ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাবা যখন অবসরে

আফরোজা জাহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ১৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবা যখন অবসরে

প্রতীকী ছবি

আফরোজা জাহান : জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ অবসর। কর্মজীবি মানুষদের জীবনের এই সময়টা আসবেই।

পরিবারের গৃহকর্তা বা বাবা, যারা অবসরে যান সেই সময়টা কিছু কিছু কারণে তাদের জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জ এর মতো। একাকিত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থান, পরিবারে নিজের গুরুত্ব নিয়ে হীনমন্যতা এমন অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যান তারা। নারীদের তুলনায় এসব সমস্যার সম্মুখীন হয় বেশি পুরুষেরা।

তাই পরিবারের গৃহকর্তা বা বাবা অবসরে গেলে পরিবারের সদস্যদের কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে পদক্ষেপ। এমনই কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আজকের আয়োজন।

নিসঃঙ্গতা দূর করা
অবসরটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একেবারে অবসরে চলে যাওয়াটা অনেকেই মানসিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না। প্রতিদিনের রোজকার ব্যস্ততাতে অভ্যস্থ মানুষটা তখন নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিঃসঙ্গতা ভাবে। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রথম কাজ তার মনে এই অনুভূতিটা যেন জন্ম না নেয়। আর এই ভূমিকাটা পালন করতে হবে সন্তানদেরই। সন্তানদের দৈনন্দিন যার যার ব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় বাবাকে দেওয়া উচিত। তার পাশে বসে তার সঙ্গে গল্প করুন, খবর দেখুন। বাবা দূরে থাকলে প্রতিদিন কয়েকবার তাকে কল দিন, তার খোঁজ নিন।

বাবারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাপা স্বভাবের হয়। তাই একা লাগলেও মুখ ফুটে হয়তো বলবে না। তাই সন্তানদেরই তার পাশে থাকার দায়িত্ব অন্য সদস্যদের চেয়ে বেশি।

গুরুত্ব দেওয়া
অবসর নেওয়ার পর অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগেন যে, এখন সে পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করতে পারছে না তাই তার গুরুত্ব কমে গেছে বা নাই। এই হীনমন্যতা যেন কখনোই গড়ে না উঠে। সেজন্য বাবা অবসরে যাওয়ার পরও আগের মতোই সকল ক্ষেত্রে তার কথাকে মন দিয়ে শুনলে বা গুরুত্ব দিলে তার মনে হীনমন্যতা গড়ে উঠলেও তা দূর হয়ে যাবে। তাকে এটা উপলব্ধি করাতে হবে, সন্তানের কাছে বাবার গুরুত্ব সব সময়ই অনেক এবং একই রকম। তার কর্ম থাকা বা না থাকা এখানে প্রভাব ফেলে না।

অর্থনৈতিক ভাবে সমর্থন করা
যার কষ্টের উপার্জনে পরিবারের সব কিছু ঠিকঠাক মতো চলতো, সেই মানুষটা অবসরে গেলে সন্তানদের উচিত বাবাকে আর্থিকভাবে সমর্থন দেওয়া। বাবার কি প্রয়োজন তা জেনে তা পূরণ করা। যে মানুষটা সন্তানের সকল আবদার নির্দ্বিধায় পূরণ করে গিয়েছে সেই মানুষটা সন্তানদের কাছে কিছু চাইতে লজ্জাবোধ করতে পারে। তাই বাবা না চাইলেও প্রতিমাসে কিছু টাকা তার হাতে দিন। নয়তো তার নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তাকে বলে দিন, যখন যা প্রয়োজন সেখান থেকে তুলে নিতে। এমন ব্যবস্থা করলে প্রয়োজনও পূরণ হবে, সন্তানের কাছে চাইতে লজ্জা পাবে না বাবা।

কাজে ব্যস্ত রাখা
কর্ম ব্যস্ত থেকে একেবারে বাসায় বসে থাকলে শারীরিক, মানসিক অনেক রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। তাই বাবাকে তার সাধ্য আর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজে ব্যস্ত থাকতে থাকার পরামর্শ ও উৎসাহ দিন। বই পড়ার আগ্রহ থাকতে তার জন্য ঘরের কোণে সেলফ বানিয়ে নতুন নতুন বই কিনে দিতে পারেন। কোনো কোনো পাড়ায় বয়স্কদের ক্লাব থাকে, বাবাকে সেখানে যোগ করিয়ে দিন। নিজের বয়সি মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করলে মন ভালো থাকবে। এছাড়াও সমাজসেবামূলক কাজ বা ঘরের টুকটাক কাজ শরীর আর মন দুটোই সতেজ আর সচল রাখবে।

অনেক দিনের অভ্যস্ততা থেকে হুট করে অবসর জীবন সবাই কিন্তু চাইলেও মেনে নিতে পারে না। মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এই সময় বাবার পাশে থাকুন, মানসিক ভাবে তার শক্তি যোগান। যেমন ছায়া হয়ে শক্তি যুগিয়েছিল এই মানুষটা আপনার জীবনে। আজ বাবার এই অবসর জীবনে আপনি হোন ছায়াসাথী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়