ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাচ্চুকে তৃতীয় দফায় দুদকে তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাচ্চুকে তৃতীয় দফায় দুদকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃতীয় দফায় তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন সই করা নোটিসে  আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টায় হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি  রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।

১৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও ‘অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন করেন আব্দুল হাই বাচ্চু।

বাচ্চুর পাঠানো চিঠিতে এক মাসের সময় চেয়ে আব্দুল হাই বাচ্চুর করা আবেদন নাকচ করে দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার আবারো চিঠি দেয় দুদক।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বেসিক ব‌্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম‌্যানকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওইদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজেকে দোষী মনে করি না।

এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান জাতীয় পার্টির এই প্রাক্তন সংসদ সদস‌্য। তবে সাংবাদিকদের জেরার মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কী বিপদেই না পড়লাম।’

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। এর আগে ব্যাংকের প্রাক্তন ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা ৫৬টি মামলার বিষয়ে আব্দুল হাই বাচ্চুকে দুদকের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাকি মামলাগুলোর বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা আব্দুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়