ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

খালেদাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১৭ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য প্রসিকিউশনকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশী বাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত খুরশীদ আলমের আদালত এ আদেশ দেন।

আর যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ আগামী ৫ জুলাই ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব। একই দিনে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলায়ও গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুসহ জামিন শুনানির আদেশের দিন ধার্য ছিল।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। যেহেতু খালেদা জিয়া জেলে আছেন সেজন্য তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হোক এবং তার জামিনের শুনানি গ্রহণ করা হোক। আর খালেদা জিয়া চার মাস ধরে জেলে আছেন। এতদিনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা গেল না।

তারা বলেন, মামলা দুটি জামিন যোগ্যধারা। আর জামিনযোগ্য ধারায় আসামির জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করা হোক বা না হোক আমরা যেকোনো শর্তে তার জামিন চাচ্ছি।

অপরদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, খালেদা জিয়া অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল। ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে। এখন কিভাবে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন। আগে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে হবে।

তিনি বলেন, মামলা দুটি ২০১৬ সালের। তার বিরুদ্ধে আদালত সমন ইস্যু করেন। তিনি আদালতে এসে জামিন নেননি। তখন জামিন নিলে এখন এ অবস্থা হতো না।

জবাবে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। এজন্য তিনি তখন আদালতে আসতে পারেননি। তিনি তখন আসেননি, এজন্য কি তিনি এখন আদালতে আসতে পারবেন না।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম আদেশে বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। আসামিপক্ষ প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুসহ জামিনের আবেদন করেন। প্রসিকিউশন পক্ষ ওয়ারেন্ট মূলে আসামির বিরুদ্ধে যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল তা গ্রহণ করেননি। যা প্রসিকিউশন পক্ষের দায়িত্ব। আসামি জেলহাজতে থাকলে গ্রেপ্তার দেখানোর দায়িত্ব প্রসিকিউশন পক্ষের বা বাদী পক্ষের। আসামি পক্ষের এ ধরনের আবেদন দেয়ার সুযোগ নাই। এজন্য তাদের আবেদন নথিজাত করা হল।

আর কারাগারে থাকা খালেদা জিয়াকে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য প্রসিকিউশনকে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন বিচারক।

ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব আদেশে বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। আসামি কারাগারে থাকলে থানা কিংবা প্রসিকিউশনের আবেদন ব্যতিত আসামিকে গ্রেপ্তার বা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর সুযোগ নাই। তাই আসামিপক্ষের আবেদন নথিভূক্ত করা হলো। আর বাদী আদালতে হাজির না হওয়ায় সময়ের আবেদন মঞ্জুর করা হলো।

গত ১২ এপ্রিল দুই মামলায় মাসুদ আহমেদ তালুকদার কারাগারে থাকা খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুসহ জামিন শুনানির আবেদন করেন। এরপর ২৫ এপ্রিল শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল।

এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে জাকির হোসেন ভূঁইয়া, জিয়া উদ্দিন জিয়া, হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী ‘স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর’ অভিযোগে আদালতে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন। ওইদিন ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম তেজগাঁও থানার ওসিকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় খালেদা জিয়া ও তার স্বামী প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়।

এরপর গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) এবিএম মশিউর রহমান মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর তা আমলে নিয়ে প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত।

প্রচলিত আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের সুযোগ না থাকায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। মামলাটিতে গত বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলাটি করেন। মামলাটিতে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মে ২০১৮/মামুন খান/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়