ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘এরশাদ সামর্থ্যবান ছিলেন, খালেদা ফিজিক্যালি ফিট না’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১২ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এরশাদ সামর্থ্যবান ছিলেন, খালেদা ফিজিক্যালি ফিট না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদের  সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, ‘উনি (এরশাদ) সামর্থ্যবান ছিলেন। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে বিয়েও করেছিলেন, কিন্তু খালেদা জিয়া ফিজিক্যালি ফিট না।’

সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা কিছু বলবেন কি?’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড (মামলাটি) শুনানি শেষে আদেশের জন্য (অপেক্ষায়) রয়েছে।’

জবাবে আদালত বলেন, ‘আপনারা তো অনেক বই নিয়ে আসলেন, কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন।’

এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘মি. অ্যাটর্নি, আপনি কিছু বলবেন?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মাই লর্ড, এটি একটি সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) মামলা। এ মামলার নথি ইতোমধ্যে এসে গেছে। তাই, নথি দেখে শুনানির পর আদেশ দেওয়া হোক।’

আদালত বলেন, ‍‌‘কী ধরনের সেনসিটিভ মামলা?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটি একটি দুর্নীতির মামলা। এখানে এতিমের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আত্মসাৎ হয়েছে। সাবেক নথিতে সব পরিষ্কার, কীভাবে টাকা আত্মসাতের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। তাই আমি বলব, এ মামলার আদেশ আরো দুই দিন পর দেওয়া হোক।’

এ সময় খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মাই লর্ড, দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) আইনজীবী জামিন না দেওয়ার জন্য ইতোপূর্বে দুটি যুক্তি দিয়েছিলেন। আমরা এসব মামলার নথি এনেছি। এখানে দেখা গেছে, ওই সব মামলায় আসামিদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ জামিন দিয়েছিল।’ এই বলে তিনি আদালতে দুটি মামলার নথি বাড়িয়ে দেন।

এ সময় আদালত দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খানকে বলেন, ‘আপনি কিছু বলবেন?’

তখন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘এ মামলায় উনি (খালেদা জিয়া) সব মিলিয়ে দেড় মাসের মতো কারাভোগ করছেন। উনি এ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আসামি। এক বছর বা দুই বছর জেল হলে কথা ছিল। সাজার পরিমাণ কম, এই বিবেচনায় জামিন দেওয়া উচিত হবে না। এটা জামিন দেওয়ার গ্রাউন্ড হতে পারে না। তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখানো হয়নি।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘এ শুনানি তো আপনি আগেও করেছেন। নতুন কী আছে সেটা বলুন।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, ‘আগে খালেদা জিয়া অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটা-চলা করতে পারেননি।’

এ সময় আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, ‌‘উনাকে পাঁচ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি রায়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন?’

জবাবে খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আমরা রায়ে অসন্তুষ্ট।’

আদালত বলেন, ‘আপনারা কোনো আপিল করেছেন?’

জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘আমরা রায়ের নথি দেখছি। কেননা এ মামলায় আপিল করার জন্য ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় রয়েছে।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘সোজা কথায় বলেন, আপনারা রায়ের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না?’

জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘এখনো নিইনি, তবে আমরা রায়ে সন্তুষ্ট না।’

এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘উনি তো (খালেদা জিয়া) ফিজিক্যালি ফিট না।’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রাক্তন একজন প্রেসিডেন্টও (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলেন।’

পরে আদালত বলেন, ‘ওই সময় উনার বয়স কত ছিল?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ’উনার বয়স ৬৫ কিংবা ৬৬ হবে।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘উনি তো অনেক সামর্থ্যবান ছিলেন। উনি পরে কারাগার থেকে বের হয়ে বিয়ে করলেন। আল্লাহর রহমতে একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছেন।’ এ সময় বিচারকক্ষে কিছুটা হাসির রোল পড়ে যায়।

এ সময় আদালত বলেন, ‘যাই হোক আমরা আদেশ দিচ্ছি।’

আদালত বলেন, ‘আমরা আইনজীবীদের শুনানিগুলো লিখিত আদেশে দিয়ে দেব। এখানে শুধু আদেশ দিচ্ছি।’

পরে আদালত চারটি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন আদেশ দেন এবং চার মাসের মধ্যে পেপারবুক তৈরির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মার্চ ২০১৮/মেহেদী/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়