ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

৩৮ জন রিমান্ডে, ২৭ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৩৮ জন রিমান্ডে, ২৭ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা তিন মামলায় ৩৮ আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর ২৭ আসামির রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবস জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

মামলা তিনটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজন কুমার তালুকদার, শেখ মো. জসিম উদ্দিন এবং কাজী আশরাফুল হক রিমান্ড মঞ্জুরকৃত আসামিদের ১০ দিন করে এবং রিমান্ড নামঞ্জুরকৃত আসামিদের ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অন্য আইনজীবীরা আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের উসকানিতেই এ ঘটনা ঘটেছে। এই সরকারই শেষ সরকার নয়, আরো সরকার আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আসামিদের জামিন দিন। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকারকে এর দায় নিতে হবে। তাই জামিন দিয়ে আজ নজির স্থাপন করুন।

রিমান্ড মঞ্জুরকৃত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতা মনোজ সরকার, নেত্রকোনা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ সাইফুল্লাহ, ছাত্রদল নেতা ফাহিম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান, ছাত্রদল নেতা উৎপল সরকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির কমিটি প্রার্থী সুফিয়ান, জাকির হোসেন, হানিফ উদ্দিন ওরফে রানা, ঢাবির মহসিন হল শাখা ছাত্রদল নেতা মাহবুব মিয়া, আনিসুর রহমান, ছাত্রদলের সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আতিকুর রহমান তালুকদার, মাইনুল হাসান মোহন, আনোয়ারুল হক ও মোহাম্মদ সুরুজ মন্ডলসহ ৩৮ জন।

যাদেরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ হওয়া হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনিছুজ্জামান খান বাবু, ডা. নিজাম উদ্দিন, ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন সদস্য হারুন অর রশিদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাহারুল আলম বাহার, বিএনপির কর্মী আলমগীর হোসেন, সোনাগাজী পৌর বিএনপির সভাপতি হোসেন আহম্মদ, বিএনপির কর্মী তারিকুল ইসলাম, বালিয়াকান্দা যুবদলের সহ-সভাপতি আরিফুজ্জামান, খায়রুল কবির কাজল, বিএনপির কর্মী মুসা আহম্মেদ, আবু বক্কর সিদ্দিক, এস এম নাজমুল হোসেন, মাসুদ রানা, কে এম তারিকুল ইসলাম আরিফ, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে শামীম, রকিব আল মান্নান, সাইফুল আলম গজনবী চয়ন, ছাত্রদল নেতা মো. মোখসেদ আলম জুয়েল, নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদল সভাপতি ফরিদ হোসেন বাবু, জামায়াতের রোকন জাহিদুল ইসলাম মামুন, ছাত্রদল নেতা মো. রুবেল বেপারী, নাগরপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল কবির, ২৭ নং ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান লিপু, দারুসসালাম থানার ৯ নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন স্বপন, চাঁদপুর জেলার দক্ষিণ মতলব থানা থানার কাদেরগাঁও ইউনিয়নের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জিলানী তালুকদার, কাদেরগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহব্বায়ক মো. লিটন মজুমদার ও বিএনপি সদস্য মো. সোহাগ।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা হয়। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত নির্বাচন আচরণবিধিতে ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোডাউন করার নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক হতে ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোডাউন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। এরপর নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে অপর দুটি মিছিল শোডাউন দিয়ে একই দিকে আসতে থাকে এবং এবং সর্বশেষ মির্জা আব্বাস ৮ থেকে ১০ হাজার জনের একটি মিছিল নিয়ে কার্যালয়ে আসেন। তারা নয়াপলন্টস্থ ভিআইপি রোড বন্ধ করে মিছিল ও শোডাউন করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার জন্য তাদের রাস্তার এক লেন ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়। তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি বিএনপি অফিসে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়। অফিসের মাইকের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার বিষয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ঘোষণা দিতে অনুরোধ করা হয়। বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোডে হকস বে নামীয় গাড়ির শো রুমের উত্তর পাশে রাস্তায় আসামিরা বিএনপির পার্টি অফিস থেকে লাঠি-সোটা নিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা কয়েকটি ককটেলও নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা ৬০ লাখ টাকার একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বুধবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তা, দুজন আনসার সদস্যসহ ২৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই ঘটনায় বুধবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়