ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘এখন বিচারের আশা করি না’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এখন বিচারের আশা করি না’

মামুন খান : সাত বছরেও শেষ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত। সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরও তদন্ত কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে-এমন আশা করছেন না সাগরের মা সালেহা মনির ।

২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায়  খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি। ঘটনার পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে ৮৪ মাসে এসে ঠেকেছে। কিন্তু এখনো কী কারণে, কারা খুন করেছে এ তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ, গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) পর বর্তমানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তদন্তেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দু’জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়। তবে প্রায় দুই বছর ধরে ওই দুই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এঅবস্থায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন নিহত সাগরের মা। তবে শিগগিরই তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, এতোদিনেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে পারল না তদন্ত সংস্থা। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে- এমন আশা আর আমি করি না। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়ার অর্থ-শুধু শুধু মনের নেভানো আগুন ফের জ্বালিয়ে দেওয়া। সরকার একটু সহানুভূতি দেখালেই এ হত্যার রহস্য বের হয়ে যেত।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের আমি জানিয়েছি, যতই মহড়া দেওয়া হোক না কেন, এতো ছোট জায়গা দিয়ে গ্রিল কেটে চোর ঢুকবে আমি তা বিশ্বাস করি না। এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ছোটখাট ছিচকা চোরকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হলে তা মানবেন না বলে জানান তিনি।

মামলার বাদী রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হয়ে গেল। এতোদিনেও বিচার তো দূরের কথা কী কারণে, কারা খুন করেছে তাও জানতে পারলাম না। দুই পরিবারের লোকজনই হতাশ। এসব নিয়ে কথা বলতেও আর ভালো লাগে না।

তিনি বলেন, অনেকেই আমার কাছে জানতে চান, আমরা উচ্চ আদালতে যাব কি না। এ হত্যার বিচার পেতে সব ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমরা যেতে আগ্রহী। কিন্তু কোনো ভরসা পাই না। আদৌ কোনো কাজ হবে, এমন আশা এখন আর নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক শহিদার রহমান বলেন, আমি গত বছরের ১১ নভেম্বর মামলার তদন্তভার পেয়েছি। যারা এ মামলা আগে তদন্ত করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মামলার বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, সাগরের মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের কাজ এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না। তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট অনুসারে দুই অজ্ঞাত পুরুষ আসামিকে এখনও খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশা করেন তিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আমাদের মক্কেলরা জড়িত নয়। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আসল অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলকভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন সাগর-রুনি। ঘটনার পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬২ বার সময় নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিনও র‌্যাব তা দাখিল করেনি। এজন্য আদালত আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

এদিকে মামলা দায়েরের পর প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলামকে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম  মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল এ মামলার তদন্তভার র‌্যাববের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯ এপ্রিল র‌্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এ মামলার তদন্তভার পান র‌্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এ কর্মকর্তা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসামি ও সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করে এনে ওই প্রতিবেদন বিস্তারিত পর্যালোচনা করে তদন্ত করেন।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদকে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ২৫ নভেম্বর সহকারী পুলিশ সুপার শহিদার রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তদন্তের ৭ বছরে র‌্যাব আদালতে এ মামলার পাঁচটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রথমে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এরপর ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

মামলাটিতে এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মামুন, মো. কামরুল হাসান অরুন, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনাম আহাম্মদ ওরফে হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান। আসামিদের মধ্যে শেষের দুজন জামিনে ও অপর আসামিরা কারাগারে আছেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়