ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পেট্রোবাংলা ও পিডিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য গ্রহণ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ২৪ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পেট্রোবাংলা ও পিডিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কয়লা আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শামসুল হাসান মিয়ার বক্তব্য নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক ও তদারকি কর্মকর্তা কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিশেষ টিম পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানদের বক্তব্য গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়েছে।

টিমের ওই দুই প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, মূলত অনুসন্ধান কাজে গতি আনতেই পেট্রোবাংলা ও বিপিডিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করা হয়েছে। দুই কর্তৃপক্ষই যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নথিপত্র সরবরাহ করে সে বিষয়ে উভয় চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। উভয় চেয়ারম্যানই দুদককে সহযোগিতার কথা বলেছেন।

এদিকে সকালে দুদক সচিব ড. মুহাম্মদ শামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি হতে জাল জালিয়াতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিকটন খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কাউকে তলব করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনও দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দিবে দুদক।

তিনি বলেন, ‘আমরা ওই পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দিয়েছি, তারাও একটু অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে খতিয়ে আমাদেরকে রিপোর্ট করবেন, এর সঙ্গে কারা জড়িত আছে।’

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাগজে-কলমে বেশি কয়লার মজুত দেখিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খতিয়ে দেখতে গতকাল সোমবার তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলাম।

ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে। যা দুদক আইন অনুযায়ী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক জানায়, ২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরে কয়লা উত্তোলন হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টন। বর্তমানে কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুত থাকার কথা এক লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু বাস্তবে কয়লার মজুত পাওয়া গেছে ১৪ হাজার টনের মতো। এক লাখ ১৬ হাজার টনের মতো কয়লার কোনো হদিস নেই। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র চুরি করে খোলা বাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে।

পিডিবির সূত্র বলছে, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে তিনটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে দুটো পুরনো ও একটি নতুন। পুরনো দুটির প্রতিটি ১২৫ মেগাওয়াটের। তবে এগুলোর বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এক নম্বর ইউনিটটি মেরামতের জন্য বন্ধ রয়েছে। নতুনটির উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৪ মেগাওয়াট। চালু দুটি ইউনিট দিয়ে গত জুন মাসের প্রথম দিকে গড়ে ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল। কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৭ জুন এ দুই ইউনিট থেকে ৩৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ দুটি ইউনিট চালাতে দিনে সাড়ে তিন হাজার টন কয়লা লাগে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কয়লার সরবরাহ হ্রাস পেতে থাকে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদনও কমতে থাকে। ২৫ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ২৩০ মেগাওয়াট। পরে ২৯ জুন থেকে কর্তৃপক্ষ পুরনো ইউনিটটি বন্ধ করে শুধু নতুন ইউনিটটি চালু রাখে। ১৫ জুলাই এই ইউনিট থেকে ১৯০ মেগাওয়াট এবং ১৯ জুলাই শুক্রবার ১৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বর্তমানে যতটুকু মজুত রয়েছে, তা দিয়ে একটি ইউনিট চালালেও আর দু-তিন দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। নতুন করে কয়লা উত্তোলন শুরু হতে পারে আগস্টের শেষে। ফলে প্রায় এক মাস কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

খনির কোল ইয়ার্ড থেকে কয়লা ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কয়লা সরবরাহ না পাওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন রোববার রাতে বন্ধ হয়ে গেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়