ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘মিথ্যা তথ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে ২ বছরের জেল’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মিথ্যা তথ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে ২ বছরের জেল’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করেন তাহলে তাদের দুই বছরের জেল অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

এমন বিধান রেখে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৭-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে দুপুরে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ শামীম এ তথ্য জানান।

সংশোধিত আইনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে অতিরিক্ত সচিব বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবৈধ পাচারের সংযুক্তি ঘটেছিল, এটা (সংশোধিত আইন) তাও রোধ করবে। এ বিষয়টা (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ) নিয়ে ব্যবসাপাতি করার একটা প্রতিরোধক ভূমিকা এই আইন পালন করবে।

তিনি আরো বলেন, কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। তবে সরকারি হাসপাতালে যেখানে বিশেষায়িত ইউনিট আছে সেখানে এ ধরনের অনুমতির প্রয়োজন নেই। যাদের অনুমতি নেই এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে তাদের আবেদন করতে হবে। 

নিকট আত্মীয়ের মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও সংযোজন করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানী, দাদা-দাদী, নাতি-নাতনী এবং আপন চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন।

আশরাফ শামীম বলেন, আগের আইনে নিকট আত্মীয় বলতে পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রী। নতুন আইনে নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজনের ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয় হওয়ার আবশ্যকতা নেই বলে জানান তিনি।   

অতিরিক্ত সচিব  বলেন, আইন অনুযায়ী যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সংযোজন করা যাবে সেগুলো হলো- মানবদেহের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চোখ, চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যেকোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ।

খসড়া আইনে ক্যাডাভেরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে শামীম বলেন, ক্যাডাভেরিক অর্থ হৃৎপিণ্ড স্পন্দনরত এইরূপ মানবদেহ যা অনুমোদিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্রেইন ডেথ ঘোষিত এবং যার অঙ্গ অন্য মানবদেহে প্রতিস্থাপনের জন্য লাইফ সাপোর্ট দিয়ে কার্যক্ষম রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ব্রেইন ডেথ ঘোষণার পর কোনো আইনানুগ উত্তরাধিকারী কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুমতি দেয় তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেওয়া যাবে। ব্রেইন ডেথ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো দাবিদার না থাকলে ব্রেইন ডেথ ঘোষণাকারী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব পালনকারী ব্যক্তি অনুমতি দিতে পারবে।

ব্রেইন ডেথ ঘোষণার জন্য একটি কমিটি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটি কোনো ব্যক্তিকে ব্রেইন ডেথ হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। ব্রেইন ডেথ ঘোষণাকারী কমিটির কোনো চিকিৎসক বা তার কোনো নিকটাত্মীয় এরূপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন বা সংযোজনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। 

অতিরিক্ত সচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি নিকট আত্মীয়তা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা ওই ধরনের তথ্য দিতে উৎসাহিত, প্ররোচিত বা ভীতি প্রদর্শন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য তিনি কমপক্ষে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। 

তিনি বলেন, এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধের জন্য কোনো চিকিৎসক দণ্ডিত হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের মাধ্যমে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিলযোগ্য হবে। 

সংশোধিত আইনে শাস্তি কমল কিনা- এ বিষয়ে আশরাফ শামীম বলেন, আগে শাস্তি ছিল ঢালাওভাবে, অনির্ধারিত। এবার দণ্ডের ক্ষেত্রগুলো সুনির্ধারিত করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত আইনানুযায়ী ব্রেইন ডেথ (মৃত) মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের জন্য সরকার ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি গঠন করবে জানিয়ে শামীম বলেন,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবে এ কমিটির সভাপতি। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদদর্যাদার একজন কর্মকর্তা এ কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, জাতীয় কমিটি ক্যাডাভেরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ কার্যক্রমের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবে। ক্যাডাভেরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিদর্শন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ কার্যক্রম সহজীকরণ, সম্প্রসারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য তাৎক্ষণিক পরামর্শ দেবে বলে জানান তিনি । 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৭/নঈমুদ্দীন/সাইফুল/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়