ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আজাদ, তাবিথ ও বাচ্চুকে দুদকে তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজাদ, তাবিথ ও বাচ্চুকে দুদকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল ও বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পৃথক তলবি নোটিশ পাঠানো হয়।

অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে আবদুল হাই বাচ্চুকে ৭ মে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে পঞ্চমবারের মতো আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ তলব করেছে দুদক।

অপর নোটিশে তাবিথ আউয়ালকে ৮ মে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ এবং ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্যবসায়ী এ কে আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ৯ মে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। এর আগে এ কে আজাদকে একবার তলব করা হলেও অসুস্থতার কারণে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।

দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদিন শিবলী সই করা চিঠিতে হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী এ কে আজাদকে দ্বিতীয় দফায় তলব করা হয়। এর আগে প্রথম চিঠিতে তলব করা হলেও অসুস্থতাজনিতকারণ দেখিয়ে হাজির না হয়ে দুই মাসের সময় চান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী এ কে আজাদের ফনিক্স টাওয়ারের কার্যালয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান করেছিল দুদক। দুদকের হটলাইন ‘ওয়ান জিরো সিক্স’ নম্বরে এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন এই সভাপতির বিরুদ্ধে সরকারি জমি আত্মসাতের অভিযোগ আসলে দুদক পরিচালক যায়েদ হোসেন খানের নেতৃত্বে একটি টিম ফনিক্স টাওয়ারের অফিসে যান। প্রায় এক ঘণ্টা ফিনিক্স টাওয়ারে অবস্থান করে ব্যবসায়ী এ কে আজাদকে না পেয়ে তার অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে চলে আসেন। এর পরপরই ওই অভিযোগসহ অবৈধ সম্পদ ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

সূত্র জানায়, এছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রীতম হোটেলের পাশে কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেট, সিটি জরিপ দাগ নং-১৮১৬, ১৮১২ ও ১৮১৫ দাগের প্রায় ১৫ কাঠা জমি অবৈধভাবে জবরদখল করে তার ওপর স্থাপনা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া ও মিথ্যা ব্যাংক নিলাম দলিল দেখিয়ে এ জমি জবরদখল করেছেন বলে জানা যায়। রমনা মৌজায় সিএস-১৮ এবং ১৯ দাগের রেকর্ডিয় মালিক কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেট। সিটি জরিপ দাগ নম্বর-১৮১৬। জমির পরিমাণ ১৫ কাঠা।

অন‌্যদিকে বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক উপপরিচালক শামসুল আলম তলবি নোটিশ দিয়েছেন।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, স্ট‌্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব‌্যাংক থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাবিথ আউয়ালের ন‌্যাশনাল ব‌্যাংকের অ‌্যাকাউন্ট থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি একই ব‌্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুটি চেকের মাধ‌্যমে উত্তোলন করা এই টাকার মধ‌্যে ৩ কোটি ২৫ লাখ উত্তোলন করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।

আর বেসিক ব‌্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম‌্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে পঞ্চমবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করতে তলব করে চিঠি দিয়েছেন উপপরিচালক শামসুল আলম। এর আগে ব‌্যাংকটির কেলেঙ্কারিতে গত ৬ মার্চ চতুর্থ দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযোগে অস্বীকার করেন তিনি। গত ৮ জানুয়ারি তৃতীয় দফায়, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ও ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। অনিয়মের মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম আটটি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এছাড়া বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয়ে আরো চারটি মামলা করে দুদক।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়