ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এক পরিবারে তিন ব্যারিস্টার

ব্যারিস্টার ভাইবোনের অসমাপ্ত গল্প

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৪, ৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যারিস্টার ভাইবোনের অসমাপ্ত গল্প

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও রেশাদ ইমাম

মেহেদী হাসান ডালিম : ব্যারিস্টার আখতার ইমাম শুধু বাবাই নন, আইন পেশায় দুই সন্তানের সিনিয়রও তিনি। বাবা সিনিয়র হওয়ায় সকাল থেকে রাত অবধি চলে তিনজনের মধ্যে কেস-কাচারি আর আইন নিয়ে আলোচনা।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও রেশাদ ইমামের ভাষায়, বাবা আর বাবা নেই। বাবা এখন স্যার হয়ে গেছেন। কেবল কোর্টে নয় বাসায় শুধু আইন বিষয়েই কথা হয়। লাঞ্চ ডিনার সবসময়ই। বাবা সিনিয়র হওয়াই কোর্ট বাসা একদম এক হয়ে গেছে। তবে এর মধ্যেও বাবা কাকে বেশি ভালবাসেন, কে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছেন এ নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া খুনসুঁটি হয় সবসময়ই। বিশেষ করে বছরে একবার যখন অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং পরিবর্তন হয় তখন দুই ভাইবোনের মধ্যে এক দফা মৃদু তর্ক বির্তক হয়ে যায়।

আবার বাবার মতই আইনজীবী দুই সন্তানই বিয়ে করেছেন ভিন্ন পেশার মানুষকে। মেয়ে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ভালবেসে বিয়ে করেছেন অক্সফোর্ড পড়ুয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজকে। ছেলে ব্যারিস্টার রেশাদ ইমামও পছন্দ করে বিয়ে করেছেন ব্যবসা শাস্ত্রে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া শেখ পরিবারের মেয়ে ফারিয়াকে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভাই শেখ মারুফের মেয়ে।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই প্রথম একসঙ্গে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন তারা। আগে গত ২৩ জুলাই শিরোনামে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। আর রোববার শেষ পর্ব প্রকাশিত হল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।

রাইজিংবিডি : ইংল্যান্ডে কাটানো দিনগুলো …
রাশনা ইমাম : বাকিংহামে যেখানে এলএলবি করার সময়ে পড়ালেখার এত প্রেসারে ছিলাম যে, অন্য কিছু করার সময় ছিল না। মুটিং-ডিবেটিং, পড়াশুনা- এগুলোতে খুব অ্যাকটিভ ছিলাম।

লন্ডনে এক বছর যখন ‘বার অ্যাট ল’ করছিলাম তখন কিছুটা ট্র্যাভেল করার সুযোগ হয়েছে। লন্ডনের বাইরে গিয়েছি বিভিন্ন জায়গায়। লিজ, ব্রাইটেন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টারে ঘোরার সুযোগ হয়েছে। ইংল্যান্ডে থাকা অবস্থায় অনেকের সাথেই ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল, যা এখনও টিকে আছে।
 

স্বামীর সঙ্গে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম


রেশাদ ইমাম : ইংল্যান্ডে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিভিন্ন দেশের লিগ্যাল সিস্টেম, কোর্ট এগুলো সব দেখতে পেয়েছি। যারা আমার বন্ধু ছিল তারা সবাই নিজ নিজ দেশে খুব ভাল করছে।

রাইজিংবিডি : ভালবেসে যাকে বিয়ে …
রাশনা ইমাম : ২০০৬ সালের নভেম্বরে অক্সফোর্ডে পড়া অবস্থায় ববির সঙ্গে পরিচয় হয়। ও তখন অক্সফোর্ডে এমবিএ করছিল। এরপর আমরা একে অপরকে পছন্দ করে ফেলি। ওকে পছন্দ করার অনেক কারণ ছিল। ওর সঙ্গে আমার ইনটেলেকচুয়াল ম্যাচ হয়েছিল। পছন্দের আরেকটা কারণ ছিল, সে  অত্যন্ত ভদ্র, মডার্ন ও লিবারেল। এছাড়া দুজনের ভিশন একই ধরণের ছিল। পরিচয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের বিয়ে হয়। এটা অবশ্যই লাভ ম্যারেজ। বর্তমানে আমাদের দুটো মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর। ছোট মেয়ের বয়স আড়াই বছর। দুজনই সানবিমে পড়ছে।

রেশাদ ইমাম : আমারও লাভ ম্যারেজ। আমার ওয়াইফ পলিটিক্যাল ফ্যামিলির। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফের মেয়ে শেখ ফারিয়া রহমান। ও ইংল্যান্ডে বিবিএ পড়তো, তখন থেকেই ওর কথা জানতাম।

তবে ২০০৯ সালের শেষের দিকে ঢাকায় আমাদের পরিচয় হয়। তারপর আমরা দুজন দুজনকে কাছে থেকে চিনলাম, বুঝলাম। ২০১০ সালের শেষদিকে আমার বিয়ে হয়। ফারিয়া নিজে বিউটি পার্লার চালাচ্ছেন বনানীতে। যেটার নাম ‘মনিকাজ’। ও আমায় প্রফেশনাল কাজে অনেক সাপোর্ট করে। আমাদের এক ছেলে, বয়স সাড়ে ৩ বছর। নাম নিভজাদ ইমাম।

রাইজিংবিডি : দুই ভাইবোনের খুনসুঁটি …
রাশনা ইমাম-রেশাদ ইমাম: আমরা দুই ভাইবোন ৪ বছরের ছোট বড়। শৈশব-কৈশোর  তো  দুজনের ঝগড়া করতে করতেই কেটেছে। এমনকি এখনও তেমনই ঝগড়া হয়। এখন যেটা হয়েছে, সবাই যখন ডিনারে টেবিলে বসি তখন দুজনের জায়গায় তিনজন তর্ক করতে থাকি। লেগেই থাকে কেস ও কাচারি নিয়ে আলোচনা। আসলে এটা ভাল। কেননা, বিতর্ক না থাকলে নতুন জিনিস বের হবে কীভাবে।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমামের হাতে ঈদ সংখ্যা তুলে দিচ্ছেন রাইজিংবিডির প্রতিবেদক


তিন জনের বিতর্কের মধ্য দিয়ে মূল জিনিসটা বের হয়ে আসে। একজন পড়েছি অক্সফোর্ডে, অন্যজন কেমব্রিজে। তাই দুই ভাইবোনের বিতর্ক হতেই পারে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং বছরে একবার পরিবর্তন হয়। এটা নিয়ে বছরে আমাদেরও মৃদু বিতর্ক হয়। কে টপে তা নিয়ে। এক বছর অক্সফোর্ড উপরে থাকলে পরের বছর ডিঙিয়ে কেমব্রিজ উপরে চলে যায়। 

রাইজিংবিডি : বাবার যে কথাগুলো প্রেরণা যোগায় …
রাশনা ইমাম : বাবার কাছে ছেলে মেয়ের কোন পার্থক্য ছিল না। ওনার কথা ছিল যার মেরিট আছে তাকে আমি অপরচুনিটি দেব। বাবা সবসময় ফাইন্যান্সিয়ালি ইনডিপেনন্ডেট হওয়ার ওপর জোড় দিতেন। বাবা বলতেন, তুমি ছেলে হও আর মেয়ে হও কাজ করতে হবে, কামাই করতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।

রাইজিংবিডি : কোর্টে প্রথম দিনের শুনানির স্মৃতি …
রাশনা ইমাম : প্রথম দিনের স্মৃতি বেশ ভাল ছিল। প্রথম দিন হওয়ায় অনেক প্রিপারেশন নিয়ে গিয়েছিলাম। আবেদনটা মঞ্জুর হয়। মামলা জিতে যায়। প্রথম দিন শুনানির জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। ভাল প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। যা যা প্রশ্ন করা হয়েছিলো, কোর্টকে মোটামুটি স্যাটিসফাই করতে পেরেছিলাম। প্রথম দিনটা বলতে পারেন মোটিভেটিং ছিল।

রেশাদ ইমাম : আমার প্রথম দিনে খুব জটিল একটা কেস ছিল। আমার সিনিয়র আমাকে বলেছিলেন তুমি এটাতে মুভ করো। আমার মনে আছে জজ সাহেব অনেক ধরণের প্রশ্ন করেছিলেন। আমার প্রস্তুতি ভাল ছিল বলে সবগুলোর উত্তর দিতে পেরেছিলাম। এসময় আমার সিনিয়র (বাবা) পাশে ছিলেন না। একটা সুইমিং পুলের মাঝখানে গিয়ে বাচ্চাকে ছেড়ে দিলে যে রকম হয়, সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ওই একটা মামলা দিয়েই অনেক কিছু শিখেছি। প্রথম মামলায় আমার পক্ষেই রায় পেয়েছিলাম।

রাইজিংবিডি :  আইন পেশা যে কারণে শ্রেষ্ঠ মনে হয় …
রাশনা ইমাম : আমি ইনটেলেকচ্যুয়াল চ্যালেঞ্জিং কিছু চাচ্ছিলাম, আমি বিজনেস রিলেটেড কিছু চাচ্ছিলাম না। বিবিএ-এমবিএ এগুলো আপনাকে এক ধরণের ট্রেনিং দেয় কিন্তু এটাকে ইনটেলেকচ্যুয়াল চ্যালেঞ্জিং আমার মনে হয় না। যে জন্য আমি চাকরিতে যাইনি, প্র্যাকটিসে আছি। সেটা হচ্ছে, আই ওয়ান্ট টু সি, ল মুভিং ফর ওয়ার্ক। জাজরা কোর্টে আইন ইন্টারপ্রিট করছেন, আইনের ইন্টারপ্রিটেশনে কিন্তু এক ধরণের নতুন আইন তৈরি হচ্ছে। আমার সামনে আইন হচ্ছে, আইন উন্নত হচ্ছে, আইন এগিয়ে যাচ্ছে- এটা খুব ইমপর্টেন্ট। এই জিনিসটাকে আমার কাছে ডায়নামিক মনে হয়। জাজদের পর্যবেক্ষণ প্রতিনিয়ত আইনে পরিণত হচ্ছে। এটা খুবই স্যাটিসফায়িং এক্সপেরিয়েন্স।


স্ত্রীর সঙ্গে ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম


রেশাদ ইমাম : মনে হয় এর থেকে কমপিটেটিভ পেশা  আর নেই। এই পেশায় কিন্তু প্রতিদিনই যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হচ্ছে। আমার মনে হয়, এর চেয়ে বেশি পড়াশুনা আর কোন পেশায় করতে হয় না। যারা শর্টকাট খোঁজেন তাদের কথা আলাদা।

রাইজিংবিডি : সুযোগ হাতছাড়া করে যে কারণে দেশে …
রাশনা ইমাম : ব্রেকার এন্ড মেকাঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল ফার্ম। এখানে একবার চাকরি পেলে কেউ সাধারণত ছেড়ে চলে আসেন না। ওখানে ২০০৮ সালে চাকরি পাই, কাজ করে খুব মজা পেয়েছি। অনেক কিছু শেখার অপরচুনিটি হয়েছে। অভিজ্ঞতা হয়েছে ভাল। কিন্তু দিনের শেষে  স্যাটিসফেকশনটা ছিল না। মূলত দুটো কারণে দেশে এসেছি। প্রথমত, বাবার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছাটা প্রবল ছিল।

দিতীয়ত হচ্ছে, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করার একটা ইচ্ছা।

আমি মনে করি বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে ফেরত আসা উচিত। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে ইমপ্রুভমেন্টের স্কোপ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এত বেশি যে, বাইরে দক্ষতা অর্জন করে এখানে এসে সেটা খাটানো উচিত। যাতে এখানে কিছু উন্নতি হয়। মানুষের উপকার হয়। আর একটা বিষয় আমি বলবো, যেটা পারসোনালি আমাকে মোটিভেট করেছে সেটা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে আইন পেশায় খুব সীমিত সংখ্যক ও হাতে গোনা কয়েকজন মহিলা ল’ইয়ার আছেন। আইন পেশায় টিকে থাকাটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।

রাইজিংবিডি : বাবা যখন সিনিয়র …।
রাশনা ইমাম-রেশাদ ইমাম : ব্যারিস্টার আখতার ইমাম সাহেব আমাদের বাবা হলেও চেম্বার এবং কোর্টে উনি আমাদের বাবা না। সত্যি কথা বলতে কি, যখন আমরা কোর্টে ঢুকে যাই তখন আর উনি বাবা থাকেন না। আমাদের জন্য তখন উনি সিনিয়র হয়ে যান। আসলে এখন বাসায়ও উনি আমাদের বাবা না। কোর্টে চেম্বারে সিনিয়র হিসেবে দেখতে দেখতে এখন ঘরেও বাবার সঙ্গে সিনিয়র এর মতই আচরণ করি। তিনি আমাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করেন। আমাদের কাছে তার এক্সপেকটেশনটা অনেক বেশি থাকে।

কোর্টে আইন বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে বাবার সঙ্গে কথা হয় না। বাসায়ও শুধু আইন বিষয়েই কথা হয়। লাঞ্চে, ডিনারে সবসময়ই। বাবা আর বাবা নেই, এখন সিনিয়র হয়ে গেছেন। বাবা সিনিয়র হওয়ায় কোর্ট ও বাসা একদম এক হয়ে গেছে। একদিকে এটা ভালই হয়েছে। না হলে হয়তো এতদূর আসতে পারতাম না।

রাইজিংবিডি : কেস ও কাচারির ব্যস্ততার মাঝে পরিবারকে সময় দেন যেভাবে …
রাশনা ইমাম : আমাদের সংসারে আমরা দুইজনই মিলেমিশে কাজ করি। এইজন্য সংসারে প্রবলেম হয় না। আমি যেটাতে বিশ্বাস করি বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করার জন্য কোয়ালিটি টাইম দরকার, কোয়ানটিটি টাইম নট নেসেসারি। কারণ,  দেখে থাকবেন যে, গৃহিনী বাইরে কোন কাজ করছেন না কিন্তু কোয়ালিটি টাইমও বাচ্চাকে দিচ্ছেন না। আমি সারাদিন কাজ করে যদি বাসায় কয়েক ঘণ্টাও সময় দিতে পারি আর সেটা যদি কোয়ালিটি টাইম হয়, যেখানে তাদের সঙ্গে আমার একটা ওপেন এন্ড অনেস্ট কমিউনিকেশন হয় তাহলে আমার চিন্তা করার কিছু নেই।

রাইজিংবিডি : আইন পেশা থেকে নারীদের ঝরে যাওয়ার কারণ …
রাশনা ইমাম : আইন পেশায় এসে অনেক মেয়ে কয়েক বছর পার করার পর এই পেশা ছেড়ে চাকরিতে চলে যাচ্ছেন। এটা মূলত ফ্যামিলির প্রেসারের কারণে। চাকরি থেকেও তো সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টার পর বাসায় ফিরছেন। কিন্তু আমার ক্লায়েন্ট আসে সব সময়। মেয়েরা এই পেশায় এসে বেশি দিন টিকতে পারছেন না। মেয়েদের দোষ দিলে চলবে না। এটাকে সামাজিক ব্যর্থতা বলা যায়। ওই রকম পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমার জানা অনেক মেধাবী মেয়েকে এই পেশা ছেড়ে যেতে হয়েছে শুধু ফ্যামিলির প্রেসারের কারণে।

আমি মনে করি মেয়েদের আইন পেশায় টিকিয়ে রাখতে হলে সংসারে ও কর্মক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে। চেম্বারগুলোতে চাইল্ড ডে কেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি দিলেই হবে না, পিতৃত্বকালীন ছুটিরও ব্যবস্থা করতে হবে; যেটা কানাডাতে আছে। স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই সংসারে কাজ করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, মেয়েদেরকেও রিস্ক নেওয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে।

ব্যারিস্টার  রেশাদ ইমামের হাতে ঈদ সংখ্যা তুলে দিচ্ছেন রাইজিংবিডির প্রতিবেদক


রাইজিংবিডি : অবসর সময় যেভাবে কাটে …
রাশনা ইমাম : অবসর সময় বাচ্চাদের নিয়ে কাটে। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখি কিন্তু মিনিংফুল সিনেমা দেখি। কমার্শিয়াল সিনেমা দেখা হয় না। বাচ্চাদের মুভিগুলো দেখা হয় বাচ্চাদের সাঙ্গে নিয়ে। বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে গল্পের বই পড়া হয়, ওরা খুব মজা পায় আমিও মজা পাই। লেখালেখি করতে একটু পছন্দ করি। যখন সময় পাই নিউজপেপারে আইন নিয়ে লেখার চেষ্টা করি।

রেশাদ ইমাম : সময়টা কোথায় আমাদের বলেন? সারা সপ্তাহ রাত ১২টা পর্যন্ত চেম্বারে থাকি। ৫টা পর্যন্ত কোর্টে থাকি। ছুটির দিনে ছেলেকে একটু সময় দেওয়ার চেষ্টা করি।

রাইজিংবিডি : যা করতে চান ভবিষ্যতে …
রাশনা ইমাম-রেশাদ ইমাম: আইন পেশাতেই লেগে থাকবো।  পাবলিক ইন্টারেস্টে মামলা আরো বেশি নেওয়ার কথা ভাবছি। এই যাত্রাটা আমাদের শুরু হয়েছে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিস বিষয়ে রিট দিয়ে। আমাদের বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখনও ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিস বলতে কিছু নেই। ইমারজেন্সি ট্রিটমেন্ট না পেয়ে রোড এক্সিডেন্টের ভিকটিমরা মারা যাচ্ছে। তাই সেটা দিয়েই শুরু করেছি যাত্রা। আমার মূল টার্গেট হচ্ছে যেসব আইন অনেক পুরনো, সেগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করা। একটা উদাহরণ দেই, কিডনি ট্রান্সফার আইন। সেটা কিন্তু বড় ধরণের সমস্যা তৈরি করছে।

রাইজিংবিডি : আইন পেশায় নবাগতদের জন্য পরামর্শ …
রাশনা ইমাম–রেশাদ ইমাম: যারা শর্টকাট পথ খোঁজেন তাদের আইন পেশায় আসা উচিত নয়। এ পেশায় শর্টকাটের কোন পথ নেই। এ পেশায় থাকতে হলে লেগে থাকতে হবে। প্রথমে আমার কোন টাকা পয়সা হবে না, ওই রকম ধারণা নিয়েই এই পেশায় ঢুকতে হবে। পারিবারিকভাবে যদি ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাকআপ না থাকে তাহলে এই পেশায় টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে প্রচুর কষ্ট করতে হবে। সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। আমাদের কোর্টের একটা ডেকোরাম আছে সেটা মেইনটেইন করে চলতে হবে। জাজদের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি মেইনটেইন করে চলতে হবে।

রাইজিংবিডি : নিজেদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে যা ভাবেন …
রাশনা ইমাম-রেশাদ ইমাম : যা আশা করেছিলাম, এ পর্যায়ে এসে তার সব পেয়েছি। পারিবারিক জীবনে ও পেশাগত জীবনে এখন যে পর্যায়ে আছি- এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। সুতরাং ঠিক পথেই যাচ্ছি।

রাইজিংবিডি : সময় দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
রাশনা ইমাম-রেশাদ ইমাম : আপনাকে এবং রাইজিংবিডির পাঠকদেরকেও ধন্যবাদ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ আগস্ট ২০১৭/মেহেদী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়