বুক রিভিউ
‘জারিফের স্কুল’ রাজনৈতিক কিশোর উপন্যাস
সায়েক মাহবুব || রাইজিংবিডি.কম
সায়েক মাহবুব : ‘‘তাপস রায়ের কিশোর উপন্যাস ‘জারিফের স্কুল’ পড়ে কিশোর-কিশোরীরা আনন্দে ভরে উঠবে। এই উপন্যাসে অনেক প্রশ্ন আছে, নানা ঘটনা আছে, যুক্তি দিয়ে ন্যায়-অন্যায় বোঝার বড় দিক আছে। উপন্যাসজুড়ে প্রকৃতির চমৎকার বর্ণনা আছে। বইটি হাতে নিলে ছোটরা শেষ না করে উঠতে পারবে না।’’
বইটির ভূমিকায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এমন মন্তব্য করেছেন। তার সঙ্গে আমি যোগ করতে চাই- ছোটদের পাঠ নেয়ার প্রতি এবং তাদের জানা ও শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বইটি ভূমিকা রাখবে। শিশুরা অবচেতন মন থেকেই যাতে নানা ধরনের পাঠে মনোযোগী হয় এই চিন্তা থেকে বিশাল এক দায়িত্ব লেখক স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
বনের পশুপাখি, কীটপতঙ্গের মজাদার নাম দিয়ে এবং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে রসিকতার সমাহার ঘটিয়ে লেখক উপন্যাসে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তা পাঠে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক। প্রাণিদের স্বাভাবিক চলাফেরা, কথা, ক্ষোভ ইত্যাদি বর্ণনার মাধ্যমে লেখক আমাদেরই সামাজিক, পারিবারিক মূল্যবোধ রূপক অর্থে প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন মানবিক দিক এই উপন্যাসে এমনভাবে উঠে এসেছে যেগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বরং এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর সব শিশু পেতে চায়। তারা এই উপন্যাস থেকে ঘটনার মাধ্যমে সেই উত্তর পাবে যা তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করবে। ‘হিংস্রতা ছোট বড় হওয়ার মাপকাঠি হতে পারে না। সবার আগে আমাদের প্রাণি হতে হবে। প্রাণ থাকলেই প্রাণি হওয়া যায় না। প্রাণের মূল্য বুঝতে হবে। রাখতে হবে সম্মান।’ এটাই সম্ভবত এই উপন্যাসের মূলকথা।
প্রাণিদের চারিত্রিক ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং তাদের পছন্দ-অপছন্দ লেখক সাবলীলভাবে এবং প্রাণবন্ত ও চমৎকার গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। জারিফ মূলত একটি জিরাফের নাম। ঠিক এভাবে উপন্যাসে পাঠক পরিচিত হবেন হাতি, বাঘ, ভালুক, অজগর, খরগোশ, কাঠবেড়ালি, বানরের সঙ্গে। তারাই এই উপন্যাসের পাত্রপাত্রী। তাদের মজার মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে পাঠক জীবন জয়ের বার্তা পাবে। জীবন যুদ্ধে, পাঠক যেন পরাজয় ভুলে সামনে দিকে এগিয়ে যান এবং সমাজ, পরিবেশও যেন তাদের সেই অর্থে সাহায্য করে এই দিকটি প্রকাশ করতে গিয়ে পাঠক মুখোমুখি হবে এই প্রশ্নের: ‘কবে কচ্ছপের কাছে খরগোশ একদিন হেরেছিল, তা সবাই মনে রেখেছে। অথচ খরগোশ জীবনে কতবার কচ্ছপকে হারিয়েছে তা কেউ মনে রাখেনি। সবাই কচ্ছপের সেদিনের জয়টাকেই কেন মনে রেখেছে?’ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, আমরা অন্যের পরাজয় এবং ফেইলিয়র স্টোরি ভুলে গিয়ে তাদের সামনে এগোনোর জন্য উৎসাহিত করি এবং তাদের জয়ের আর প্রতিভার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। প্রতিকূল পরিবেশে জীবন ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো একসঙ্গে দলবেঁধে চলা। ‘ওদের এলাকা। আমাদের এলাকা’ কথাগুলো ভালো শোনায় না। বনে সব প্রাণির সমান অধিকার-এই হলো সমাজতন্ত্র। স্কুল- কলেজে ভাবসম্প্রসারণ আমরা পড়েছি। অথচ লেখক উপন্যাসে এই কোটেশনগুলোর সাবলীল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাও আবার প্রাণির মুখ দিয়ে!
বনে ধ্বনিত হয়- এ বন কার? সবার সবার, সবার। এ প্রসঙ্গে রবি ঠাকুরের সেই গানটি বারবার ধ্বনিত হয় অন্তরে: ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী শর্তে?’ এমন আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর রসভরে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। যেমন: কাক কেন কা কা করে? জিরাফের গলা লম্বা হলো কী করে? গাধা কেন পানি ঘোলা করে খায়? এমন মজার মজার প্রশ্নের প্রাণবন্ত, চমৎকার ও হাস্যরসাত্মক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বইটিতে প্রকৃতির বর্ণনাও পাঠককে মুগ্ধ করবে।
বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন: গৌতম ঘোষ। মূল্য: ১৭৫ টাকা। একুশে গ্রন্থমেলায় পাঞ্জেরীর ১৭ নাম্বার প্যাভেলিয়নে বইটি পাওয়া যাবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন