মালয়েশিয়ায় জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : মালয়েশিয়ায় নিয়ে যুবকদের জিম্মি করে দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে খুলনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৬ -এর সদস্যরা।
মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় সহজ-সরল যুবকদের। এরপর জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে র্যাব-৬ খুলনার লবণচরাস্থ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয়। র্যাব-৬-এর পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম পুরো বিষয়টি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এর আগে সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. আহসান হাবিব খান (৪৩), মো. রুহুল আমিন খান (৪২)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলাই বেপারীকান্দি গ্রামের আজগর সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, একই গ্রামের ফয়জুল শিকদারের ছেলে মো. দিলু শিকদার এবং আলী মিয়া সরদারের ছেলে রাসেল সরদারসহ চারজন একই এলাকার ব্র্যাক কর্মকর্তা মো. শাইজিদ খানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনে চাকরিতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পান। শাইজিদ খানের ভাই নুরুল আমিন খান ও বায়জিদ খান দীর্ঘ বছর মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় তাদের কাছে মাধ্যমটি বিশ্বস্ত বলে মনে হয়। সে মোতাবেক প্রত্যেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের মালয়েশিয়ায় নেওয়া হয়। যাওয়ার সময় বিমানে এ রকম আরও ছয়জনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। মোট ১০ জন কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রেরণকারী শাইজিদ খানের ভাই ও অন্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করে গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে একটি ১২ তলা ভবনে আটকে রেখে তাদের ১০ জনের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। না দিলে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে বাংলাদেশে স্বজনদের ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একই সঙ্গে জিম্মিদের কথা বলিয়ে কান্নাকাটি শুনিয়ে বিকাশ এবং ডাচবাংলা ব্যাংকের রকেট নম্বর দিয়ে ৪/৫ লাখ টাকা করে দিতে বলা হয়।
এভাবে ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেছেন- এমন আটজনকে জিম্মিদশা থেকে বাইরে এনে পাসপোর্ট-ভিসা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে তারা পুলিশের হাতে আটক হন। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পর গত ১৫ মার্চ তারা দেশে ফিরতে সক্ষম হন। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় বাকি দুইজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি।
র্যাব-৬ এর পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আট যুবক দেশে ফিরে র্যাব সদর দপ্তরে অভিযোগ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে র্যাব-৬ এর গোয়েন্দা দল মুক্তিপণের অর্থ লেনদেন হওয়া সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বিকাশ এজেন্ট মো. ইমরুল ইসলাম টিটুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার বিকাশ নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ মেলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তিতে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রাইজিংবিডি/খুলনা/০৩ এপ্রিল ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন