ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘এফডিসিতে আর আসবো না, যদি…’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এফডিসিতে আর আসবো না, যদি…’

বাপ্পারাজ

বিনোদন প্রতিবেদক : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। গত ২১ আগস্ট সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। আজ শনিবার বিএফডিসিতে তার স্মরণে শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার।

সকাল ১১টায় সদ্য প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে শোকসভার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নায়করাজের বড় ছেলে চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আর এফডিসিতে আসবো না যদি আপনারা সকল নিষেধাজ্ঞা, মামলা তুলে না নেন। হয়তো এটাই হবে আপনাদের সঙ্গে শেষ দেখা। আমিও হয় তো ভুল করে অনেক কথা বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। ’ 

বাপ্পারাজ বলেন, ‘বলা হয়েছে, রাজ্জাক সাহেব সিনেমা হলের অনুমতি নিয়ে মার্কেট করছেন। এটা ভুল কথা। উনি মার্কেটের অনুমতি নিয়েই মার্কেট করেছেন। এরপর সিনেমা হল নির্মাণ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু রাজউক থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া আমাদের বিল্ডিংয়ে অনেকগুলো পিলার ছিল, এগুলো ভেঙ্গে সিনেমা হল নির্মাণ করা আর হয়ে ওঠেনি। রাজ্জাক সাহেব দুই নম্বরি করে মার্কেট বানাননি, তিনি এক নম্বর করেই মার্কেট বানিয়েছেন। রাজ্জাক সাহেব দুই নম্বর করলে উত্তরায় মার্কেট আরো কয়েকটা থাকত। ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’ আরো কয়েকটা থাকত।’

‘আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব বলে বড় একটা বাড়ি তৈরি করেছি। ব্যবসায় লোকসান করার কারণে ব্যাংকে মাত্র চার কোটি টাকা লোন ছিল। আমরা বাড়ি বিক্রি করে লোনের টাকা শোধ করে দিয়েছি। আমরা চাইলেই টাকাগুলো মেরে দিতে পারতাম। মানুষ লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে কথা হয় না। রাজ্জাক সাহেব মেরে দিলে অনেক কথা হতো। বাংলাদেশের মানুষ আমার আব্বাকে যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি যে শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়েছে এটা যদি তিনি বেঁচে থাকতে দেখে যেতে পারতেন তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যেতেন। দেশের মানুষের এতটা ভালোবাসা তিনি হয়তো সহ্য করতে পারতেন না। সেদিন দেখেছি গুলজার ভাই একটি চ্যানেলে বলেছেন, রাজ্জাক সাহেবকে ফলো করেন আর কিছুই লাগবে না। এখন অনেকেই এ কথাগুলো বলছেন। ভালো কথা। রাজ্জাক সাহেব কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিকে ভাগ করে যাননি। আমাদের উত্থান-পতন এখান থেকেই।’ বলেন বাপ্পারাজ।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আজ একটা দাবি নিয়ে এসেছি- আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খুব খারাপ। আমি বাবাকে দাফন করে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি শাকিব ও জায়েদ দাঁড়িয়ে আছে। আমার প্রথম কথা ছিল তোমরা দুজন গলাগালি ধরো কোনোরকম বিবাদ করো না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বাইরের লোকজনের হাতে চলে গিয়েছে। তারা যুদ্ধ লাগিয়ে তালি বাজাচ্ছে। সবার কাছে হাত জোড় করে বলি, আমার বাবা চলে গিয়েছেন। তার সম্মানে এই ব্যান খেলাটা বন্ধ করুন।  আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের বুকে তুলে নেয়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলি। যুদ্ধ করতে হলে পরিবারের বাইরের লোকজনের সঙ্গে করবো।’

‘অনেকেই বলেন শাকিব খানকে ডাকলে আসে না- বেয়াদব ইত্যাদি। সুচন্দা ম্যাডাম যদি শাকিবকে বলেন, তুমি পরিচালক সমিতিতে আসো। শাকিবের বাপের ক্ষমতা নেই না এসে পারবে। এটার জন্য মামলা করার দরকার নেই। উকিল নেটিশ পাঠানোর দরকার হয় না। পুলিশ পাঠানোর দরকার হয় না। যারা বেঁচে আছেন তাদের সম্মান দেবেন। রাজ্জাক সাহেব কখনো বিরোধ করেননি। বহিষ্কার করেননি। তার সম্মানে ক্ষমা করে দেন। আমিও ভুল করেছি। আমাকেও মাফ করে দেন। কাল থেকে সকল বহিষ্কার তুলে নেন। পরিবার কখনো কাউকে বহিষ্কার করে না। শাসন করে।’  

 

শোকসভায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের গুণী ব্যক্তিবর্গসহ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। শোকসভা ছাড়াও দিনব্যাপী নায়করাজকে নিয়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এ কিংবদন্তি অভিনেতা।


দুই দফা জানাজা শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। প্রথমে দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’। সেই থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি কখনো।

নায়ক রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- অবুঝ মন, ময়নামতি, অশিক্ষিত, ঝড়ের পাখি, রংবাজ, বদনাম, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, দুই পয়সার আলতা ইত্যাদি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ আগস্ট ২০১৭/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়