ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কীভাবে বুঝবেন শিশু যৌন হয়রানির শিকার

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কীভাবে বুঝবেন শিশু যৌন হয়রানির শিকার

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : কিছুতেই স্কুলে যেতে চায় না মেঘা। সকালে যখন মা ওকে স্কুলের জন্য তৈরি করতে যায়, তখনই মেয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। হাত-পা ছোড়াছুড়ি, অঝোরে কান্না আর শেষে ৭ বছরের মেয়েটা একদমই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। নাজিয়াকেও সকালে অফিসে যেতে হয়, তাই মেয়ের পেছনে এত সময় ব্যয় করতেও পারে না। আর জাহিদ তো নিজের কাজে এতই ব্যস্ত যে এসব বিষয়ে একটুও মাথা ঘামাতে নারাজ। মেয়েটা আজকাল কেমন মনমরা হয়ে থাকে।

নাজিয়ার এক বান্ধবী পরামর্শ দিল মেয়েকে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে। মেঘার সঙ্গে ডাক্তার প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা বললেন। এরপর ডাক্তারের মুখ থেকে নাজিয়া যা শুনতে পেল তাতে ওর মাথা ঘুরতে লাগলো। মেঘার স্কুলের পিয়ন প্রায় ১ মাস ধরে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি চালাচ্ছে ওর উপর। অফিসে মাঝে মাঝে কাজে আটকা পড়তে হয় নাজিয়ার। আর তখন মেঘাকে স্কুল থেকে নিতেও দেরি হয়ে যায়। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে স্কুলের পিয়ন। এই কথা কাউকে বললে ওকে মেরে ফেলারও ভয় দেখিয়েছে। তাই মেঘা ভয়ে আর স্কুলেই যেতে চাইছে না।

মেঘা একা নয়। আমাদের চারপাশে অনেক মেঘাই শিকার হচ্ছে এমন বিকৃতমনষ্কতার। এই বিকৃতমনষ্ক মানুষদের বলা হয় পিডোফিল। পরিবার ও স্কুলের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আবরণ ভেদ করেও পিডোফিলরা আক্রমণ করে শিশুদের। এরা ছড়িয়ে আছে আমাদের আশেপাশেই, শুধু চিনে নেবার অপেক্ষা।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান কোনো পিডোফিলের আক্রমণের শিকার কি না আর তাকে বাঁচাবেনইবা কিভাবে? আপনার জন্য রয়েছে আজ কিছু জরুরি পরামর্শ।

* শিশুদের গুড টাচ এবং ব্যাড টাচের পার্থক্য বোঝানো খুব জরুরি। শিশুকে বোঝান, যে স্পর্শ ওকে ব্যথা দেয় বা অস্বস্তিতে ফেলে তার থেকে দূরে থাকতে। 

* আপনি যদি দেখেন কোনো একটি বিশেষ মানুষের সামনে আসতে শিশু ভয় পাচ্ছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেই কারণ জানার চেষ্টা করবেন।

* কারো সঙ্গে শিশুকে একা ঘুরতে যেতে দেবেন না।

* ঘন ঘন উপহার দেওয়ার অনুমতি কাউকে দেবেন না।

* শিশুদের একা পাবলিক টয়লেটে বা কারো বাড়িতে পাঠাবেন না।

* বাড়ির বাইরে থাকলে সবসময় সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।

* কারো স্পর্শ যদি আপনার মনে হয় যে আপনার সন্তানের জন্য খারাপ, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করুন।

* নতুন কাজের লোকের কাছে শিশুকে রাখতে হলে তার প্রতি বিশেষ নজর রাখুন।

* শিশুরা একটু বড় হলেই আমরা তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চেনাই। এই সময় শিশুদের প্রাইভেট বডি পার্ট চিনিয়ে দিন। এই ব্যক্তিগত অঙ্গে কারো হাত দেওয়া অনুচিত সেটাও জানিয়ে দিন। কেউ যদি এই অন্যায় কাজটি করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে জানাতে বলবেন।

* কম্পিউটার বাসার এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সবসময় আপনার নজর দেওয়া সম্ভব। কারণ পিডোফিলরা অনেক সময় ইন্টারনেটে চ্যাটরুমে শিশুদেরকে খুঁজে বেড়ায় সেক্স চ্যাটের জন্য।

* সন্তানকে সময় দিন। গল্প করতে করতে জেনে নিন সারাদিন ও কী কী করেছে, কার সঙ্গে কথা হয়েছে, কী কথা হয়েছে সবকিছু।

 

* সন্তানকে প্রথমেই আশ্বাস দিন যে আপনি কোনোভাবেই ওকে দোষী করছেন না। বকাঝকা, মারধোর, দোষারোপ করলে ফলাফল হিতে বিপরীত হবে।

* শিশুকে আলাদা সরিয়ে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলুন। সবার সামনে কথা বললে সে লজ্জিত বা অপমানিত হতে পারে। ওর প্রাইভেসিকে সম্মান করুন।

* শারীরিক আঘাতে যেমন চিকিৎসা করাবেন, তার সঙ্গে দেখাবেন একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞকেও।

* পিডোফিলকে শণাক্ত করতে পারলে সে যত কাছের লোক হোক না কেন তাকে অভিযুক্ত করুন। প্রয়োজনে আইনি সাহায্য নিন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়