ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

হোসনে আরার লাশ দাফনে রায়ের কপির অপেক্ষায় পরিবার

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হোসনে আরার লাশ দাফনে রায়ের কপির অপেক্ষায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনি জটিলতায় ৪ বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে পরে থাকা নীলফামারীর ধর্মান্তরিত হওয়া হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী)  মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায় এখনো নীলফামারী পৌছায়নি। রায়ের কপি না পাওয়ায় লাশ দাফনে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না নীলফামারীর জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মো. নাহিদ হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা এখনো আদেশ পাইনি। আদালতের আদেশ পেলেই লাশ দাফনে পদক্ষেপ নেব।

তবে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানীর)  শ্বশুর জহুরুল মেম্বার বলেন, গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে হাইকোর্টের আদেশের মূল অনুলিপি পাওয়ার পর তারা লাশ দাফনে পদক্ষেপ নেবেন।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আইনি জটিলতায় ৪ বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে পড়ে থাকা নীলফামারীর ধর্মান্তরিত হওয়া হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

রায় প্রদানকারী  বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর সোমবার ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে দুই দিনের মধ্যে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ দাফন করতে বলা হয়।

গত ১২ এপ্রিল হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ  দেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মরদেহ দাফন করতে বলা হয়। নীলফামারীর জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। দাফনের আগে হোসনে আরার (নিপা রানী) লাশ তার বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে  মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সমীর মজুমদার। ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আইনি দ্বন্দ্বে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে তার মরদেহ। এত দিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে নিপার মরদেহটি হাসপাতালের মর্গেই পড়ে আছে। ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনি লড়ায়ে জড়িয়ে পড়েন ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে আসে।

রংপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারেনি।

ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন নিপা-লাজু। এভাবেই কাটছিল লাজু ও নিপা রানী ওরফে হোসনে আরার দিন। কিন্তু বাধ সাধে নিপার পরিবার। নিপা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় লাজুর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে তার পরিবার। এমামলায় লাজুকে নেওয়া হয় কারাগারে। নিপাকে রাখা হয় নিরাপত্তা হেফাজতে। পরে নিপাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয় তার পরিবার। লাজুও জেল খেটে বের হন। কিছু দিন পর লাজু বিষ খেয়ে মারা যান। নিপাও শোকে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এরপর নিপার মরদেহ দাবি করে আদালতে মামলা করে দু’পক্ষই। এ মামলাটি নিম্ন আদালত ঘুরে উচ্চ আদালতে আসে। অবশেষে  উচ্চ  আদালত থেকে সিদ্ধান্ত এল  হোসনে  আরার (নিপা রানী) মরদেহ  ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন করার।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৮/মেহেদী/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়