ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৯ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখছে দুদক

এম এ রহমান : প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, প্যারাডাইস পেপারসের বিষয়টি মাত্র আজকেই হাতে পেলাম। আমি যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঠিয়েছি। আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।

দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত না নিলেও সরকারের অন্যান্য সংস্থা যাতে বিষয়টি তদন্ত করে তা নিশ্চিত করা হবে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে চাই, আমরা যদি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নাও নেই, তাহলে যাতে সরকারের অন্যান্য সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগ করার তথ্য ফাঁস করে আসছে প্যারাডাইস পেপারস। গত ১৭ নভেম্বর নতুন করে ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করা হয়েছে। আলোচিত প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালসহ মোট ১০ জন বাংলাদেশির নাম রয়েছে।

গত বছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনা সামলাতে না-সামলাতে ৫ নভেম্বর নতুন করে ফাঁস হয় ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি। এসব নথি প্রথমে জার্মানির একটি দৈনিকের কাছে আসে। পরে সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) হাতে তুলে দেয় তারা। সব নথিই বারমুডাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবির। এসব নথি পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে দেখছেন ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক। এখন চলছে এসব নথির বিশ্লেষণ; এতে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন সব নাম।

তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের নামও। প্রতিষ্ঠানটি হলো ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তাদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। পানামা পেপারস ও অফশোর লিকসের মতো প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে, তারা আইন ভেঙে সম্পদ গড়েছেন, সরাসরি এমনটা বলা হচ্ছে না। প্রভাবশালী এই ব্যক্তিরা গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন সব জায়গায়, যেখানে কর নিয়ে কড়াকড়ি নেই; সম্পদের উৎস নিয়েও কেউ মাথা ঘামাবে না।

প্যারাডাইস পেপারস হচ্ছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, সেলিব্রেটি ও বিত্তশালী মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন এবং মালিকানা-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের এক বিশাল ডাটাবেজ। এই ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না বা সামান্য হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ফাঁস হওয়া এই নথিতে রয়েছে এফবিসিসিআইএর প্রাক্তন সভাপতি মিন্টুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মাল্টিমোড গ্রুপের নাম। তিনি এই গ্রুপের চেয়ারম্যান, স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল ভাইস চেয়ারপারসন। তাদের তিন ছেলে তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার আউয়াল এই গ্রুপের পরিচালক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিন্টুর ছেলে তাবিথ গত বছর বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাবিথ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অন্যতম সহসভাপতি। বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস করা প্যারাডাইস পেপারসের তালিকায় থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন ক্রমানুসারে নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, চৌধুরী ফয়সাল (গ্লোব-লেক এশিয়া লিমিটেড ও গ্লোব-লেক এশিয়া হোল্ডিংস লিমিটেড), আবদুল আউয়াল মিন্টু (এনএফএম এনার্জি লিমিটেড), ফরিদা ওয়াই মোগল, শহিদ উল্লাহ, সামির আহমেদ (ড্রাগন ক্যাপিট্যাল ক্লিন ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড) ও তাজওয়ার মোহাম্মদের নাম।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে বারমুডায় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আরো রয়েছে ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক ফাইভ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক থারটিন অ্যান্ড ফোরটিন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টুয়েলভ লিমিটেড, বার্লিংটন রিসোর্সেস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ-বারমুডা লিমিটেড, টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লিমিটেড, আনিসুর রহমান অ্যান্ড কোং ও ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড।

এ ছাড়া প্যারাডাইস পেপারসে অফশোর কোম্পানি হিসেবে এনএফএম এনার্জি লিমিটেডের সঙ্গে মিন্টু পরিবারের সংশ্লিষ্টতার তথ্য এসেছে, যে কোম্পানির এজেন্ট ল ফার্ম অ্যাপলবি।
‘করস্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত বারমুডায় ১৯৯৯ সালে নিবন্ধিত এই কোম্পানির অংশীদার বা ‘অফিসার’ হিসেবে আবদুল আউয়াল মিন্টু, নাসরিন আউয়াল, তাবিথ, তাফসির ও তাজওয়ারের নাম রয়েছে। তাদের ব্যবসায়িক ঠিকানা হিসেবে মাল্টিমোড গ্রুপের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে।

দুনিয়াজুড়ে নতুন আলোড়ন তোলা প্যারাডাইস পেপারসে ব্রিটেনের রানীসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, রাজনীতিবিদ, সেলিব্রেটি ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছেন কানাডার সাবেক তিন প্রধানমন্ত্রী জ্য ক্রেটিয়াঁ, পল মার্টিন ও ব্রায়ান মুলরনি, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউকিও হাতোয়ামা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা, মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মহাতারকা অমিতাভ বচ্চন, সেলিব্রেটি সংগীতশিল্পী শাকিরা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়