ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সব্যসাচী লোক সম্পর্কে ১০ চমকপ্রদ তথ্য

উদয় হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সব্যসাচী লোক সম্পর্কে ১০ চমকপ্রদ তথ্য

প্রতীকী ছবি

উদয় হাসান : আমাদের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ তাদের উভয় হাত সমান দক্ষতায় ব্যবহার করতে পারে। এসব লোককে বলা হয় অ্যাম্বিস বা সব্যসাচী। তবে সকল সব্যসাচীর দুহাতই যে সকল কাজে সমান তালে চলে তা নয়। উদাহরণসস্বরূপ, কারো বামহাত কিছু কাজ ভালোভাবে করতে পারে, আবার কারো ডানহাত কিছু কাজ ভালোভাবে করতে পারে। এখানে সব্যসাচী লোকদের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দেওয়া হলো যা আপনাকে বিস্মিত করবে।

* সব্যসাচী লোকের সংখ্যা খুবই কম
মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ হলো সব্যসাচী লোক। যেসব লোকের ডমিন্যান্ট হ্যান্ড বা প্রধান হাত নেই তাদের সংখ্যা প্রতি ১০০ জনে প্রায় ১ জন। যদিও বামহাতি অনেক লোক তাদের নন-ডমিন্যান্ট হ্যান্ড বা অপ্রধান হাতকে প্রায় ডমিন্যান্ট হ্যান্ডের মতো ভালোভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম।

* সব্যসাচী লোকদের মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে
সব্যসাচী লোকের মধ্যে প্রকারভেদ রয়েছে। কিছু লোক সবসময় উভয় হাতেই সমান দক্ষতায় সব কাজ করতে পারে এবং তাদের সংখ্যা খুব বিরল। একজন লোক বামহাতি অথবা ডানহাতি হিসেবে যেসব কাজ স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারে এরা উভয় হাতের যেকোনোটা দিয়েই তা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। এদেরকে বলে অ্যাম্বিডেক্সট্রাল। কিছু সব্যসাচী লোক রয়েছে যাদের উভয় হাতে সমান দক্ষতা নেই, এরা কিছু কাজ বামহাতে এবং কিছু কাজ ডানহাতে ভালোভাবে করতে পারে। আবার কিছু সব্যসাচী লোকের কোনো ডমিন্যান্ট হাত থাকে না এবং তারা উভয় হাতই ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু তাদের কোনো হাতই খুব শক্তিশালী নয়। এসব লোককে বলা হয় অ্যাম্বিসিনিস্ট্রাল। কোনো হাত দিয়ে এদের কাজ করার দক্ষতা তেমনই যেমনটা করে একজন ডানহাতি লোক তার বাম হাত দিয়ে। মেন্টাল ফ্লসের মতে, অ্যাম্বিসিনিস্ট্রাল লোকদের উভয় হাতে ডানহাতি লোকের বামহাতের সমান কর্মদক্ষতা থাকে।

* সব্যসাচিত্বের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগসূত্র রয়েছে
সব্যসাচিত্ব নির্দেশ করে যে কোনো সব্যসাচী লোকের মস্তিষ্কের বাম পাশ ও ডানপাশের মধ্যে খুব সাদৃশ্যতা রয়েছে, অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্কের উভয় পাশ সিমেট্রিক্যাল। বামহাতি লোকদের ক্ষেত্রেও একথা সত্য। অন্যদিকে ডানহাতি লোকদের মস্তিষ্কের বামপাশ ডমিন্যান্ট হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

* সব্যসাচী লোকদের অনেকেই বামহাতি হিসেবে শুরু করে
যেহেতু সব্যসাচী ও বামহাতি লোকদের মস্তিষ্কের মধ্যে খুব মিল রয়েছে, তাই একজন সব্যসাচী লোকের জীবন শুরু হতে পারে বামহাতি হিসেবে অথবা বামহাতি লোকের জীবন শুরু হতে পারে সব্যসাচী হিসেবে এবং তা স্বাভাবিক। ‘সিনিস্টার’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘সিনিস্ট্রা’ থেকে, যার মৌলিক অর্থ ছিল ‘বাম’। শত শত বছর ধরে বামহাতকে কেন্দ্র করে অনেক কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। মনে করা হতো যে, বামহাতের সঙ্গে অশুভ কিছুর সম্পর্কে রয়েছে, যেমন- জাদুবিদ্যা ও ভূত-প্রেত। তাই মধ্যযুগ থেকে ২১ শতক পর্যন্ত অনেক বামহাতি লোককে চাপ প্রয়োগ করা হতো যে তারা যেন ডানহাতে কাজ করে। এভাবে বামহাতিরা সব্যসাচিত্ব লাভ করে বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে ইনজুরির কারণেও অনেক ডমিন্যান্ট হ্যান্ডের লোক সব্যসাচী হতে পারে।

* সব্যসাচী লোকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তেমন একটা ঝোঁক থাকে না
আশ্চর্যের কথা হলো- সব্যসাচিত্বের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগসূত্র থাকলেও সব্যসাচী লোকেরা মানসিকের চেয়ে শারীরিক কাজের প্রতি বেশি ঝোঁক দেখিয়ে থাকে। একারণে হয়তো তারা বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় একহাতি লোকদের তুলনায় কম স্কোর অর্জন করে। একটি ফিনিশ গবেষণায় সাত থেকে আট বছরের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৮০০০ জনের মধ্যে ৮৭ জন উভয় হাত ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিল। ডানহাতি ছাত্রদের তুলনায় সব্যসাচী ছাত্রদের ৯০ শতাংশ বেশি গাণিতিক সমস্যা ছিল এবং এসব সব্যসাচীদের ভাষাগত সমস্যাও বেশি ছিল।

* সব্যসাচিত্বের সঙ্গে এডিএইচডি’র যোগসূত্র রয়েছে
ফিনল্যান্ডের গবেষণাটিতে সব্যসাচী ও বামহাতি ছাত্রদের মধ্যে এডিএইচডির (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার বা অমনোযোগী ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণ ব্যাধি) লক্ষণ ডানহাতি ছাত্রদের তুলনায় দ্বিগুণ লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের মধ্যে যাদের ইতোমধ্যে এডিএইচডি নির্ণীত হয়েছে, তাদের মধ্যে সব্যসাচীদের উপসর্গ বেশি তীব্র ছিল।

* সব্যসাচিত্বের সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার যোগসূত্র রয়েছে
কাউকে বামহাতি করতে যে জিনটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তা হলো এলআরআরটিএম১। এ জিনটি স্কিজোফ্রেনিয়া বা সিজোফ্রেনিয়ার (একটি মানসিক ব্যাধি, যেখানে রোগীর মধ্যে কাল্পনিক জগৎ তৈরি হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার সাদৃশ্যতা নেই) ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে। যেহেতু বামহাতি এবং সব্যসাচী লোকদের মস্তিষ্ক অনুরূপ, তাই সব্যসাচী লোকেরাও সিজোফ্রেনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। অন্যান্য লোকের তুলনায় সব্যসাচী ও বামহাতি লোকদের মধ্যে এ অবস্থাটি বেশি ধরা পড়ে।

* সব্যসাচী লোকেরা কিছু কাজে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে
সব্যসাচিত্ব কোনো ব্যক্তিকে সংগীত, চিত্রকর্ম অথবা খেলাধুলায় অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত অ্যাম্বিস বা সব্যসাচী লোকের মধ্যে রয়েছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, বেন ফ্রাঙ্কলিন ও আলবার্ট আইনস্টাইন। ফ্রাঙ্কলিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেছিলেন বামহাত দিয়ে! মেরুন ৫ এর ফ্রন্টরানার অ্যাডাম লেভিন বামহাত দিয়ে লিখেন, কিন্তু অন্যান্য কাজ করেন ডানহাত দিয়ে, যদিও তিনি সম্পূর্ণরূপে সব্যসাচী নন। ফিগার স্কেটার মাইকেল কোয়ান এবং লিব্রন জেমসের উভয় হাত ব্যবহারে সমান দক্ষতা রয়েছে।

* সব্যসাচী লোকদের আবেগ পরিবর্তনশীল
মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে, সব্যসাচী লোকদের আবেগ তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে অধিক পরিবর্তনশীল। গবেষকরা এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের আবেগকে কিছু আবেগীয় প্ররোচক দিয়ে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল। দেখা গেছে যে বামহাতি ও সব্যসাচী লোকদের দ্রুত আবেগীয় পরিবর্তনে তাল মিলানোর ক্ষমতা ডানহাতি লোকদের তুলনায় বেশি ছিল।

* সব্যসাচী লোকদের সিনেস্থেসিয়ার প্রবণতা বেশি
সব্যসাচী ও বামহাতি লোকদের মধ্যে সিনেস্থেসিয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। সিনেস্থেসিয়া হলো এমন এক অবস্থা যেখানে কারো মধ্যে একই সময়ে একাধিক সেন্স উদ্দীপ্ত বা সক্রিয় হয়। উদাহরণস্বরূপ, তারা রঙের ছবি দেখেই তার ঘ্রাণ পেতে শুরু করে অথবা রঙকে শুনতে পারে, যেখানে অন্যান্য লোকেরা মানসিক অনুভূতি পেয়ে থাকে সেখানে তারা (সিনেস্থেসিয়া প্রবণ লোক) শারীরিক অনুভূতি পেয়ে থাকে অথবা তারা সংখ্যার সঙ্গে ব্যক্তিত্বের যোগসূত্র ঘটাতে পারে কিংবা তারা প্রতিটি অক্ষরের পৃথক গন্ধ অনুভব করতে পারে। অর্থাৎ মিশ্র সেন্সের অনুভূতিই হলো সিনেস্থিয়া। গ্রীক সিন (একত্রে) এবং অ্যাস্থে (অনুভব করা) থেকে সিনেস্থেসিয়া শব্দের উৎপত্তি। পৃথিবীকে ভিন্নভাবে দেখার একটি উপায় হলো সিনেস্থেসিয়া, কিন্তু এটি রোগ নয়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়