ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে আটঘাট বেঁধে মাঠে আ.লীগ

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে আটঘাট বেঁধে মাঠে আ.লীগ

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে প্রচার অভিযানে বিকল্পধারার মেজর (অব.) আবদুল মান্নান

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে মহাজোটের প্রার্থীকে জয়ী করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। যে কোন মূল্যে আসনগুলো ধরে রাখাই তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।

ইতোমধ্যেই জেলার সবকয়টি আসনেই জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছে। প্রচারে এখানে আওয়ামী লীগই এগিয়ে। অন্যদিকে দৃশ্যত মাঠে প্রচারে অনেকটাই পিছিয়ে ধানের শীষ প্রার্থীরা। বিএনপির এক সময়কার ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত আসনগুলো এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের দখলে। যদিও এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার এসব আসনগুলো পুণরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও তার সতীর্থ ঐক্যফ্রন্ট।

দীর্ঘ ১০ বছরের উন্নয়নকে পুঁজি করেই এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই ভোটারদের কাছে গিয়ে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নের সেই চিত্র। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে পুনরায় নৌকায় ভোট চাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। জেলার  সবকয়টি আসনের হাটবাজার ও পথেঘাটে করছেন আনন্দ মিছিল আর পথসভা। এসব প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাই। এখানে আওয়ামী লীগের ভাল দিক হচ্ছে, তাদের মধ্যে কোনো দলীয় কোন্দল নেই। তারা ঐক্যবদ্ধ।

এবারের নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগেরই ৫৯ জন। কিন্তু ৪ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ২ জন। বাকি দুইটিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দলের প্রার্থী। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আনোয়ার হোসেন খান (আওয়ামী লীগ), লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) মোহাম্মদ নোমান (জাতীয় পার্টি), লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) এ কে এম শাহজাহান কামাল (আওয়ামী লীগ) ও লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আবদুল মান্নান (বিকল্পধারা)।

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৪ জন। তার মধ্যে দল মনোনয়ন দিয়েছেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেন খানকে। অবশ্য আনোয়ার হোসেন খান তরিকত ফেডারেশন থেকেও মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। এই আসনে পূর্বে কখনোই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করেনি। এবার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

এই আসনে বিপরীতে রয়েছেন বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ন-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (ধানের শীষ) । ধানের শীষ প্রতীক প্রার্থীর নিজ বাড়ির আশেপাশে কয়েকটি পোস্টার ও স্টিকার ছাড়া আসনটির অন্য কোথাও নির্বাচনী প্রচারপত্র দেখা যায়নি। অবশ্য সেলিম অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভয়ে নির্বাচনী প্রচারপত্র ঝুলাতে পারছেন না। তারপরেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে বিজয় নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।

খালেদার ঘর হিসাবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন ১৮ জন। কিন্তু কেউই চুড়ান্ত মনোনয়ন পাননি। এখানে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির লক্ষ্মীপুর সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ নোমান। শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও বর্তমানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মহাজোট প্রার্থীকে বিজয়ী  করতে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত শিল্পপতি শহিদুল ইসলাম পাপুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার মার্কা আপেল। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, শেষ পর্যন্ত পাপুল মহাজোট প্রার্থীকে সমর্থন করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।

এখানে ধানের শীষের প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়া। এখানে জামায়াতেরও শক্ত অবস্থান। তাই আসনটি পেতে জোর দাবি ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ জামায়াতের তৃণমূলের কর্মীরা। অন্যদিকে দীর্ঘ ১০ টি বছর ও সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীরা পাশে পায়নি এই এমপি প্রার্থীকে। বিএনপির কর্মীদের ভাষ্য, তিনি শুধু ভোট এলেই কর্মীদের কাছে আসেন। ফলে এই আসনটিতে বিএনপির জয় নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়।

সন্ত্রাসী জনপদ হিসাবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) সংসদীয় আসনটি। এখানে লাদেন মাসুম, বাবুল, শামীম, জিসান, আজিজ, ইসমাইল মোল্লা, মুন্না, সুলাইমান, দিদার, মিলন, আবুল কাশেম জিহাদীসহ ছোটবড় প্রায় ১৫টি বাহিনী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সক্রিয় ভাবে কাজ করতো। আর এসব বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিলো আসনটির সাধারণ জনগন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দমন করেছেন। বাকিরা রয়েছেন আত্বগোপনে। এই আসনের শান্তি ফিরানোর পাশাপাশি দশ বছরের উন্নয়ন ও সুসংগঠিত দলই আওয়ামী লীগের ভরসা। আসনটিতে দলীয় চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন এ কে এম শাহজাহান কামাল। আসনটিতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রার্থীসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এখানে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্য গ্রুপিং। গত রোববার সকল মান অভিমান ভুলে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ তবে এই ঐক্য নির্বাচন পর্যন্ত থাকবেনা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী হিসাবে মান্নানকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন আওয়ামী লীগে ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। এখানে তার দলের ভোটব্যাংক না থাকলেও রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ভোটব্যাংকই তার ভরসা। তাই তিনি সাধারণ ভোটারদের চেয়েও বিএনপি-জামায়াতের ওপরই বেশি নির্ভরশীল।




রাইজিংবিডি/ লক্ষ্মীপুর/২০ ডিসেম্বর ২০১৮/ফরহাদ হোসেন/টিপু 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়