ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আদালতের প্রতি আস্থা কলঙ্কিত করতে দেওয়া যায় না’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ২২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আদালতের প্রতি আস্থা কলঙ্কিত করতে দেওয়া যায় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা কোনোভাবেই কলঙ্কিত করতে দেওয়া যায় না।’ 

বুধবার এক রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো আকতারুজ্জামান।

বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে জামিন জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৬ আসামিকে কারামুক্তির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বুধবার বেঞ্চ সহকারীসহ পাঁচ জনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এ সময় উক্ত কথা বলেন বিচারক।

দণ্ডবিধির পৃথক ৬টি ধারায় আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

রায়ে ১৪ বছর কারাদণ্ডের মধ্যে দণ্ডবিধির ৪৬৬ ধারায় ৭ বছর এবং ৪৭১ ধারায় ৭ বছরের এই কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে দুইটি ধারার সাজা একই সঙ্গে চলবে বলে উল্লেখ থাকায় আসামিদের ৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করলেই চলবে বলে জানিয়েছেন এ মামলার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

এদিকে রায়ে প্রত্যেক আসামিকে প্রত্যেক ধারার জন্য ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যা অনাদায়ে তাদের আরো এক মাস করে ২ মাসের কারাদণ্ডের  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বরখাস্তকৃত বেঞ্চ সহকারী মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া, মহানগর দায়রা জজ আদালতের নেজারত বিভাগের কর্মচারী শেখ মো. নাঈম, উমেদার মো. আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. ইসমাইল।

রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামি মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও শেখ মো. নাঈম জেনে-শুনে ও বুঝে পরিকল্পিতভাবে অপর তিনজন আসামির সঙ্গে যোগসাজস করে বৈআইনিভাবে ৭৬টি মামলায় ১০৬ জনের জামিনের ব্যবস্থা করেন। আসামিরা কোনোক্ষেত্রে মামলার নথি গায়েব করেছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালতে নথি উপস্থাপন করেননি। আসামি মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও শেখ মো. নাঈম সরকারি কর্মচারী। আর অপর তিন আসামি আদালতে উমেদার হিসাবে কাজ করেছেন। ওই দুই সরকারি কর্মচারী নিজ থেকে অপর তিন উমেদারের (আসামি) বেতন দিতেন। আসামি মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও শেখ মো. নাঈমকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন না করা হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎসাহিত হবে এবং পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

আদালত মনে করেন, শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আদালতের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা কোনো ক্রমেই কলঙ্কিত করতে দেওয়া যায় না।

তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলাটি তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা চরম গাফিলতির প্রমাণ দিয়ে সত্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হন এবং মামলায় প্রকৃত জাল-জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও অন্যায়ভাবে অনেককে বাদ দিয়েছেন। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তার (তদন্ত কর্মকর্তা) ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা, উদাসীনতা, ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। যা নিঃসন্দেহে অসদাচরণের মধ্যে পড়ে। তার এমন কাজের কারণে দুদকের মতো রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না। তাই আদালত মনে করেন, মো. শফিউল্লাহর মতো কর্মকর্তা থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আদালতের এ আদেশ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা ইতিমধ্যেই দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সামছুন্নাহারের স্বাক্ষর জাল করে যোগসাজশে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে একই আদালতের পাঁচ কর্মচারী। পরে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পেশ করে বিশেষ ও দায়রা জজ আদালতের ৭৪টি মামলার চিহ্নিত ১০৬ আসামিকে মুক্ত করা হয়।

ওই ৭৪ মামলায় কোনো জামিনের আদেশ ছাড়াই আদালতের নথিতে জামিনের দরখাস্তসহ জামিননামা অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ওইসব জামিননামায় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সামছুন্নাহারের স্বাক্ষর জাল করা হয়। আসামিরা আদালতের ভেতরে অবস্থান করে বিচারকের অগোচরে গোপনে ভুয়া জামিননামাগুলো তৈরি করেন।

প্রতারকচক্র শুনানি না করে বিচারকের খাস কামরায় জামিন মঞ্জুর হওয়ার মিথ্যা কথা বলে ওই ৭৪টি মামলার সংশিষ্ট আইনজীবীর কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে আসামিদের জামিননামা গ্রহণ করে। প্রতিটি মামলায় জামিনের ক্ষেত্রে আসামিপক্ষের লোকজনের কাছ থেকে কমবেশি করে অন্তত ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয় তারা। এই হিসেব অনুযায়ী ১০৬ জনকে জামিন দিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। অথচ ভুয়া জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামিরা একেক জন পেশাদার মাদক চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১২ জুলাই আদালতের নাজির উবায়দুল করিম আকন্দ রাজধানীর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর দুদকের সহকারি পরিচালক মো. শফি উল্লাহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৭/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়