ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘অশুভ ইঙ্গিত না থাকলে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা হতো না’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অশুভ ইঙ্গিত না থাকলে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা হতো না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : অশুভ ইঙ্গিত না থাকলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতো না বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

খালেদা জিয়া কোনো টাকা অপব্যবহার করেননি, এ দাবি করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে একের পর এক মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা দিয়ে তাকে ধাওয়া করা হচ্ছে। তিনি নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া মাথা ঠান্ডা রেখে মামলা লড়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ অত্যন্ত বিজ্ঞ, দক্ষ লোক। উনি যেভাবে নির্দেশিত হবেন সেভাবে চার্জশিট দেওয়ার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য একযাত্রায় দুই রকম ফল- বাগেরহাটের জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হালাল আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট হারাম। ঘঁষামাজা , স্বাক্ষরবিহীন কাগজ দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্রিমিনাল কেসে যদি স্বাক্ষরবিহীন, ঘঁষামাজা ডকুমেন্টের ওপর নির্ভর করে সাজা দেওয়া হয় তাহলে সব মামলার বিচার পরিবর্তন হয়ে যাবে। আপনি একজন হাইলি কোয়ালিফাইড বিচারক। যদি সন্দেহ জাগে যে আসামি দোষী না নির্দোষ, এ ধরনের একটা দোদুল্যমান অবস্থায় বিচারক আসামিকে খালাস দিতে পারেন। আর ঘঁষামাজা, স্বাক্ষরবিহীন নথির ওপর নির্ভর করে সাজা দেওয়া যায় না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, মামলায় রাজনৈতিক গন্ধ আছে। মামলাটি রাজনৈতিক কালিমাযুক্ত। তিনি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রিয় নেত্রী। তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করলেন এতো হালকাভাবে। আর ১৭ বছর পর মামলার প্রদীপ জ্বলে উঠল। কেন, কী উদ্দেশ্যে অশুভ ইঙ্গিত? অশুভ ইঙ্গিত যদি না থাকে তাহলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয় না। অনেক কঠিন মামলা আছে। আমরা হয়তো থাকব না। বাংলার মানুষ, ইতিহাস দেখবে, মামলায় কারা কারা আসামি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যখন যে ক্ষমতায় থাকে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তারা ফায়দা লুটতে চায়। কিন্তু সবক্ষেত্রে এটা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে এখনো অনেক বিচারক আছেন, যারা আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে ন্যায়বিচার করেন। তারা ইতিহাস হয়ে থাকবেন। যদি বিচারক ন্যায়বিচার করেন তিনি ইতিহাসে নজির হয়ে থাকতে পারেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, ট্রাস্টের একটা পয়সাও তছরুপ হয়নি। এই ট্রাস্টের সঙ্গে খালেদা জিয়া কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে এসেছেন।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ধ্রুবতারা। তিনি তিন তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে মানুষের অন্তরে জায়গা করে আছেন। তাকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে তার বিরুদ্ধে মামলা।

তিনি আরো বলেন, জাল নথি তৈরি করে এই মামলা করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতেই এ মামলা হয়েছে।

এর আগে দুই মামলায় হাজিরা দিতে বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। ১১টা ৩৭ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যুক্তি তুলে ধরেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এরপর আদালত ১৫ মিনিটের জন্য চা পানের বিরতিতে যান। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে পুনরায় যুক্তি তুলে ধরেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। ১টা ১৮ মিনিটে তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর ১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত যুক্তি তুলে ধরেন এ জে মোহাম্মদ আলী। এরপর আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি অবশিষ্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত। বেলা ৩টার দিকে খালেদা জিয়া আদালত ছেড়ে চলে যান। এদিন চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটিও যুক্তিতর্কের জন্য ধার্য রয়েছে।

এদিকে খালেদা জিয়ার হাজিরা উপলক্ষে এদিনও আদালতে চত্বরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। আদালতের প্রবেশমুখেই ছিল আর্চওয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবির রিজভী, মির্জা আব্বাস প্রমুখ। এছাড়া খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আব্দুর রেজ্জাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ডিসেম্বর ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়