ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

১০টি মৌলিক সত্য যা জীবন বদলে দেবে

জামশেদ আলম রনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:২৫, ১১ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১০টি মৌলিক সত্য যা জীবন বদলে দেবে

প্রতীকী ছবি

জামশেদ আলম রনি : জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারানো কতটা সহজ তা খুবই বিস্ময়কর। জীবনের সবচেয়ে ভালো জিনিস সহজে আসে না, নিজেকে যত্নের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়া নিশ্চিত একটি মাঝামাঝি পথ।

সক্রেটিস এটি ভালো বলেছেন: ‘অপরীক্ষিত জীবন মূল্যবান বেঁচে থাকা নয়’। সক্রেটিসের পর্যবেক্ষণটি ব্যবসার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এরিক স্মিট যখন গুগলের সিইও ছিলেন, তখন তিনি একটি সেরা উক্তি করেছেন, ‘আমরা কোম্পানি চালাই প্রশ্নের ওপর নির্ভর করে, উত্তরের ওপর নয়।’

জীবন এবং ব্যবসা প্রশ্নের ওপর চলে, উত্তরের ওপর নয়। আপনার নিজেকে নিয়মিতভাবে জিজ্ঞাসা করা উচিত যদি আপনি সঠিক পথে যেতে চান।

জীবনের অনেক অপরিহার্য সত্যের পুণরাবৃত্তি প্রয়োজন। যেগুলো মনে করলে সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সাহায্য করবে। এসব সত্যগুলোর ব্যাপারে কুশলী হন যা আপনাকে নিশ্চিতভাবেই অতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান করবে।

বড় বড় সাফল্যগুলো ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরেই আসে

 

আপনি কখনো সত্যিকার সাফল্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন না, যতক্ষণ না ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করা শিখছেন। আপনি যখন ভুল পথে আছেন তখন আপনার ভুলগুলো সফলতার পথ তৈরি করে দেবে। বড় বড় সাফল্যগুলো সাধারণত আসে যখন আপনি সবচেয়ে বেশি হতাশ থাকেন। এই হতাশা আপনাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে, বক্সের বাইরে তাকাতে এবং সমাধান খুঁজতে জোর প্রয়োগ করবে। সফলতার জন্য ধৈর্য লাগে।

ব্যস্ত থাকা মানেই উৎপাদনশীল থাকা নয়

 

আপনার চারপাশের সবার দিকে লক্ষ্য করুন। তাদেরকে এতোটাই ব্যস্ত মনে হচ্ছে যে, সাক্ষাতের পর সাক্ষাত এবং ইমেইল বন্ধ করতে ব্যস্ত। তা স্বত্বেও তাদের মধ্যে কতজন উৎপাদনশীল, সত্যিই উচ্চ পর্যায়ে সফল?

ঘুরাঘুরি এবং ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমেই সফলতা আসে না। এটি আসে আপনার দৃষ্টিপাত থেকে, দক্ষতার সঙ্গে আপনার সময়ের ব্যবহার এবং উৎপাদনশীলতা থেকে। অন্য সবার মতো আপনিও প্রতিদিন একই সময় পান। বিজ্ঞতার সঙ্গেই এটি ব্যবহার করুন। সবশেষে শ্রমের ফলাফল মূল্যায়ন করুন, প্রচেষ্টার নয়। আপনার নিবেদিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করুন যেটি ফলাফল বয়ে আনবে।

আপনি শুধু তাদের সঙ্গে সংযুক্ত যাদের সঙ্গে আপনি ভালো

যারা আপনাকে ভালো অবস্থানে দেখতে চায়, আপনাকে অনুপ্রাণিত করে তাদেরকে আপনার চারপাশ ঘিরে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্ত যারা আপনাকে পেছনে টেনে নেয় তাদের কি খবর? কেন তাদেরকে আপনার জীবনের অংশ হতে দেন?

যারা আপনাকে মূল্যহীন করে, উদ্বিগ্ন ও নিরুৎসাহিত করে তারা আপনার সময় নষ্ট করছে। হতে আপনাকে তাদের মতো করে তৈরি করে। এই প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হতে জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। তাদেরকে বাদ দিন।

যে জীবন আপনি সৃষ্টি করেছেন সে জীবনেই আপনার বসবাস

আপনি পরিস্থিতির শিকার নন। আপনার মূল্যবোধ এবং আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কেউ আপনাকে জোর প্রয়োগ করতে পারে না। যে পরিস্থিতিতে আপনি আজ বাস করছেন সেটি আপনার সৃষ্টি। একইভাবে আপনার ভবিষ্যতও সম্পূর্ণভাবে আপনার ওপর। যদি আপনি আটকা বোধ করেন তার মানে লক্ষ্য অর্জনে এবং আপনার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিতে ভয় পান আপনি। কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে মনে রাখবেন, মইয়ের তলানি হওয়া অপেক্ষাকৃত ভালো, যেটির শীর্ষে আপনি আরোহন করতে চান না সেটি অপেক্ষা।

ভয় হচ্ছে অনুতাপের একটা বড় উৎস

যখন সবকিছু বলা হয়েছে এবং করা হয়েছে তখন যে সুযোগটি আপনি গ্রহণ করেননি তার জন্য ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে বেশি অনুতাপ হবে। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না।

অনেকেই বলে, এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার আর কি ঘটতে পারে? কিন্তু এটা কি আপনাকে মেরে ফেলবে? মৃত্যু তবুও খারাপ জিনিস না যেটি আপনার সঙ্গে ঘটতে পারে। সবচেয়ে খারাপ যে ব্যাপারটি আপনার সঙ্গে ঘটতে পারে তা হলো আপনি জীবিত থাকা স্বত্ত্বেও আপনাকে মৃত্যুর অনুমতি দেয়া!

ক্ষমা করার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না

জীবন অনেক বাঁধামুক্তভাবে যায়, যারা ক্ষমা চাননি তাদেরকেও ক্ষমা করে দেওয়ার পর। অসন্তোষ থেকে নেতিবাচক স্মৃতি, আপনার বর্তমান সুখ নষ্ট করে। ঘৃণা এবং ক্ষোভ একটি মানসিক প্যারাসাইট যা আপনার জীবনে আনন্দ ধ্বংস করে।

অসন্তোষ থেকে সৃষ্টি নেতিবাচক আবেগ আপনার শরীরে চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের চাপ আপনার স্বাস্থ্যের মারাত্মক হানি ঘটাতে পারে। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন, চাপ থেকে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ ঘটে।

যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করে দেন, এটা শুধু তাদের কাজকে ক্ষমা করে না, তাদের দীর্ঘস্থায়ী শিকার হওয়া থেকে আপনাকে মুক্ত করে।

মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকুন

আপনার পূর্ণ সম্ভাবনার কাছে ততক্ষণ পযন্ত পৌঁছতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি বর্তমানে থেকে জীবনকে শিখছেন। কোনো অপরাধবোধই আপনার অতীত বদলাতে পারবে না, কোনো উদ্বিগ্নতাই আপনার ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে না। সুখী হওয়া অসম্ভব যদি আপনি বাস্তবতার (ভালো অথবা খারাপ) সেই মুহূর্ত মেনে নিতে না পারেন।

আপনার জীবনের মুহূর্ত জীবন্ত করতে দুটি জিনিস অবশ্যই করতে হবে:

১. আপনার অতীতকে গ্রহণ করুন। আপনি যদি অতীতের সঙ্গে শান্তি স্থাপন না করেন তবে এটি কখনো আপনাকে ত্যাগ করবে না। যদি তা করেন তবে এটি আপনার ভবিষ্যত তৈরি করবে।

২. ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে গ্রহণ করুন। এখানে উদ্বিগ্নতার কোনো স্থান নেই। মার্ক টোয়েন একবার বলেন, ‘উদ্বিগ্নতা হচ্ছে আপনি ঋণী না হয়েও ঋণ পরিশোধ করা।’

আপনার স্ব-মূল্য ভেতর থেকেই আসতে হবে

আপনার আনন্দ এবং সন্তষ্টির অনুভূতি অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে তুলনা থেকেই উদ্ভূত হয়, আপনি তখন আর নিজের নিয়তির মালিক থাকেন না। কোনো কিছু করে আপনি যখন ভালো অনুভব করেন তখন কারো মতামত কিংবা শিক্ষাদীক্ষা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। অন্যরা আপনার বিষয়ে কি ভাবছে সেটি পাত্তা না দিয়ে একটি বিষয় নিশ্চিত থাকুন, আপনি কখনোই ততটা ভালো নয়, আবার ততটাই খারাপ নয় যেটি তারা বলছে।

জীবন সংক্ষিপ্ত

আমরা কেউই আগামীকালের নিশ্চয়তা দিতে পারি না। তা স্বত্ত্বেও কেউ যখন অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যায়, তখন আমাদের জীবনের হিসাব নিকাশ করি। আসলে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কিভাবে আমাদের সময় ব্যয় করি এবং লোকজনের সঙ্গে আচরণ করি। সকালে ঘুম থেকে উঠলে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন আজকের দিনটি আপনার জন্য উপহার এবং এই উপহারের যথাযথ মূলায়ন করতে আপনি বাধ্য থাকবেন।

পরিবর্তন অনিবার্য-এটিকে মেনে নিন

শুধুমাত্র যখন আপনি পরিবর্তন আলিঙ্গন করতে পারবেন তখনই এর মধ্যে ভালো খুঁজে পাবেন। পরিবর্তন যে সুযোগ করে, সেটিকে স্বীকৃতি দিতে এবং পুঁজি করতে আপনার খোলা মন প্রয়োজন। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। যখন সবকিছু ভালোভাবে এগোচ্ছে তার প্রশংসা করুন এবং সেটি উপভোগ করুন যেহেতু তা পরিবর্তন হতে আবদ্ধ। আপনি যদি সর্বদা অধিক কিছু, ভালো কিছু খোঁজ করেন এবং ভাবেন এটি আপনাকে সন্তষ্ট করবে তাহলে সেটি চলে যাওয়ার আগে আপনি মুহূর্তটি কখনোই যথেষ্ট উপভোগ করতে পারবেন না।

তথ্যসূত্র: হাফিংটন পোস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়