ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জবাবদিহির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রতিশ্রুতি তাবিথের

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জবাবদিহির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত  স্থাপনের প্রতিশ্রুতি তাবিথের

তাবিথ আউয়াল

প্রায় তিন বছর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে কারচুপির অভিযোগ এনে মাঝপথে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তাবিথ আউয়াল। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচন করা তাবিথ বিএনপির সমর্থণ পেয়েছিলেন। এবার সরাসরি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির কাণ্ডারি হয়ে আবারো নির্বাচনের মাঠে নামার অপেক্ষায় তিনি।

স্বপ্ন দেখেন ঢাকাকে তিলোত্তমা আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার। একই সঙ্গে নাগরিকরা যাতে মেয়রের কাছে সরাসরি জবাবদিহিতা চাইতে পারে এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারে, সেক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত করতে চান তরুণ এই বিএনপি নেতা।

সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজের কার্যালয়ে রাইজিংবিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মূল্যায়ণ, নির্বাচিত হলে ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস কে রেজা পারভেজ

রাইজিংবিডি : তিন বছর আগেও ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়েছিলেন। আবারও একই নির্বাচনে প্রার্থী। সময়, প্রেক্ষিত ও পরিস্থিতিকে কিভাবে মুল্যায়ণ করছেন।

তাবিথ আউয়াল : সেই ধরনের কোনো পার্থক্য দেখছি না। আগের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এটি একটি উপ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি বা ইশতেহার ছিলো সেগুলোই নতুন করে বাস্তবায়নের কথা থাকবে।

অবশ্যই ঢাকা নগরী একটু বদলে গেছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৮টি ওয়ার্ড অন্তর্ভূক্ত হয়েছে যা আগের নির্বাচনে ছিলো না। তার মানে এলাকা বেড়েছে। ভোটার বেড়েছে। এখানে একটা চ্যালেঞ্জ আসবে। আর মানুষের মন-মানসিকতা সব সময় পরিবর্তন হয়। সেগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। আগের নির্বাচনে পরোক্ষভাবে সমর্থন এসেছে। এবার সরাসরি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। এটা আলাদা মাত্রা যোগ করবে।

রাইজিংবিডি : ২০১৫ সালে যখন ডিএনসিসিতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তখন দলের কোনো পদে ছিলেন না। এবার আপনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। দায়িত্বের বোঝা বাড়তি চাপ তৈরি করছে, না কী উৎসাহ যোগাচ্ছে ?

তাবিথ আউয়াল : গতবারও আমি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তবে সেটি পরোক্ষভাবে সমর্থন ছিলো। এবারও করতে চাচ্ছি। আর দলের পদ পাওয়ার বিষয়টি একটি প্রক্রিয়া। দায়িত্বটা কিন্তু একই। দলের জন্য কাজ করা, ওই দলের আদর্শটাকে ধারন করে জনগণের সমর্থন আদায় করে নেওয়া। তবে আসল দায়িত্ব হচ্ছে মেয়র পদে দায়িত্ব নেয়ার পর।

রাইজিংবিডি : দলের মধ্যে অভিযোগ আছে আপনার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে।

তাবিথ আউয়াল : এই অভিযোগটি সঠিক নয়। দলের ভেতরে বাইরে কোথাও আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নেই যে, তৃণমূল থেকে আমি বিচ্ছিন্ন বা তৃণমূলের সঙ্গে যোগযোগ কমে গেছে।

রাইজিংবিডি : নির্বাচনের আগে বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করছেন সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে।

তাবিথ আউয়াল : সার্বিক পরিস্থিতি মুল্যায়ণ করার সময় এখানো আসে নি। কারণ তফসিল মাত্র ঘোষণা হলো। প্রক্রিয়াগুলো আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে। মুলত যেটি শুরু হয় মনোনয়ণপত্র জমা দেয়া থেকে মনোনয়ণপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত। আমি আশাবাদী যে, নতুন নির্বাচন কমিশন নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে তাদের দায়িত্বগুলো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পালন করবে। তাদের কর্মকান্ডে বুঝতে পারবো, তারা লেবেলে প্লেয়িং ফিল্ড করতে পেরেছে কী না।

তিনবছর আগে তারা (নির্বাচন কমিশন) ভোটের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা, নারাণগঞ্জ এবং রংপুরের নির্বাচনে ইসি কিন্তু একটা জায়গায় বদলায় নাই। এটা হচ্ছে কোনো অভিযোগ উনারা আমলেই নিচ্ছেন না। এটা তো হতে পারে না। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করার পর হয়তো কিছু হবে না। কিন্তু অভিযোগ আমলে নেয়া বিধিমালার একটি অংশ, আইনের একটি অংশ, অধিকারের একটি অংশ। ওই জায়গায় আমি আশঙ্কা করছি এবং দেখছি। ইসিকে যে কোনো অভিযোগ আমলে নিতে হবে যদি সেটা আইনের মধ্যে পড়ে।
 

তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে কথা বলছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এস কে রেজা পারভেজ


রাইজিংবিডি : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলে সুশীল সমাজসহ নির্বাচন পর্যবেক্ষনকারী সংস্থাগুলো বলছে। সেক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ব্যাপারেও সবাই আশাবাদী। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

তাবিথ আউয়াল : রংপুর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ঢাকা সিটির তুলনা করা যায় না। ভোটার সংখ্যা থেকে শুরু করে সার্বিক পরিবেশ, কোনোভাবেই মেলানো যাবে না। যদিও জোরালোভাবে বলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে তাহলে ইসিকে তার কাজকর্ম দিয়ে আস্থার জায়গা অর্জন করতে হবে।

রাইজিংবিডি : বিএনপি এরই মধ্যে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন কতটা জরুরী বলে মনে করেন ?

তাবিথ আউয়াল : আমাদের বর্তমান দাবি হচ্ছে, পুরো নির্বাচনই যাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা অবশ্যই দরকার। এখন নির্বাচন কমিশন ওই জায়গাটা কিভাবে মোকাবেলা করবে, সেটা তাদের পরিকল্পনার বিষয়। উনারা যদি মনে করেন সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন তাহলে পরিস্কারভাবে সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আলোচনা করে আস্থার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।

এই মুহূর্তে আমরা দেখছি যে, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই জায়গাটায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে নি। প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পুলিশকে আস্থার জায়গা তৈরি করতে বলেছেন। তার মানে এই যে, পুলিশের ওপর কারো আস্থা নেই। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু তরে দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। 

রাইজিংবিডি : ২০১৫ সালের নির্বাচনে মাঝপথে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারও সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা আছে কী ?

তাবিথ আউয়াল : এর আগের নির্র্বাচনে নির্লজ্জের মতো যে আচরণ হয়েছিলো আশা করি এবার তা করতে দেবে না নির্বাচন কমিশন। গতবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যকে দেখেছি, আবার প্রিজাইডিং অফিসারদের দেখেছি; তারা কি ধরনের অপকর্ম করেছে। আমি মনে করি ওই অপকর্মের ধারাবাহিকতা আর হবে না। তবে এটা বলে রাখছি, আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতি ও কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করছি। ওই ধরনের পরিস্থিতি যাতে তৈরি না করা যায় আমরা সেই বিষয়গুলো আগে থেকেই প্রন্তুতি নিতে চাইছি। নিয়মের মধ্যে থেকে অন্যায় আর অপকর্মের মোকাবেলা করতে চাই।

রাইজিংবিডি : প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বেশ কিছু কাজের জন্য প্রসংশিত হয়েছেন। আপনি নির্বাচিত হলে কোন বিষয় অগ্রাধিকার দিতে চান। আনিসুল হকের রেখে যাওয়া কাজ সমাপ্ত করতে চ্যালেঞ্জটা কেমন হবে বলে মনে করেন।

তাবিথ আউয়াল : তিন বছর আগে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার মধ্যে যেগুলোর উদ্যোগ নেয়া হয় নি, সেগুলো অতি শিগগিরই শুরু করতে চাই। আগামী দুই বছরের মাথায় এটি শেষ করা যাবে বলে প্রত্যাশা করি। আর যে ভালো উদ্যোগগুলো তিনি নিয়েছিলেন সেগুলো কিভাবে আরো ভালোভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় সেটি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রয়াত মেয়রের অনেক কাজের মাধ্যমে যেমন নগরবাসী খুশি হয়েছিলো, আবার কিছু কাজের কারনে নগরবাসী কিন্তু অখুশিও হয়েছিলো। আমি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই কাজ করবো।

রাইজিংবিডি : জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তারা প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান। আপনার ক্ষেত্রেও সেটি কতটা প্রয়োজ্য হতে পারে।

তাবিথ আউয়াল : আমি জনগণের একেবারে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো। সরাসরি তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা হবো। তারা যাতে সরাসরি মেয়রের কাছে জাবাবদিহিতা চাইতে পারে। আরো বেশি যে প্রত্যাশার জায়গা আছে সেটি পুরণ করতে কাজ করতে চাই। নাগরিকরা যাতে তাদের প্রাপ্য অধিকারটা ভোগ করতে পারে সেদিকে আমি বিশেষভাবে নজর দিতে চাই। মোট কথা জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। 

রাইজিংবিডি : আগেরবার ডিএনসিসি নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপনার জন্য প্রচারণায় নেমেছিলেন। এবার এর সম্ভাবনা কতটুক?

তাবিথ আউয়াল : দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এরই মধ্যে এটি একটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে। ধানের শীষ প্রতীক আমাকে অনেক শক্তিশালী করেছে। বিএনপি নেত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। সেক্ষেত্রে তিনি যখন আমার জন্য প্রচারণায় নামবেন তা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। উনার প্রচারণায় নামতে কোনো বাধা নেই। তবে এখনই সবকিছু বলা যাচ্ছে না।

রাইজিংবিডি : বিএনপি নেতা হিসেবে প্রথম নির্বাচন করছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য কিছু বলার আছে?

তাবিথ আউয়াল : আমি শুধু বলতে চাই, এই নির্বাচনকে শুধু নির্বাচন হিসেবে দেখলে হবে না। এরপর আরো কয়েকটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন রয়েছে। বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। অর্থাৎ পুরো বছরটিই নির্বাচনের বছর। সুতরাং ঐক্যের বিকল্প নেই। একতার শক্তি দিয়ে জনমত তৈরি করতে হবে। এই নির্বাচন আমাদের শুরু, জাতীয় নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে এটি শেষ করতে হবে।

রাইজিংবিডি : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তাবিথ : রাইজিংবিডির পাঠকদেরকেও আমার শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জানুয়ারি ২০১৮/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়