ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছদ্মনামে বাসা ভাড়া নেন জঙ্গি তানভীর কাদেরী

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছদ্মনামে বাসা ভাড়া নেন জঙ্গি তানভীর কাদেরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রকৃত নাম লুকিয়ে ছদ্মনাম ইসমাঈল জানিয়ে রূপনগরে বাসা ভাড়া নেন জঙ্গি তানভীর কাদেরী। পরবর্তী সময়ে তার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে বাসা ছেড়ে চলে যান তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এন্ড বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় সাক্ষ্যে একথা বলেছেন তানভীর কাদেরী যার বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন সেই বাড়ির মালিক ও কেয়ারটেকার।

এদিন মামলাটিতে ৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এন্ড বেকারিতে জঙ্গি হামলায় গোলাগুলিতে নিহত বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের স্ত্রী রেমকিন, জঙ্গি তানভীর কাদেরী যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন সেই বাসার মালিক নূরজাহান ইসলাম ও কেয়ারটেকার মো. দাঊদ, গুলশানে জঙ্গি হামলার আগে আসামি রিগ্যান যে বাসায় ভাড়া থাকত সেই বাড়ির মালিক ইফতেখার হাসান আবির এবং ৫ বিদেশী বহনকারী প্রাইভটেকার চালক শরীফুল ইসলাম। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৭ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।

এ নিয়ে মামলাটিতে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

কেয়ারটেকার মো. দাঊদ বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুন তারিখে ইসমাঈল নামে এক ব্যক্তি বাসা ভাড়া নেয়। বাসায় ওঠার পর তার কাছে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়ায় ওই মাসের ১১ বা ১২ তারিখে সে বাসা ছেড়ে চলে যায়। পরে পুলিশ তার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে তাকে চিনি কি না? ছবি দেখে তাকে চিনতে পারি। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় সে তার নাম বলেছিল ইসমাঈল। কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি তার প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী।’

বাড়ির মালিক নূরজাহান ইসলাম বলেন, ‘আমি ওমরা করতে সৌদি আরব যাই। তখন আমার বাড়ির দেখাশোনার ভার ছিল কেয়ারটেকার দাঊদের ওপর। দাঊদ আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ইসমাঈল নামে জুন মাসে বাসা ভাড়া নেয়। তার কাছে ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে সে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় তানভীর কাদেরী আত্মহত্যা করেন। তার সাংগঠনিক নাম আবদুল করিম। মারা যাওয়ায় তাকে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সাক্ষী ইফতেখার হাসান আবির বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলার আগে রফিকুল ইসলাম রিগ্যান নামে এক ব্যক্তি আর বাসায় ভাড়া থাকতো। পরবর্তীতে সে চলে যায়। পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি রিগ্যান হলি আর্টিজান মামলার আসামি। তার বাসার দেখভাল করেন কেয়ারটেকার। একারণে তিনি রিগ্যানকে চেনেন না বলে জানান। প্রতি মাসে এসে শুধু ভাড়ার টাকা নিয়ে যান।’

প্রাইভটেকার চালক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি হলি আর্টিজানের সামনে ৫ জন ফরেনারকে নিয়ে আসি। উনাদের হলি আর্টিজানের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি রেজিস্ট্রার খাতায় লিখছিলাম। আনুমানিক ৮ টা ৪০ কি ৪৫ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। লোকজনকে ছোটাছুটি দৌড়াদৌড়ি করতে দেখতে পাই। আমি নিয়ে আসা ওই ৫ ফরেনারকে ফোন দিতে থাকি। তারা আমার ফোন ধরেননি। পরে আমি অফিসে আমার অ্যাডমিন কামালকে ফোন দেই। পরে কামাল এবং মনোহর আমার কাছে আসেন। আমরা সারারাত সেখানে গাড়ীতে বসে থাকি। পরের দিন ২টায় গাড়ী নিয়ে অফিসে যাই। ৫টার দিকে অফিসে গাড়ী জমা দিয়ে বাসায় যাই। পরবর্তীতে টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারি হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ২ পুলিশসহ ২২ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আমি যে ৫ জনকে নিয়ে আসি তারাও মারা যান।

আর ওসি সালাউদ্দিনের স্ত্রী তার স্বামীর লাশ গ্রহণ করেন এ মর্মে সাক্ষ্য দেন।

মামলাটিতে গত ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এরা সবাই কারাগারে আছেন। এদিন তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

মামলাটিতে গত ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমান না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এরআগে গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১মার্চ ২০১৯/মামুন খান/শাহনওেয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়