ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হারুন-অর-রশীদ ইন্টারেস্টেড সাক্ষী : খালেদা জিয়া

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হারুন-অর-রশীদ ইন্টারেস্টেড সাক্ষী : খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, হারুন-অর-রশীদ সম্পূর্ণরূপে একজন ইন্টারেস্টেড সাক্ষী। তিনি অতি উৎসাহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। এই মামলায় একই সঙ্গে তিনি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, মামলার বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফলে তিনি নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান করেননি বা নিরপেক্ষ কোনো তদন্তও করেননি।

পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া। ৬ষ্ঠ দিনের মত আত্মপক্ষ শুনানিতে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। তবে তার বক্তব্য শেষ হয়নি।

বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্যে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনোরূপ অনুদান গ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ কোনো বক্তব্য কোনো পর্যায়ে কোনো সাক্ষী দেন নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ সাক্ষ্য রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের কেউই বলেন নাই। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের সাক্ষ্যে এটা দৃশ্যমান যে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিল সংক্রান্ত নথি চলমান ছিল এবং আছে। উক্ত দু’টি তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র বিজ্ঞ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণ দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই দু’টি তহবিল সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদন নোটশিটের মাধ্যমে উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট সাচিবিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যথার্থ বিবেচিত হয়েছে বলে তাদের মতামত নোট আকারে নোটশিটের মাধ্যমে উপস্থাপনের পরেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে আমি তাতে আমার স্বাক্ষর দিয়েছি। এইরূপ মূল নথি এবং যাবতীয় রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণ তা প্রমাণ করেছেন। এ বিষয়ে আমার দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটে নাই।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ইংরেজি ১৯৯১ সালের ৯ জুন হতে পরের বছর ২৮ মার্চ পর্যন্ত এই মামলার ঘটনার বিবরণ রয়েছে এবং ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। এই ১৮ বছরের দীর্ঘ সময়কালের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপনার নিকট প্রকৃত তথ্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা প্রয়োজন।’  

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এই মামলার এজাহারকারী মোঃ হারুন-অর-রশীদ  পি. ডব্লিউ-১ হিসেবে অত্র মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তার জবানবন্দির কিছু অংশ আমাকে শোনানো হয়েছে। হারুন-অর-রশীদ মামলা দায়েরের পূর্বে অনুসন্ধান কার্য করেছেন বলে দাবি করেন। তিনি ২০০৮ সালের ২৫ জুন একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার পূর্বে ১১ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ নুর আহাম্মদও একটি পুর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে মোঃ নুর আহাম্মদ এই মামলায় আমার কোনরূপ সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে কোন মতামত প্রদান করেন নি। অথচ মোঃ নুর আহাম্মদ কর্তৃক এইরূপ একটি পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের পর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হারুন-অর-রশীদকে একই বিষয়ে পুনরায় অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি আমার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ২০০৮ সালের ২৫ জুন একটি মনগড়া অনুসন্ধান রিপোর্ট দাখিল করেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই দুটি অনুসন্ধান রিপোর্ট পাশাপাশি পর্যালোচনা করলে আপনি দেখতে পাবেন অনুসন্ধান রিপোর্ট দুটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি কর্তৃক দাখিল হওয়া স্বত্ত্বেও দুটি রিপোর্টের ভাষা, বাক্য ও শব্দ চয়ন এক ও অভিন্ন। ১১ জুনের রিপোর্টে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মো: আজিজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মর্মে একটি বাক্য রয়েছে। ২৫ জুনের  রিপোর্টেও সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক আজিজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মর্মে অনুরূপ একটি বাক্য রয়েছে। দুইটি রিপোর্টের দুটি বাক্যেই ‘আজিজুল’ নামটি কেটে একই হাতে আজিজুলের উপরে ‘মফিজুল’ নামটি বসানো হয়েছে। দুইজন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট দাখিল করা হলে একই হাতের লেখায় একই নাম অনুরূপভাবে কাটাকাটি কী করে সম্ভব তা আপনি বিবেচনা করে দেখবেন। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, হারুন-অর-রশীদ কোনো নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে একটি মহল কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে পূর্বের রিপোর্ট অর্থাৎ নুর আহাম্মদ কর্তৃক ১১ জুনের রিপোর্টটিই হুবহু প্রিন্ট করে রিপোর্টের শেষাংশে শুধু আমার নামটি সংযোজন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ নিরপেক্ষ অনুসন্ধান না করে নিজেই দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করে একটি অসত্য রিপোর্ট দাখিল করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফলে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বক্তব্য হচ্ছে ১১ জুনের রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কোনো প্রাথমিক অভিযোগ না পাওয়ায় হারুন-অর-রশীদকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এবং বেআইনিভাবে পুনরায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী একই ব্যক্তি কর্তৃক বারবার কিংবা একই বিষয়ে বারবার অনুসন্ধান কিংবা প্রতিবেদন দাখিলের কোনো আইনগত বিধান নাই।’

তিনি বলেন, ‘হারুন-অর-রশীদ সম্পূর্ণরূপে একজন ইন্টারেস্টেড সাক্ষী। তিনি অতি উৎসাহী। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ। এই মামলায় একইসঙ্গে তিনি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, মামলার বাদী এবং তিনিই এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফলে তিনি নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান করেননি বা নিরপেক্ষ কোনো তদন্তও করেননি।’

প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক হিসাবে এই সাক্ষী ২৫ জুন অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই হারুন-অর-রশীদ ১৯৭৯ সালে ‘অ্যাসিস্টেন্ট’ পদে তৎকালীন ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনে যোগদান করেন বলে দাবি করেছেন। অথচ ১৯৭৯ সালের ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনের অর্গানোগ্রামে ‘অ্যাসিস্টেন্ট’ নামের কোনো পদ বা পদবী ছিল না। এই অ্যাসিস্টেন্ট পদটি ব্যুরো অব এন্টিকরাপশনে স্থান পায় ১৯৮৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। তাহলে ১৯৭৯ সালে অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে তার নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। তার নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় নিরপেক্ষ অনুসন্ধান বা তদন্ত করার মতো তার কোনো নৈতিক মনোবল ছিল না। ফলে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে তাদের নির্দেশিত মতে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে অসত্য প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই সাক্ষী ১৯৭৯ সালে অ্যাসিস্টেন্ট পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের পর বিভিন্ন কৌশলে ১৯৮৫ সালে অ্যাসিস্টেন্ট ইন্সপেক্টর এবং ১৯৯২ সানে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি নেন। ২০০৫ সালে বিএনপি ও চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলে তাকে অযোগ্য হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আত্তীকরণ না করে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই অব্যাহতি আদেশের বিরুদ্ধে এই সাক্ষী মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দায়ের করে হেরে যান। সেই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল ফাইল করে তিনি অদৃশ্য ইশারায় সেই লিভ টু আপিল প্রত্যাহার করে নেন এবং তার পরপরই ২০০৮ সালে তাকে সরাসরি উপ-সহকারী পরিচালক পদে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের মাত্র দুই দিন পর এই মামলার অনুসন্ধানের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সময়ের মধ্যেই তাকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী পরিচালক করা হয়। আর চার্জশিট দাখিলের পর ২০১২ সালে পুরস্কার স্বরূপ আবারো তাকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় উপ-পরিচালক।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘হারুন-অর-রশীদ ২০০৫ সালে চাকুরিচ্যুত হওয়ার কারণে আমাদের উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়। ফলে এই সাক্ষী বিরাগের বশবর্তী হয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে যে জবানবন্দি প্রদান করেছেন তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

তিনি বলেন, ‘তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, ১৯৯১-১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আমি নাকি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে চলতি হিসাব খুলি। সাক্ষীর এই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সোনালী ব্যাংক লিঃ, রমনা কর্পোরেট শাখার হিসাব নং-৫৪১৬ খোলার ফরমে আমার কোনো স্বাক্ষর নাই। অথবা বাগেরহাটে জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কিংবা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে টাকা বিলি বন্টনের ক্ষেত্রে কোনো ফাইলেও আমার স্বাক্ষর নাই। এই নামে কোনো তহবিলও নাই। অথচ আমার নিজের ও দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্য এই সাক্ষী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা জবানবন্দি প্রদান করেছেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সাক্ষী সোনালী ব্যাংক, রমনা কর্পোরেট শাখা থেকে উপরোক্ত হিসাবের সমস্ত তথ্যবিবরণী কিংবা সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার আপনার সামনে উপস্থাপন করেন নাই। ১৯৯১ সালের ২ জুন তারিখের পূর্বে সোনালী ব্যাংক, রমনা কর্পোরেট শাখায় কে ম্যানেজার ছিলেন, সেই তথ্যও আপনার সামনে আনেন নাই। ফরেন কারেন্সিতে রেমিটেন্স আসলে কী কী তথ্য থাকা প্রয়োজন বা এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা কিংবা এই সংক্রান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে আমার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেই সব বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আমার বিরুদ্ধে তিনি এজাহার দায়ের করেছেন। এই টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য প্রাপ্তি ছাড়াই এজাহার রুজু করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ আমার কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া স্বত্ত্বেও ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সোনালী ব্যাংক, রমনা শাখায় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামীয় একটি চলতি হিসাব খুলেন যার হিসাব নং-৫৪১৬’ মর্মে এজাহারে সম্পূর্ণ মিথ্যা উক্তি করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সম্পূর্ণরূপে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদকে অহেতুক সম্পৃক্ত করে কতিপয় গোঁজামিল ও মিথ্যা বক্তব্য এজাহারে উল্লেখ করেন। এই সাক্ষী ‘চেক নং- ৮৪৩১১০৩, তারিখ ১৩/১১/১৯৯৩ মূলে অনুদানের অর্থ হইতে ২,৩৩,৩৩,৫০০/- টাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বগুড়ায় একটি এতিমখানা স্থাপনের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের অনুকুলে প্রদান করেন’ মর্মে প্রধানমন্ত্রীর পদ জড়িয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কিংবা আমি নিজে স্বাক্ষর করে এইরূপ কেনো চেক প্রদান করি নাই।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সাক্ষী আমাকে জড়িয়ে এজাহারে ও জবানবন্দিতে বলেছেন যে, আমি নাকি বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক, গুলশান শাখায় এফডিআর হিসাব খোলার নামে অর্থ স্থানান্তর করেছি। সাক্ষীর এইরূপ অভিযোগ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। তিনি ব্যক্তিগত ও চাকুরী জীবনে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশায় এবং ক্ষমতাসীনদের অসৎ উদ্দেশ্য  বাস্তবায়নের জন্য এবং আমাকে ও আমার দলকে সামাজিক ও রাজনৈকিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে এইরূপ মিথ্যা উক্তি এজাহারে উল্লেখ করেছেন এবং জবানবন্দি প্রদান করেছেন। তার এই মিথ্যা বক্তব্যের সূত্র ধরেই আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল জনসম্মুখে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নাই। অথচ এই সাক্ষী আমার নামটি জড়িয়ে এজাহারে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং আমার নামে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বিচার্য বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো মূল নথি দুদক কর্তৃক মৌখিক এবং লিখিতভাবে চাওয়ার পরেও এইরূপ নথি উপস্থাপন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে বিদেশী অনুদান সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখায় এসেছে, এরূপ দাবির সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে মূল ডি.ডি. সোনালী ব্যাংক দিতে পারেনি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা থেকে একটি একাউন্ট খোলার আবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে এবং তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তদানীন্তন সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী কর্তৃক খোলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। উক্ত একাউন্ট সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা কোনো লেজার বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট দ্বারা কোনো সাক্ষ্য প্রদান করেন নাই। একাউন্ট ওপেনিং ফরমের কোথাও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কোনো দাপ্তরিক আদেশ অথবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে- এরূপ কোনো দালিলিক সাক্ষ্য কেউ উপস্থাপন করেননি। এই একাউন্ট ওপেনিং আবেদনে কোথাও আমার কোনো সই-স্বাক্ষর নেই। সাক্ষীগণের সাক্ষ্যের স্বীকৃত মতে তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এস.এম. মোস্তাফিজুর রহমান নিজ উদ্যোগে এই অনুদানের অর্থ আনার ব্যবস্থা করেন। পি.ডব্লিউ-৩১ ও পি.ডব্লিউ-৩২ উভয়ে তাদের সাক্ষ্যে তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের নাম মূল অনুদান আনার বিষয় বিভিন্ন তথ্যাবলী সংগ্রহের মাধ্যমে স্বীকার করেন। সোনালী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা একাউন্ট খোলা সম্পর্কিত অভিযাচনপত্রের পরেও কোনরূপ তথ্য সরবরাহ করতে পারেন নাই। এক্সিবিট-৪৮-এ এই সাক্ষ্য আছে। ’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়