, বিভিন্ন লেবার প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে, বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয় বিদেশে শ্রমিক পাঠায় আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানুষ গড়ে। এই চারটা মন্ত্রণালয়কে একসাথে করে আমার মনে হয় যে একটা কনসল্যুটেড একটা কিছু করা দরকার। কারণ আপনার তো আর কিছুই নেই। মানুষগুলো দিয়েই তো উন্নত হবেন। সুযোগ আছে চিন্তা করার। তিন চারটা জায়গা যদি বিচ্ছিন্নভাবে থাকে তাহলে কাজ হয় না। এরমধ্যে পিএসসি একটা আছে। এটা আবার স্বাধীন। তাহলে ৫টা হল।

রাইজিংবিডি:  আপনার প্রস্তাবনা কি থাকবে?

মো. মোশাররফ হোসেন:  সরকারের উচিত হবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমরা আছি, পেশাজীবী সংগঠন মিলিয়ে একটা আলেচনার দ্বার খোলা। বলছি না যে, এখনি করে ফেলেন, কীভাবে করা যায় সবাইকে নিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার। একটা সময় জনসংখ্যাকে আমরা বোঝা বলেছি। এখন আর মুখে বোঝা বলছি না কিন্তু বোঝ তো রেখে দিয়েছি। আমাদের যতগুলো এমবাসি আছে তাদের যদি টার্গেট দিয়ে দেওয়া হয় যে, তুমি যে দেশে আছো সেই দেশের একটা অ্যাসেসমেন্ট করে রিপোর্ট পাঠাও। ওই দেশে বাংলাদেশের কোন ধরনের লোক গিয়ে কাজ করতে পারে, সেইভাবে এখান থেকে ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করে লোক পাঠাতে পারি। আমাদের একটা মাইল স্টোন থাকতে হবে, আমরা কবে করবো।

রাইজিংবিডি: আপনাদের কোন টার্গেট আছে কিনা?

মো. মোশাররফ হোসেন: ২০২১ সাল তো সরকারের একটা মাইলফলক । মানবসম্পদ উন্নয়নে একটা ফ্রেমওয়ার্ক এবং নীতিমালা হোক এবং সরকার তা একা না করে আমাদেরও যেন যুক্ত করে।

রাইজিংবিডি: রাইজিংবিডিকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

মো. মোশাররফ হোসেন: আপনাদেরও ধন্যবাদ যে, ধৈয্য সহকারে আমার কথা শুনেছেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মার্চ ২০১৬/আরিফ সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়