ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাবনায় প্রবীণদের এক আনন্দের ঠিকানা

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাবনায় প্রবীণদের এক আনন্দের ঠিকানা

পাবনা প্রতিনিধি: তারা এখন জীবনের শেষ ধাপে। কারো বয়স ৭০ পার হয়েছে, কারো ৮০ পেরিয়েছে। এই বয়সে এসে নিঃসঙ্গ তারা। তাদের কথা চিন্তা করে পাবনা সদরের শ্রীপুরে গড়ে উঠেছে প্রবীণ কল্যাণ ক্লাব।

প্রতিদিন বিকেলে এখানে আড্ডা জমে প্রবীণদের। একটু আনন্দের পরশ নিতে প্রবীণ ক্লাবে ছুটে আসেন তারা।  আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস। আজো এখানে জমে উঠবে প্রবীণদের আড্ডা। দিবসের কারণে হয়তোবা এই আড্ডা একটু অন্যরকম হবে। হয়তোবা থাকবে একটু আলাদা ব্যবস্থাপনা।

পাবনা সদর উপজেলার যে গ্রামটিতে ‘প্রবীণ কল্যাণ ক্লাব’, এ গ্রামেরই বাসিন্দা গিভেন্সি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল। তিনি প্রবীণদের কথা ভেবে, তাদের কিছু সময় ভালো থাকার ভাবনায় এখানে গড়ে তুলেছেন এই ক্লাব।

প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন মহল্লা থেকে প্রাণের টানে প্রবীণেরা ছুটে আসছেন এখানে। পত্রিকা পড়ছেন, করছেন জীবনের সোনালী সময়ের ফেলে আসা গল্প। এভাবেই তাদের অবসরের কিছুটা সময় আনন্দে কাটাচ্ছেন।

ক্লাবে আসা প্রবীণদেরকে ক্লাবের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও চা। যারা পান খান তাদের জন্য এই ব্যবস্থাও করেছেন উদ্যোক্তারা।

প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে এখানে এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে ডায়াবেটিক রোগ নির্নয়, প্রেসার মাপাসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। খুব বেশিদিন চালু হয়নি এই ক্লাবটি।

প্রতিদিন বিকেলের আসর নামাজ শেষে এখানে জড়ো হন স্থানীয় প্রবীণেরা। থাকেন ঘন্টা তিনেক। তারা পরস্পর মেতে ওঠেন তাদের রঙিন সময়ের গল্প কথনে। এদের অনেকেরই পরিবারের সময়ের বাইরেই এযেন এক অন্যরকম ভালো লাগা।
 


প্রবীণ কল্যাণ ক্লাবে আসা ইব্রাহিম হোসেন, আসাদুজ্জামান মন্টু, সাবের সরদার, আব্দুল গণি সহ কয়েকজন প্রবীণের সাথে আলাপকালে তারা জানান, তাদের আসলে বসার কোন জায়গা নেই। বিভিন্ন চায়ের দোকানে এখন দিন দিন বর্তমানের ছেলে ছোকড়াদের যে আচার আচরণ, তাতে অনেক সময় বিব্রত হন তারা। কিছু বলার নেই, বলা যায় না তাই অনেকটা নিরবে বসে থাকেন ইচ্ছে না থাকলেও।

তাদের জন্য এই প্রবীণ ক্লাব এক আনন্দের ঠিকানা হয়ে গেছে। এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের পত্র পত্রিকা তারা পড়ছেন। পরিবারের হাজারো ঝঞ্ঝাটে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তারা। তাই যেটুকু সময় এখানে থাকেন ভালো লাগে তাদের।

এসব প্রবীণদের সেবা দিতে দিন দিন এখানে ছুটে আসছেন পাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে সেবা করছেন এসব প্রবীণদের। পত্রিকা এনে দেওয়া, খাবার দেওয়া, পানি পান করানো এসব কাজ তারা করছেন হাস্যোজ্জল মুখে। তাদের বক্তব্য, এক সময়ে তারাও তো হবেন এমন বৃদ্ধ মানুষ। তাদেরকে সহযোগিতা করলে নাকি ভালো লাগে তাদের।

প্রবীণদের ক্লাবে থাকা চিকিৎসা সেবাদানকারী কর্মী সুমনা খাতুন বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার প্রবীণদের ডায়াবেটিক, প্রেসার মাপাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেন তিনি। একবার যে আসে তাকে আবার একই তারিখে পরের মাসে আসতে বলা হয় চেক আপের জন্য। প্রতি মাসে চেকআপ করা রুটিন ওয়ার্কের মতো।

এই প্রবীণ ক্লাবের উদ্যোক্তার প্রতিনিধি ও স্থানীয় সমন্বয়কারী আবুল বাশার বাবুল জানান, এই প্রবীণ ক্লাব খুব বেশিদিন গড়ে ওঠেনি। তবে তাদের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এখানে সকল কিছুর আয়োজন করা হবে, যাতে প্রবীণেরা উপযোগী বিনোদন পান।

তিনি জানান, এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা খতিব জাহিদ মুকুল এদেশে বৃদ্ধাশ্রম করেছেন। তিনিই দেশের প্রবীণদের কথা ভাবেন। স্থানীয় প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা ও বিনোদনে এই ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, আগামীদিনে এর কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

প্রবীণদের জন্য পাবনার এই ব্যতিক্রমি উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। এখানে ভবিষ্যতে প্রবীণদের জন্য হাসপাতাল করাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনাও দেখছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা।




রাইজিংবিডি/পাবনা/১ অক্টোবর ২০১৮/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়