ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বয়স থামিয়ে দিন মাঝপথেই

শামিমা নাসরীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বয়স থামিয়ে দিন মাঝপথেই

মডেল: দীপালি, ছবি: অপূর্ব খন্দকার

শামিমা নাসরীন : ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে গেলেই কি বয়স বেড়ে যায়? যেতেই পারে তাতে কি হয়েছে? আপনার হাতেই তো রয়েছে তাকে থামিয়ে দেওয়ার চাবিকাঠি।

ইচ্ছে করলেই আপনিও পারেন এই চাবিকাঠির সঠিক ব্যবহার করতে। ধরেই নিন না, বয়স একটি নম্বর মাত্র।

বয়স ধরে রাখতে পুষ্টিবিদ ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান, নিয়মিত ঘুম, ওজন নিয়ন্ত্রণে সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত ত্বকের যত্ন এসব বিষয়ে সচেতনতা দরকার।

অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট একটি বয়সে ত্বকে বলিরেখা পড়া বা ত্বক কুঁচকে যেতেই পারে। তবে তা যত দেরিতে পড়ে বা তা থেকে রক্ষা করা যায় সেটা ভালো। আর এজন্য যত্ন নিতে হবে অনেক আগে থেকেই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক লাইফস্টাইল (জীবনধারা) বা সঠিক পদ্ধতিতে জীবনযাপন করা।’

সঠিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি করা, ত্বকের যত্ন নেওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

* সুষম ডায়েট : আমিষ সমৃদ্ধ যেমন দুধ, ডিম, মাছ জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকলে অনেকটাই সম্ভব বলিরেখা প্রতিরোধ করা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষ গঠনে সহায়ক। তাই ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তামান্না চৌধুরী।

জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সব ফল ও শাক-সবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জারণ প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করে এবং ক্যানসার ও হৃদরোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর মৌলগুলোকে দূর করে। এ ছাড়া সবুজ শাক-সবজি আঁশ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়। মানব দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিগুণ থাকে সবুজ শাক-সবজিতে।

* ক্রাশ ডায়েট না করা : যারা ক্রাশ ডায়েট (খাদ্য তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেড বাদ দেওয়া) করে নিজে নিজে অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করেন তাদের গলা, মুখ বা শরীরের অন্যান্য স্থানের ত্বক কুঁচকে যায়। এতে করে ত্বকের লাবণ্যতা নষ্ট হয়, বয়সের ছাপ পড়ে বা দেখতে বেশি বয়সী মনে হয়। তাই ওজন কামনোর ক্ষেত্রে ব্যালেন্স ডায়েট এবং ধাপ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

* মসলা খাওয়া কমানো : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক রাহিমা সুলতানা রিতা বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য তালিকায় মসলা জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে। তবে মৌরি, তুলসি, জিরা জাতীয় মসলা হজমে সহায়তা করে। তুলসিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অনেক গুণাগুণ রয়েছে তাই এসব খাওয়া যাবে।

এ ছাড়া, তুলসি, মৌরি, জিরা, হলুদ জাতীয় মসলাগুলো কোষের জারণসংক্রান্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

* গ্রিন টি : কোষের ক্ষয় রোধ ও স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন তিন কাপ গ্রিন টি পান ত্বকের জন্য উপকারী। ত্বককে প্রাণবন্ত করতে এটা বিস্ময়করভাবে কাজ করে। গ্রিন টি তরতাজা ভাবকে ফুটিয়ে তোলে।

* কিউই : কিউই ফল ত্বকের বলিরেখা পড়া প্রতিরোধ করে। কিউই ফলের পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০০ গ্রাম ফলের মধ্যে ১৫৪ শতাংশ ভিটামিন সি রয়েছে, যা দুটি লেবু বা কমলালেবুর সমান। ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ক্ষতিকর মৌল দূর করে।

* প্রসাধনী ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ : অযত্ন বা না জানার কারণে বলিরেখা কারো অল্প বয়সে পড়তে পারে, আবার সচেতনভাবে চলার কারণে কারো অনেক পরে পড়তে পারে বলেও জানান তামান্না চৌধুরী। তার মতে, বলিরেখা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে বয়োঃসন্ধিকাল থেকেই রোদে বের হলে সানস্ক্রিন লাগানো এবং সোপ-ফ্রি (ক্ষারমুক্ত) ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া শুষ্কতার কারণে ত্বকে বলিরেখা পড়তে পারে বা চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। শুষ্কতা দূর করতে প্রচুর পরিমাণ পানি পানের পাশাপাশি যার যেমন ত্বক সে অনুযায়ী ময়েশ্চার ব্যবহার করতে হবে। এতে মুখ মসৃণ থাকে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের ত্বক অনুযায়ী এসব নির্বাচন করতে হবে।

* মুখভঙ্গি বা কথা বলার অভ্যাসে সচেতনতা : কেউ কেউ কথা বলার সময় কপাল কুঁচকানো বা বিভিন্ন রকম মুখভঙ্গি করে। এসব বিষয়েও ছোটবেলা থেকেই সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তামান্না চৌধুরী। তিনি বলেন, কপাল কুঁচকে কথা বলা বা এ জাতীয় অভ্যাসের কারণে কপালের চামড়া, চোখের কোণে বা মুখমণ্ডলের বিভিন্ন অংশের চামড়া অল্প বয়সেই কুঁচকে যায়।

* মানসিক চাপমুক্ত থাকা : মানসিক চাপ ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত ঘুম সুন্দর ও স্বাস্থ্যেজ্জ্বল ত্বকের জন্য অত্যন্ত দরকারী। পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ভালো ডায়েট ও ভালো ময়েশ্চার ব্যবহার করার পরও যদি কেউ দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, তাহলে তার বলিরেখা ঠেকানো মুশকিল। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা বা না ঘুমালে বলিরেখা তাড়াতাড়ি পড়বে। এ কারণে দৈনিক আট ঘণ্টা সুনিদ্রা অবশ্যই দরকার।

মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য ইয়োগা, মেডিটেশন ও নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক রাহিমা সুলতানা রিতা।

* রাসায়নিক ব্যবহার বর্জন : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিরেখা, ত্বকের শুষ্কতা, চামড়া কুঁচকানো, ত্বকে কালো দাগসহ অনেক সমস্যা সঙ্গী হয়। তবে এসব সমস্যা শুধু বয়স বাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সঠিক জীবনধারা অনুসরণ না করলে এবং ত্বকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করলে, যেকোনো বয়সে ত্বকে এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যতটা সম্ভব রাসায়নিক পদার্থ বর্জন করতে হবে উল্লেখ করে রাহিমা সুলতানা বলেন, ত্বক খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। দুধ, দুধের সর, মধু এসব প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয়। গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে দুধ।

এ ছাড়া লাল আটা, সয়াবিন, ডাল খুব ভালো পরিষ্কারক। একই সঙ্গে শুষ্কতা দূর করতে নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েল বা বেবি ওয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এসএন/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়