ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সুখের সন্ধানে ...

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুখের সন্ধানে ...

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : ‘ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, সুখ চলে যায়...।’ আমরা যা চাই তা সুখের জন্য চাই। আর তা না পেলেই সুখও চলে যায়। খুব সহজ করে বলতে গেলে, আমরা যা চাই তা পেলেই সুখ, না পেলে অ-সুখ।

কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা কী চাই? চাওয়ার তো কোনো শেষ নেই। টাকা-পয়সা, নাম-যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি এমন হাজারো চাহিদা আমাদের থাকেই। ভালো বেতনের চাকরি বা বড় ব্যবসা, বিশাল আয়তনের ফ্ল্যাট, নামী ব্রান্ডের গাড়ি, সন্তানদের নামী স্কুল-কলেজে ভর্তি, তাদের দেশের বাইরে পাঠানো, বছরে এক-দুবার বিদেশ ভ্রমণ এমন লম্বা ফিরিস্তি দেওয়া যেতেই পারে যা আমরা সকলেই পেতে চাই। আর কেন পেতে চাই? সুখের জন্য।

তাহলে কি সুখ মানেই ইচ্ছাপূরণকেই বুঝি? আর তাই যদি সত্যি হয় তাহলে তো বিত্তশালী বিশিষ্ট ব্যক্তি মাত্রই সুখী। কিন্তু আদতেই কি তাই? রূপকথার গল্পে ‘সুয়োরানীর সাধ’ নামের একটা গল্প ছিল। রাজপ্রাসাদ, দাসীবাঁদী নিয়ে সোনার পালঙ্কে থেকেও সুয়রাণীর সুখ ছিল না। কুঁড়ে ঘরে থাকার সাধ জেগেছিল তার। আসলে সুখ যেন আলেয়ার মতোই অলীক। তাই এর হাতছানীও দুর্নিবার। সুখের সংজ্ঞা দেওয়াও তাই খুব কঠিন।

আমি যা চাইছি, যখন চাইছি, যেমনভাবে চাইছি তেমনভাবেই তা যদি পাই তাহলেই আমি সুখী মানুষ। আমরা আসলে নিয়ন্ত্রণ ভালোবাসি। জীবনের ওপর, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর, সম্পর্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকাটাকেই আমরা সুখ বলে মনে করি। দৈনন্দিন ছোটখাট ঘটনা দিয়েই বোঝা যেতে পারে। সকালে কাজের বুয়া আসার সময় পেরিয়ে গেলেই অশান্তি শুরু হয়। আসবে তো? সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে পারবো তো? মানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া মানেই সুখের হানি ঘটা।

বাড়ি, গাড়ি, ভালো ক্যারিয়ার চাওয়ার মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। কিন্তু আমরা অনেক সময় এই চাহিদার অন্তহীন জালে জড়িয়ে পড়ে এমন দৌড়ে সামিল হই, যেখানে মনের যত্ন নিতে ভুলে যাই। আসলে সুখে থাকা মানেই হচ্ছে, ভালো থাকা। আর ভালো থাকতে গেলে টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি ছাড়াও যা দরকার তা হল পরিবার, পরিজন ও কাছের মানুষদের নিয়ে ভালো থাকা, সুস্থ থাকা। চলুন তাহলে সুখী হওয়ার কিছু কৌশল রপ্ত করে ফেলা যাক-

* বৈষয়িক চাহিদার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রপ্ত করে ফেলাই সুখী জীবনের অন্যতম প্রধান শর্ত। কারো অপ্রত্যাশিত আচরণে রাগ বা দুঃখ হতেই পারে। কিন্তু ঝোঁকের মাথায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মানসিক সুস্থিরতা বজায় রাখুন।

* ভালো থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু টাকা রোজগারের নেশা যেন আপনাকে পেয়ে না বসে।

* সফল ক্যারিয়ার সবারই কাম্য। কিন্তু তার জন্য কতদূর এগোবেন তার লাগাম আপনার হাতে রাখুন।

* সবসময় মনে রাখবেন, আমাদের কারো জীবনই নিরবচ্ছিন্ন সুখ, স্বাচ্ছন্দে ভরা নয়। ভালো-মন্দ মেশানো জীবনে সুখ-দুঃখের হাত ধরেই আমাদের সবাইকে চলতে হয়।

* পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করুন। আক্ষেপ করবেন না। অহেতুক পরশ্রীকাতর না হয়ে খোলা মনে অন্যের প্রশংসা করতে শিখুন।

* সেন্স অব হিউমারের ওপর জোর দিন। হাসতে জানা, মজা উপভোগ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের অমূল্য জীবনীশক্তি।

* মনে রাখবেন উচ্চ মানের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সবসময় সুখের মানদণ্ড নয়। সুখের ভাবনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছে, সহমর্মী হওয়ার প্রবণতা। অন্যের আবেগ, কষ্টের জায়গা বুঝতে শিখলে সুখ বাড়ে বৈ কমে না।

* আপনার পরিবারকে সুখে রাখতে হলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে সম্পর্কের বনিয়াদ শক্ত হতে হবে, বোঝাপড়া থাকতে হবে। মন খুলে কথা বলার জায়গা যেন পায় পরিবারের প্রতিটি মানুষ।

* জীবনকে ভালোবাসতে হবে। জীবনে চলার পথে দুঃখ পেতেই হয়। সে দুঃখের ঝাপটা থেকে নিজেকে বাঁচাতে শিখতে হবে। আর এই বেঁচে ওঠাতেই সুখ।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়