ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিশুর সামনে ঝগড়া?

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ২৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুর সামনে ঝগড়া?

প্রতীকী

ঝুমকি বসু : দুটো মানুষ যখন এক সঙ্গে দিনযাপন করছে, তখন তাদের মধ্যে মতের অমিল বা ঝগড়া হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

পরস্পরের ব্যক্তিত্বের সংঘাত, শ্বশুরবাড়ি বনাম বাবার বাড়ি, শ্বশুর-শাশুড়ি, টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি কারণে সংসার কখনো কখনো হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। এই ঝগড়া অনেক সময় চলে যায় সীমারেখার বাইরেও।

আপনারা যদি হন মা-বাবা, তখন এই সীমারেখাটা কিন্তু খুব জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আপনাদের হার-জিতের মাশুল গুনতে হয় আপনার নিস্পাপ কুঁড়িটিকে, যাকে আলো, জল ও সার দিয়ে বড় করে তোলার দায়িত্ব আপনার। বাবা-মায়ের দাম্পত্য অশান্তি অচিরেই সেই কুঁড়িটিকে ঠেলে দেয় অন্ধকারের দিকে।

সন্তানের ওপর প্রভাব
* বাবা-মায়ের রোজকার কলহ, চেঁচামেচি, সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শিশুদের মনে নানারকম প্রভাব ফেলে। তারা অকারণ জেদ করতে থাকে। অনেকসময় অল্পতেই রেগে যায়। চিৎকার করে কথা বলে, কখনো খুব সহজে ভয় পেয়ে যায়।

* তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় না। সেই সঙ্গে উৎকণ্ঠা, ডিপ্রেশনের স্বীকার হয় তারা। স্কুলের পরিবেশেও মানিয়ে নিতে অনেক সময় তাদের অসুবিধা হয়।

* বাবা-মায়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে, শিশুরা ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। খুব অসহায় মনে করে নিজেদের। ঝগড়া দেখে দেখে ক্লান্ত শিশুটি বুঝতেও পারে না, সে কার পক্ষ নেবে। এসব কারণে ছোট থেকেই সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। এতে করে ভবিষ্যতেও তার সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে।

* শিশুরা তার ব্যবহারের প্রথম পাঠ পায় বাবা-মায়ের কাছ থেকেই। পরস্পরের প্রতি অশ্রদ্ধা, অন্যের মতকে গুরুত্ব না দেওয়া, এসব দেখে দেখে যখন সে বড় হয়ে ওঠে তখন ভবিষ্যতে তার ব্যক্তিগত জীবনের আচরণেও সেটার ছাপ থাকে।

* এই তিক্ত পরিবেশে বড় হতে হতে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অশ্রদ্ধাও জন্মায়।

আপনার জন্য পরামর্শ
* হতে পারে আপনাদের মধ্যে মতের অনেক অমিল রয়েছে কিংবা হয়তো আপনাদের বেশ মিল। কিন্তু ঝগড়া হলে দুজনের কারোরই কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। যতোই রাগ হোক না কেন, সন্তানের মুখ চেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যজনের কাছ থেকে সংযত হওয়ার আশা না করে, আগে নিজে শান্ত হন। একজন শান্ত থাকলে, দেখবেন ঝগড়া বন্ধ হয়ে যাবে। কিংবা প্রয়োজনে নিজেদের ঝামেলা সন্তানের আড়ালে অন্য কোথাও বসে মিটিয়ে ফেলুন। কিন্তু কখনোই সন্তানকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে ঝগড়া করবেন না।

* বাবা-মায়ের একজন যদি অন্যমনস্ক ভাবেও কোনো একজন সম্পর্কে খারাপ কিছু শেখান, তাহলেও তা সন্তানের আত্মসম্মানবোধ গড়ে উঠতে সমস্যা করবে।

* কাজের চাপ, পরস্পরকে সময় না দেওয়া বা বোঝাপড়ার অভাব ইত্যাদি কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে কথাবার্তা কম হয়। আর এর কারণে দুজনের ভেতর অশান্তিও বাড়তে থাকে। তাই নিজেদের সম্পর্ক ভালো রাখতে পরস্পরকে সময় দিন।

* আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হলে সন্তানকে কোনো একজনের দিকে টানার চেষ্টা বা তার কাছ থেকে সাপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এর ফলে সে অন্যজনের কাছ থেকে মানসিকভাবে দূরে চলে যায়, যা একটা সুন্দর পরিবারের ছন্দপতন ঘটায়।

* যদি আপনাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্ভব না হয়, তাহলে সন্তানকে শান্তভাবে তার একটা আভাস দিন। কিন্তু তাকে বিস্তারিত বলতে যাবেন না। সম্পর্ক যে ভালো নেই কিংবা আপনারা তা শোধরানোর চেষ্টা করছেন, শুধু তাকে সেটা বুঝিয়ে দিন। কারণ যদি আপনাদের বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হয়, তাহলে তা যেন সন্তানের কাছে বিরাট আঘাত না হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে এটাও বোঝান যে আপনারা দুজনই তার পাশে আছেন।

* সবসময় মনে রাখবেন, সন্তানকে সুস্থ মনের একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই বাবা-মা দুজনকেই তার পাশে প্রয়োজন। তাই ছোটখাটো অশান্তি, ইগো দূরে সরিয়ে রেখে সন্তানের কথাই ভাবুন। তাতে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মটি সুস্থ-স্বাভাবিক একজন মানুষ হয়ে সমাজে বেড়ে উঠবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়