ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বামী যখন চল্লিশে

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৪ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বামী যখন চল্লিশে

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : সকাল সকাল তুমুল অশান্তি। ভালো বাংলায় বলতে গেলে দাম্পত্যকলহ। অফিস যাওয়ার তাড়াহুড়াতে আপনার স্বামী হয়তো তার ভেজা তোয়ালেটি রেখে দিলেন সোফার উপর। আবার ছেলের স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক মিটিংয়ে যেতেও অস্বীকার করছেন অফিসের অজুহাত দেখিয়ে। সকালে এমনিতেই আপনি সংসারের কাজ আর অফিস যাওয়ার তাড়না নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। তারপর যদি স্বামীর এমন কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় পান তাহলে আপনারও আর মাথা ঠিক রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এককথায়, দুইকথায় কথা বেড়ে চলল। তারপর দুজনেই মেজাজ খারাপ নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন। কিন্তু এরপর?

এরপর অফিসে যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠেই ফোন করলেন আপনার বান্ধবীকে। কাউকে ঘটনাটা শেয়ার না করলে শান্তি পাচ্ছিলেন না। বান্ধবী অনেক বোঝালেন আপনাকে। আপনার রাগ বেশ প্রশমিত হল। অফিসের প্রিয় সহকর্মীর সঙ্গেও এই নিয়ে কথা হল। এবার আপনার বেশ হালকা লাগতে লাগলো। দিনের শেষে আপনার চারপাশের প্রিয় ব্যক্তিদের সহানুভূতি আপনার ক্ষতে ঠাণ্ডা প্রলেপ লাগিয়ে আপনাকে শান্ত করে দিয়েছে।

কিন্তু আপনার স্বামীর ঘটনাপ্রবাহ তখন একটু অন্য খাতে বইছে। মেজাজ খারাপ নিয়ে উনিও অফিসে পৌঁছালেন। বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। ক্যারিয়ারের মিড পয়েন্টে রয়েছেন। তাই অফিসে দায়িত্বও অনেক। সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাজনীতি আর খেলাতেই সীমাবদ্ধ। ব্যক্তিগত আবেগের পথটা একেবারেই বন্ধ। আপনার মতো পারছেন না নিজের মনের কথা কারো কাছে খুলে বলতে। তাই তার মনে চাপ জমতেই থাকে।

যে কোনো পারিবারিক অশান্তি স্বামী-স্ত্রী দুজনের মনেই প্রভাব ফেলে। কিন্তু স্বামী ব্যক্তিটি অন্যের কাছে আপনার মতো শেয়ার করে হালকা হতে পারেন না, তাই এই চাপ কাটাতে তিনি হয়তো সঙ্গী করছেন সিগারেটকে। স্বামীর মনের ভূগোলটা যতটা সহজ মনে করেছিলেন, তা কিন্তু মোটেও নয়।

শুধু দাম্পত্য সমস্যাই নয়, চল্লিশ পেরনো পুরুষের জীবন আরো নানা জটিলতায় পূর্ণ। এই বয়সে শুরু হয় নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, হঠাৎ মোটা হয়ে যাওয়া, কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, ফ্যাটি লিভার সব এই বয়সেই দেখা দেয়। চিন্তায় পড়ে গেলেন? স্বামী যখন চল্লিশের ক্রাইসিস সময় পার করছেন, তার এই সময়টাতে আপনিই দাঁড়াতে পারেন তার হাত ধরে। কীভাবে? চলুন দেখে নেওয়া যাক-

* খাওয়া-দাওয়া : সকালের নাস্তা কখনো মিস করতে দেবেন না। সকাল নয়টার মধ্যে নাস্তার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বেশি রাত করে রাতের খাবার দেবেন না। এক-দুই দিন রাত হয়ে যেতেই পারে, কিন্তু প্রতিদিন যেন খাবারে দেরি না হয় তা খেয়াল রাখুন।

* ব্যায়াম : চল্লিশ পেরিয়ে গেলে ব্যায়াম অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। সকালেই যে ব্যায়াম করতে হবে তার কোনো মানে নেই। অফিস থেকে ফিরেও করা যায়। দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো খুব ভালো ব্যায়াম। ছুটির দিনে স্বামীকে উৎসাহ দিতে আপনিও তার সঙ্গী হয়ে হাঁটতে বের হয়ে যান।

* অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস : কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়েবেটিসের সঙ্গে সঙ্গে কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসও চল্লিশের পর পুরুষদের বিপদ ডেকে আনে। সিগারেট বা মদ্যপানের নেশা শরীরে প্রভাব ফেলে মারাত্মকভাবে। ফ্যাটি লিভার এই বয়সের পুরুষদের একটা সাধারণ সমস্যা। ফ্যাটি লিভার থেকে হয়ে যেতে পারে লিভার সিরোসিস। এছাড়া এই বয়সে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা আরো বেড়ে যায়। আপনি হয়তো হুট করেই স্বামীর অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস দূর করে ফেলতে পারবেন না। তবে এ সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। বিভিন্ন আর্টিকেল তাকে পড়তে দিয়ে এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল করতে পারেন।

* জীবনধারায় পরিবর্তন : স্বামীর জীবনধারার পরিবর্তনে আপনিই নিতে পারেন মুখ্য ভূমিকা। পরিবার বা কাজের জায়গাকে দায়িত্ব হিসেবে না দেখে সেটাকে ভালোবাসার জায়গা ভাবতে হবে। স্বামীকে বোঝান অফিস বা পরিবারে যেমন দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনভাবে প্রাপ্তিও আছে। কাছের মানুষদের সঙ্গে পারস্পারিক আদানপ্রদানের মধ্যে যে অনেক ভালোলাগা জড়িয়ে আছে তা বুঝতে তাকে সাহায্য করুন।

* নিজেদের নতুন করে খুঁজুন : বিয়ের কয়েক বছর পরেই সম্পর্কতে একঘেয়েমি চলে আসে। দুজন মিলে সেই একঘেয়েমি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে নিন। হঠাৎ করে একসঙ্গে বাইরে বের হওয়া, রেস্তোরাঁতে রাতের খাবার খেতে যাওয়া, একসঙ্গে সিনেমা দেখা আপনাদের সম্পর্কের একঘেয়েমি কাটাতে সাহায্য করবে।

* অভিযোগ নয় : সময় দিচ্ছেন না বলে স্বামীর কাছে অভিযোগ করেন স্ত্রীরা। অভিযোগের আঙুল উঠলে স্বামীরা হয়ে যান ডিফেন্সিভ। ফলে লেগে যায় ঝগড়া। আসলে স্বামীকে আপনি অভিযোগ করতে কথাগুলো বলেন না, চান তার ব্যবহারের পরিবর্তন। তাহলে অভিযোগের সুরে নয়, আন্তরিকভাবে ব্যাপারটা জানান। স্বামীর অপারগতা বুঝতে পারলেই এবং সে ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হতে পারলে দেখবেন আপনাদের বোঝাপড়াটাও হবে মজবুত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলেও আপনার স্বামীর মন থাকবে সবসময় ফুরফুরে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুন ২০১৮/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়