ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য কি এত আইনজীবী?’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ২২ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য কি এত আইনজীবী?’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ওকালতনামায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার আইনজীবীর সংখ্যা ৪৭৮ জন। আর একজন আইনজীবী অসুস্থ থাকলে জেরা হবে না? তাহলে খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য কি এত আইনজীবী?’

বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রতি এ প্রশ্ন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পুরান ঢাকার বকশীবাজারস্থ কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এরপর বেলা ১১টা ৪২ মিনিটে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

মামলা দুটির মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ শুনানি আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদকে খালেদা জিয়ার পক্ষে পুনরায় জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল।

শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার কার্যক্রম দেরিতে শুরুর হওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবগত করেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। এজন্য আমরা সকাল থেকেই আদালতে এসে বসে থাকি। কিন্তু মামলার কার্যক্রম শুরু হয় অনেক দেরিতে। তিনি মামলার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আগামী তারিখ থেকে আদালতের নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী মামলার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি আদালতকে জানান।

জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, যানজটের কারণে খালেদা জিয়ার আদালতে আসতে দেরি হচ্ছে। এরপর তিনি খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জানিয়ে মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন।

তখন বিচারক বলেন, ‘এ মামলার ওকালতনামায় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ৪৭৮ জন। আব্দুর রেজ্জাক খান অসুস্থ থাকলে জেরা হবে না? তাহলে খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য কি এত আইনজীবী? আর আপনারা এখানে সেরা সেরা আইনজীবী। আপনারা যেকোনো একজন জেরা শুরু করেন।’

এরপরও জমির উদ্দিন সরকার মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করে বলেন, ‘আদালতে খালেদা জিয়া আসছেন। দুটি প্রশ্ন করবেন না এটা কেমন কথা। তাদের (আইনজীবী) একেকজনের একেক ইস্যু। সময় বা বক্তব্যের জন্য আছেন জমির উদ্দিন সরকার, জেরার জন্য আব্দুর রেজ্জাক খান আর পিটিশনের জন্য আছেন জাকির হোসেন ভূইয়া। প্রতিটি তারিখে তাদের ইস্যু আছে। আর তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৬টা প্রশ্ন করার জন্য রিকল করেছেন। প্রশ্নগুলো দেওয়া আছে। প্রশ্ন দেখে প্রশ্ন করতে পারবেন না, এটা কেমন কথা। ম্যাডাম আসছেন, আমরাও আসছি। আমরা কিছু কাজ করি।’

তখন বিচারক বলেন, ‘আমরা এখানে এতগুলো মানুষ এসেছি। আর এখানে খালেদা জিয়া এসেছেন। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত আর সম্মানিত মানুষ। আর সরকারেরও তো অপচয়ের একটা ব্যাপার আছে। আর আমরা এখানে এলাম আর গেলাম তাহলে তো কিছু হলো না।’

তখন জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আব্দুর রেজ্জাক খান এ মামলায় ৩২ সাক্ষীকে জেরা করেছেন। এজন্য আমরা চাচ্ছি, তিনিই জেরা করুক।’

তখন বিচারক বলেন, ‘আপনার জেরা শুরু করেন।  এরপর আমি সময় দিয়ে দেব।’

তারপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে জেরা শুরু করেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করেন। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জেরা পেছানোর জন্য বলেন।

তখন বিচারক তাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৯ জুন জেরার পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলাটিতে হাইকোর্টের দেওয়া পুনরায় তদন্তের আবেদন খারিজ করার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। যা শুনানির জন্য আগামী ৩ জুলাই ধার্য রয়েছে জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবীরা।

ওই মামলায়ও সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত আগামী ২৯ জুন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালত ছেড়ে যান খালেদা জিয়া।

এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে বকশীবাজার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরি কয়েকশ’ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। এদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আদালতে আসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবীবুন্নবী খান সোহেল, আবুল বাশার, শায়রুল কবীর প্রমুখ।

আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন- ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূইয়া, হেলাল উদ্দিন, হান্নান ভূইয়া প্রমুখ।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়