ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যার বেশি নাম তারই তো বদনাম : শাবনূর

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যার বেশি নাম তারই তো বদনাম : শাবনূর

রাহাত সাইফুল : ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। নব্বই দশকের এ চিত্রনায়িকা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘দুই নয়নের আলো’সহ বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন তাকে চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। আজ শুক্রবার শাবনূর অভিনীত ‘পাগল মানুষ’ সিনেমাটি সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে। এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘এত প্রেম এত মায়া’ সিনেমার কাজও করছেন। দীর্ঘদিন পর পর্দায় উপস্থিতি, বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা এবং সালমান শাহ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদক শাবনূরের সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলাপচারিতার অংশ বিশেষ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাইজিংবিডি : দীর্ঘ দিন পর ভক্তরা আপনাকে চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখতে পাচ্ছেন। সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ও অনুভূতি জানতে চাই।
শাবনূর :
দীর্ঘ দিন পর আমার অভিনীত চলচ্চিত্র মুক্তি পেল। এটি অবশ্যই আনন্দের। আমার ভক্তরা এখন হলে যান না। আমি ভক্তদের হলে যাওয়ার অনুরোধ করছি। সিনেমাটি নিয়ে আমার প্রত্যাশা দারুণ। সিনেমাটির কাজ ভালো করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি, দর্শকদেরও ভালো লাগবে।

রাইজিংবিডি : চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
শাবনূর :
চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা ভাবছি। এজন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতিও নিচ্ছি।

রাইজিংবিডি : ছোট পর্দায় অভিনয়ের ইচ্ছে আছে কিনা?
শাবনূর :
ছোট পার্দায় যারা অভিনয় করেন তারা অবশ্যই ভালো কাজ করছেন। আমি তাদের নিয়ে নাটক নির্মাণ করতে চাই, অভিনয় করতে চাই না। মানুষ কি কখনো বড় থেকে ছোট হতে চায়! যেহেতু আমার শুরুটা বড় পর্দায় তাই ছোট পর্দায় অভিনয় করতে চাই না। তবে যারা কাজ করছেন তাদেরকেও ছোট মনে করছি না।

রাইজিংবিডি : অনেকের অভিযোগ আপনাকে ফোনে পাওয়া যায় না…।
শাবনূর :
আমি অনেক ব্যস্ত থাকি। একটা সেকেন্ডও সময় নেই। বাসায় অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। আমার ছেলেটা অনেক চঞ্চল। ওকে নিয়েই আমার সারা বেলার ব্যস্ততা। মাঝে মাঝে খুব রাগ লাগে। আবার খুব ভালোও লাগে পুতুলের মতো ছোট ছেলেটাকে দেখে। ওর সঙ্গে সময় কাটাতেও খুব ভালো লাগে।

রাইজিংবিডি : বর্তমান সময়ের অনেকেই আপনাকে আইডল মানেন। এখনো আপনার অভিনয়ের প্রশংসা মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারে পুরস্কারের তালিকা একটু সংক্ষিপ্ত। এর কি বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
শাবনূর :
আমি অনেক ভালো ভালো সিনেমায় কাজ করেছি। দেশের গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। অনেকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু একটা কালো ছায়া আমার উপর নেমে এসেছিল। এই কালো ছায়ার জন্য পুরস্কারগুলো আমার হাত ছাড়া হয়ে গেছে। আমি ‘বিক্ষোভ’ সিনেমায় কাজ করেছিলাম। সেই সিনেমায় একটা মিছিলের ছবি ছিল। সেখানে আমি ট্রাকে করে মিছিল করছি। সঙ্গে অন্যান্য শিল্পীরাও ছিলেন। কিন্তু এই মিছিলের ছবিটা অনেকে অনেক জায়গায় দেখিয়ে বলেছে, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’ এটাকে পুঁজি করে অনেকেই ছড়িয়েছে আমি কোনো দল করি। আসলে এটা ঠিক না। এজন্য অনেকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হাত থেকে ছুটে গেছে। এটা খুব দুঃখজনক। আমরা শিল্পী, আমরা কোনো দল করতে পারি না। আমি নিজে কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।

রাইজিংবিডি : বতর্মানে সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। আপনার কি সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো  আইডি আছে?
শাবনূর :
আমার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। কে বা কারা আমার নামে আইডি খুলেছে তা আমি জানি না। আর আমি ফেসবুক ব্যবহার করা পছন্দও করি না। তা ছাড়া আমার বাচ্চা ও সংসার সামলাতেই সময় কেটে যায়। ফেসবুকে বসার মতো সময় নেই বলেই আইডি খুলিনি।

রাইজিংবিডি : সম্প্রতি চলচ্চিত্রাঙ্গণ দুই ভাগে বিভিক্ত । বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
শাবনূর :
ইন্ডাস্ট্রির কারো সাথে আমার শত্রুতা নেই। আমি সব সময় নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। দেখুন আমার তো আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ তো আমাকে অনেক দিয়েছেন। আল্লাহ যতটুকু আমাকে দিয়েছেন ততটুকুতেই হ্যাপি। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। আড্ডা দিতে পছন্দ করি। এজন্য আম্মু রাগও করেন। এসব দলাদলি বা গ্রুপিং বুঝি না। এসব করাও ঠিক না।

রাইজিংবিডি : সালমান শাহর সঙ্গে আপনার সর্ম্পক কেমন ছিল?
শাবনূর :
সালমান আমাকে সব সময় ‘পিচ্চি’ বলো ডাকত। বলত, ‘এই পিচ্চি এদিকে আয়।’ আমাকে বলত, ‘আমার তো কোনো বোন নেই তুই আমার বোন।’ দেখা গেছে, সামিরা তার ড্রেস ম্যাচিং করে দিচ্ছে আর সালমান আমার সঙ্গে কথা বলছে। এমনও হয়েছে আমার দু-একটা ড্রেস সামিরা ঠিক করে দিয়েছে। কখনো কখনো সামিরা আমার কানের দুল ম্যাচিং করে দিয়েছে- এভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এ ধরণের মজার ঘটনা অনেক ঘটেছে। একবার অনেকগুলো কানের দুল আমি বের করেছি। তখন সামিরা বলল, ‘আমার কাছে দাও আমি বেছে বেছে ম্যাচিং করছি।’সালমান শাহ ভালো মনের মানুষ ছিল। বড় মনের মানুষ ছিল। ব্যক্তি হিসেবে খুবই ভালো ছিল। সেটে কোনো মুরুব্বি ঢুকলে আমি কখনই দেখিনি সে বসে থেকেছে। উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করেছে এবং বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিয়েছে। আরেকটি ব্যাপার, সে যত চঞ্চলই হোক, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে বদলে যেত।

রাইজিংবিডি : সালমান শাহ ও আপনাকে নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ গুঞ্জন রয়েছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
শাবনূর :
আমরা হচ্ছি চলচ্চিত্রের শিল্পী। আমাদের অনেকে চেনেন। আমাদের নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকবেই। শিল্পী বলেই এত গুঞ্জন। অচেনা মানুষকে নিয়ে গুঞ্জন থাকে না। আমাদের নিয়ে লেখালেখি না হলে তো মানুষ খবর পড়বে না। শাবনূর সালমানকে নিয়ে কিছু লিখলে সাধারণ মানুষের আগ্রহ একটু বেশি থাকবে। পত্রিকার কাটতি হবে। আসলে আমাদের নিয়ে যে প্রেমের গুঞ্জন সেটা সত্যি নয়। আমাদের নিয়ে যদি সমালোচনা না হয় তা হলে আমরা কেমন শিল্পী? যার বেশি নাম তারই তো বেশি বদনাম- এটাই তো নিয়ম।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জানুয়ারি ২০১৮/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়