লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের পদচারণায় সদরঘাট এখন জনসমুদ্র।
বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদরঘাটে লঞ্চযাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে অনেক লঞ্চকে নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
সকাল থেকে ৮০টির বেশি লঞ্চ রাজধানী ত্যাগ করেছে। রাতে ছেড়ে যাবে আরো ডজনখানেক লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে প্রস্তুত রয়েছে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস। যদিও এখনো যাত্রীদের চাপ সামলাতে বিশেষ সার্ভিস প্রয়োজন হয়নি বলে বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) আলমগীর কবীর বলেন, ঈদে সব সময় আমাদের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে হয়। আমাদের সেরকম প্রস্তুতিও রয়েছে। সকালে যাত্রীর স্বাভাবিক চাপ দেখা গেলেও শেষ বেলা যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন রুটে প্রায় একশত লঞ্চ চলছে।
লঞ্চ টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত যাত্রীর কথা বিবেচনা করে এবার পাঁচটি বিশালকার নতুন লঞ্চ নামানো হয়েছে। সেগুলোর প্রত্যেকটি প্রায় দেড় হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। নতুন লঞ্চগুলো হলো- অ্যাডভাঞ্চার-৫, অ্যাডভাঞ্চার-৯, মিতালী-৭, রফরফ-৭, পারাবাত-১১। যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় টার্মিনালে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ২৫০ জন নৌ পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১৫০ জন সদস্য, র্যাবের আটজন করে ১৬ জনের দুটি টিম, বিএনসিসি ক্যাডেটদের ৬০ জন সদস্য, ডিপিডিসির ৩৬ জন সদস্য কাজ করছেন। এছাড়া ৬০ জন বিএনসিসি ক্যাডেট আছেন যাত্রীদের তথ্য সহায়তার জন্য।
এছাড়া বিএনসিসি ও ডিপিডিসি সদস্যরা অসুস্থ যাত্রীদের হুইলচেয়ার বা যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে সহায়তায় নিজেদের নিয়োজিত আছেন। যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেলে বিভিন্ন গেট বন্ধ ও খোলার কাজও করবেন সকল নিরাপত্তা কর্মী ও ক্যাডেটরা। আর আইন অমান্যকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা আইন বা নির্দেশ মানবেন না তাদের জেল ও জরিমানা করবে এসব কোর্ট।
প্রথম শ্রেণির টিকিটের (কেবিন) ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ইতিমধ্যে সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ঈদকে ঘিরে ব্যাপকভাবে কালোবাজারে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় হয়। সেক্ষেত্রে ভাড়া অনেক সময়ে দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণও হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বরিশালগামী যাত্রী মহাতাব উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে কালোবাজারে অনেক বেশি টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক কষ্টে একটি কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি। অতিরিক্ত ভিড়ের বিষয়ে জানতে পেরে দুপুরেই লঞ্চে এসেছি। কারণ, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাদের ছাড়ার কোনো নির্ধারিত কোনো সময় নেই। লঞ্চে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় দেখলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করে।
লঞ্চের ভাড়ার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আসন ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছোট-বড় লঞ্চসমূহে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ডুপ্লেক্স ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। যেখানে দুটো বেড, এসি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ডাইনিং সুবিধা রয়েছে।
দুই বেডের ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এক বেডের সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সোফা কাম বেডের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এখানেও এসি কিংবা ফ্যান ও টিভির সুবিধা রয়েছে। এছাড়া লঞ্চের ডেকেও (লঞ্চের খোলা স্থান) যাত্রা করা যায়। অনেক বড় লঞ্চে কার্পেট দেওয়া রয়েছে। তবে চাদর-বালিশ যাত্রীকে সঙ্গে বহন করতে হয়। এখানে ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন