ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অসুস্থতার অজুহাত : এক দিন পরেই তিতাসের ২ কর্মকর্তাকে ফের তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অসুস্থতার অজুহাত : এক দিন পরেই তিতাসের ২ কর্মকর্তাকে ফের তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক : অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন সপ্তাহ সময় চাওয়ার এক দিন পরেই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের দুই কর্মকর্তাকে ফের তলব করল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাদের দুদকে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন তিতাসের পাইপলাইন ডিজাইন বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাব্বের আহমেদ চৌধুরী এবং ইলেকট্রিক্যাল কোরেশন কন্ট্রোল (ইসিসি) বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান।

কিন্তু অসুস্থতা প্রমাণে যুক্তিসঙ্গত কাগজপত্র পেশ না করায় তাদের সময় না দিয়ে সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ফের তলব করে চিঠি দেওয়া হয়।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এবারের নোটিশ তাদেরকে আগামী ৩ অক্টোবর হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নোটিশ তাদের অফিসের ঠিকানায় পাঠিয়েছেন অনুসন্ধান দলের প্রধান ও দুদকের উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমান।

এর আগে গত গত ২০ সেপ্টেম্বর দুদকের পাঠানো তলবি নোটিশে তাদেরকে ৩০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমানসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ‘কেজি মেপে’ ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানাকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

দুদক ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে টঙ্গী ও গাজীপুরে কর্মরত তিতাসের কয়েকজন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করার পর ওই নতুন অভিযোগ যোগ করে নতুন একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান দলের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

সাংকেতিক ভাষায় ১ কেজি মানে ১ লাখ টাকা। যা গাজীপুর, সাভার, ভালুকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে তিতাসের এমডিসহ শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনে ব্যবহৃত সাংকেতিক ভাষা। কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে বার্তা লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করেছেন।

সম্প্রতি দুদকে আসা এমন অভিযোগে সরকারি একটি নজরদারি সংস্থার তদন্তে তিতাসের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনের খুদে বার্তায় ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। খুদে বার্তাগুলো ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের। অভিযোগ রয়েছে, তিন মাসের চিত্র পাওয়া গেলেও ঘুষের ঘটনা চলমান রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সাব্বের আহমেদ চৌধুরী গাজীপুর বিক্রয় অঞ্চলে এবং মো. আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান টঙ্গী উত্তরের সিস্টেম অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক থাকার সময়ে ঘুষ নিয়েছেন প্রধানত স্থাপনা পুনর্বিন্যাস, গ্রাহকদের অবৈধ গ্যাস-সংযোগ, গ্যাসের অবৈধ লোড বৃদ্ধি, অনুমোদন অতিরিক্ত স্থাপনা ব্যবহারের অবৈধ সুযোগ এবং পছন্দসই পদায়নকে কেন্দ্র করে।

অভিযোগে খুদে বার্তায় ঘুষের আলাপের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে খুদে বার্তার রেকর্ড উল্লেখ করে বলা হয়, গাজীপুরে অবস্থিত এএমসি নিট কম্পোজিট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী প্রদীপ দাসের কাছ থেকে তিতাস কর্মকর্তা সাব্বের আহমেদ চৌধুরীর পরিবার যে ঘুষ নিয়েছে, এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা নেওয়ার একটি ঘটনা ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবরের। ওই দিনে সাব্বের-প্রদীপের খুদে বার্তাগুলোতে ৫০ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে।

একইভাবে গাজীপুরের ভিয়েলাটেক্স লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান থেকেও সাব্বের আহমেদের ঘুষের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখানে খুদে বার্তার বার্তা আদান-প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে। আর যে নম্বরটি ঘুষ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন সাব্বের, গ্রাহক নিবন্ধন ফরম অনুযায়ী, এর নিবন্ধন তার ভাই সাজ্জাদ আহমেদ চৌধুরীর নামে। তিনি সাজ্জাদ ওয়েস্টকেম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ইটিপি কেমিক্যাল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও এমডি। এছাড়া, সাইফুল ইসলাম ও স্বপন নামের তিতাসের তালিকাভুক্ত দুই ঠিকাদারও সাব্বেরকে ঘুষ এনে দেওয়ার কাজে যুক্ত, যার অংশ তারাও।

তথ্যে আরো উঠে আসে, গাজীপুরের চলতি দায়িত্বের মহাব্যবস্থাপক (জিএম, ভিজিল্যান্স) এস এম আবদুল ওয়াদুদ গাজীপুরের বিনোদা টেক্সটাইল থেকে নেন ২০ লাখ টাকা। এদিকে, তিতাসের সঞ্চালন লাইন থেকে এনআরজি এবং এটিঅ্যান্ডটি নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে সংযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সাব্বের-সিদ্দিকুর জুটি।

অন্যদিকে, খুদে বার্তায় ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর বেলা ১টা ১৪ মিনিটে সাব্বের তিতাসের এমডি মীর মশিউর রহমানকে ১৪০ কেজি অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। একইভাবে ওই সময়ের খুদে বার্তায় ইলেকট্রিক্যাল কোরেশন কন্ট্রোল (ইসিসি) বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আবু বকর সিদ্দিকুর রহমানের ৩৬.৫ লাখ টাকা দেওয়ার তথ্য রয়েছে।

অনুরূপভাবে খুদে বার্তায় আরো অনেকের নাম উঠে এসেছে। তাদের নাম জানতে পারলেও পরিচয় যথাযথভাবে জানা যায়নি বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। নামগুলো হলো- সবুর, জাহাঙ্গীর, টেপা, নোমান ও কাদের।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একটি কোম্পানি হচ্ছে তিতাস। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫৬ কিলোমিটার পাইপলাইন থাকা কোম্পানিটির বর্তমানে মোট শিল্পগ্রাহক ৪ হাজার ৬১০। আর ঘুষের অভিযোগ প্রধানত ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পকারখানাগুলোর। কারণ, তিতাসের গ্যাস-সংযোগ পাওয়া বেশিরভাগ কারখানা টঙ্গী ও গাজীপুর অঞ্চলেই।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ অক্টোবর ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়