ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মা দিবস থেকেই বাবা দিবস

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ১৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মা দিবস থেকেই বাবা দিবস

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্বের অনেক দেশে বেশ ঘটা করে ‘বাবা দিবস’ পালন করা হয়। এ দিবসে সন্তানের উপহার ও ভালোবাসায় বাবা সিক্ত হন। বাবা দিবস মানে বাবাকে ঘিরে উদযাপিত দিন। কিন্তু আপনি কি এ বিশেষ দিবসের প্রকৃত ইতিহাস জানেন? তবে জেনে রাখুন, বাবা দিবসের উৎপত্তি হয়েছে শত বছরেরও বেশি সময় পূর্বে। প্রকৃতপক্ষে, বাবা দিবসের ইতিহাস দীর্ঘ ও বিতর্কিত।

বাবা দিবসের আগে মা দিবসের সূচনা হয়েছিল। ১৮৬০-এর দিকে প্রথম মা দিবস উদযাপন করা হয় এবং ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মা দিবসে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। ইতিহাসবিদরা জানান যে, মা দিবসই বাবা দিবস সৃষ্টিতে উদ্দীপনা যুগিয়েছে। বাবা দিবসের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ১৯০৮ সালে ফিরে যেতে হবে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি চার্চের সামনে ১৯০৭ সালে কয়লা খনিতে নিহত ৩৬২ জন পুরুষকে স্মরণ করে সম্মান জানানো হয়। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাবাদের সম্মানিত করার ঘটনা। কিন্তু এখান থেকে বাবা দিবসের উৎপত্তি হয়েছে এমন বলা যাবে না।

পরের বছর অর্থাৎ ১৯০৯ সালে সোনোরা স্মার্ট ডোড নামে এক আমেরিকান নারী বাবা দিবস প্রতিষ্ঠা এবং ওই দিন সরকারী ছুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় নিয়ে মাঠে নামেন। ডোডের বাবা স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছয় সন্তানকে লালনপালন করেন। ডোড চিন্তা করলেন, মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো উচিত। তিনি এক বছর ধরে একটি পিটিশনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১০ সালের ১৯ জুন ডোডের জন্মরাজ্য ওয়াশিংটনে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। বছরের পর বছর অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা দিবস উদযাপন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এই দিবসে আইনগতভাবে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেন।

বাবা দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিক আইনগত স্বীকৃতি পেতে প্রায় ৬২ বছর লেগেছে এবং এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছু ঘটেছে। হিস্ট্রি ডটকমে উল্লেখ আছে, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দিকে মা দিবস ও বাবা দিবসের বিলুপ্তি ঘটাতে এবং এর পরিবর্তে কেবলমাত্র পিতামাতা দিবসের প্রচলন করতে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় আন্দোলন হয়। কিন্তু এসব আন্দোলন সফল হয়নি। কিছু পুরুষ শুরু থেকেই বাবা দিবসের বিরোধী ছিলেন। কেউ কেউ এ দিবসের প্রচলনকে বাণিজ্যিক ধান্দা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারো কারো মতে, এ দিবসটি সমাজে পুরুষদেরকে হেয় করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।

বিশ্বের সব দেশে একই তারিখে বাবা দিবস পালিত হয় না। কিন্তু বেশিরভাগ দেশে এ দিবসটি উদযাপিত হয় জুনের তৃতীয় রোববার, যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আর্জেন্টিনা ও ইউরোপ। দক্ষিণ আমেরিকায় মার্চের ১৯ তারিখ বাবা দিবস। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। থাইল্যান্ডে বাবা দিবস পালিত হয় ৫ ডিসেম্বর রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের জন্মদিবস অনুসারে। ব্রাজিলিয়ান বাবারা আগস্টের দ্বিতীয় রোববার সম্মানিত হন। এছাড়া আরো অনেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে বাবাদের সম্মান জানানো হয়।

দেশে দেশে বাবা দিবসের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও এই বিশেষ দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্যে হলো, বাবাদের সম্মান জানানো। বাবার প্রতি ভালোবাসা সবসময়ের জন্য, কিন্তু এই বিশেষ দিবসে আপনার বাবাকে বিশেষভাবে মূল্যায়িত করে চমকে দেয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। বাবা দিবস সকল বাবার মুখে হাসি ফোটাক। শুভ বাবা দিবস।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়