ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কিস্তিতে মার্সেল ফ্রিজ কিনে লাখ টাকা পেলেন রিকশাচালক

জাকির হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিস্তিতে মার্সেল ফ্রিজ কিনে লাখ টাকা পেলেন রিকশাচালক

মার্সেলের লাখ টাকার ডামি চেক হাতে ইলিয়াস হোসেন বাবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইলিয়াস হোসেন বাবুল। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। দিন আনেন দিন খান। তারপরেও ঋণ করে সেই টাকায় কিস্তিতে মার্সেল ফ্রিজ কিনেছেন তিনি। তাতেই পেয়েছেন এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার। এখন তার ঘরে টিভি-ফ্রিজসহ অনেক ইলেকট্রনিক্স পণ্য।

ক্যাশ ভাউচার প্রাপ্তি নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে ইলিয়াস বাবুল বলেন, ‘আমি একেবারেই গরিব, তা সত্ত্বেও এক লাখ টাকার পুরস্কার পেয়েছি। এটা বিশ্বাস করতেও ভয় করছে।’

ইলিয়াস বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝালকাঠির রাজাপুর থানার সুপ্তঘর ইউনিয়নের সাংঘর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। সাত বছর আগে মা মারা যান। বর্তমানে বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তার পরিবার।

ইলিয়াস বাবুল বলেন, ‘আমাদের জায়গা-জমি তেমন নাই। পরের রিকশা চালিয়ে কোনো মতে দিন চালাই। তবে মালিকের ভাড়া দিয়ে বেশি টাকা থাকে না। তাই ৫ মাস আগে সমিতি থেকে সুদে টাকা তুলে রিকশা কিনেছি। সারা দিন তা চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো আয় হয়। ৫ সদস্যের সংসার চালিয়ে অতিরিক্ত টাকা থাকে না। তারপরে আবার সমিতির সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে হয়। অভাব-অনটনের মধ্যে দিন যায় আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে বেশি কিছু কিনলে খরচ কিছুটা কম হয়। কিন্তু ছোট সংসারে বেশি কিনলে তা অপচয় হয়। বাসায় ফ্রিজ নেই যে ফ্রিজে রেখে খাব। প্রতিবেশিদের কারো ফ্রিজে কিছু রাখতে গেলে তারা বকাঝকা করে। এ কারণে অভাব-অনাটনের পরেও জেদ করে ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত নিই।’

ইলিয়াস বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ ওয়ালটন ও মার্সেল ফ্রিজ কিনেছে। সবার এক কথা ভালো সার্ভিস দেয়। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি কোম্পানি দুইটি কিস্তিতেও পণ্য বিক্রি করে। এ কথা জানার পর আর দেরি করিনি। নিজের টাকা নাই। তারপরেও আট হাজার টাকা ঋণ করি ফ্রিজ কেনার জন্য। সেই টাকা নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর এমএস তানিশা ইলেক্ট্রনিক্স শোরুমে যাই। যাচাই-বাছাই করে ৮ সিএফটির একটি ফ্রিজ পছন্দ করি। দাম ঠিক হয় ১৭ হাজার ৭০০ টাকা। এর মধ্যে আট হাজার টাকা নগদ দিয়ে ফ্রিজটি কিনি। বাকি ৯ হাজার ৭০০ টাকা তিন মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করবো।’

ইলিয়াস জানান, মার্সেলের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের অফার সম্পর্কে জানা ছিল না তার। ফ্রিজ কেনার সময় মার্সেল কর্মকর্তারাই তাকে বিষয়টি জানান। শোরুমের বিক্রয়কর্মীরা তার মোবাইল নম্বর নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেন।
 

মার্সেলের ক্যাশ ভাউচার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বাবুল


তিনি বলেন, ‘পছন্দের ফ্রিজটি নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেই। বাড়ি তখনো পৌঁছাইনি। এর মধ্যে শোরুম থেকে ফোন আসে। তারা জানান, আমি নাকি এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পেয়েছি। তখন আমার অন্তরে কেমন যেনো কম্পন ধরে। আমার মতো গরিব মানুষ কি করে এক লাখ টাকা উপহার পায়! তাড়াতাড়ি ফ্রিজটি বাসায় রেখে মার্সেলের ওই শোরুমে যাই। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা আমাকে জড়িয়ে ধরেন। তারা বলেন, আমি নাকি লাকি ম্যান। তাদের খাতির-যত্মে আমি মুগ্ধ। মনে মনে ভাবতে থাকি যে, আমার মতো গরিব মানুষ কী করে লাকি হয়? যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। যেখানে একটি ফ্রিজই কিনতে পারছিলাম না। সেখানে আজ কত পণ্য। এতো আনন্দ আমি কোথায় রাখবো বুঝতে পারছি না।’

তিনি জানান, তার ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার পর এলাকায় টানা দুই দিন মাইকিং হয়েছে। তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে। সেখানে এলাকার টিএনও পর্যন্ত এসেছিলেন।

ইলিয়াস বলেন, ‘আমার জীবন ধন্য হয়ে গেল। এত সম্মান, এত বড় পুরস্কার, এত বড় অর্জন আমার জীবনে কোনোদিন মেলেনি। এই পুরস্কার পাওয়ার পর আমার কেমন লেগেছে সে অনুভূতি বর্ণনা করতে পারবো না। শুধু এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা, স্ত্রী, ছেলে ও আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশি হয়েছে।’    

এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার দিয়ে কী পণ্য কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রিজ ছিল না তাই ফ্রিজ কিনেছি। আর যখন লাখ টাকার পুরস্কার পেলাম, তখন ওই টাকা দিয়ে দুটি ফ্রিজ, দুটি এলইডি টিভি, ওভেন, রাইস কুকার, আয়রন ইত্যাদি পণ্য কিনেছি। এগুলোর মধ্যে একটি ৩২ ইঞ্চি টিভিসহ বেশকিছু জিনিস আমাদের ব্যবহারের জন্য রেখেছি। বাকিগুলো আমার ভাই-বোনদের উপহার দিয়েছি।

মার্সেল পণ্যের দাম, মান ও গুণাগুণ সম্পর্কে ইলিয়াস বাবুল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে মার্সেলের ফ্রিজ ব্যবহার করে। এখন পর্যন্ত কেউ খারাপ বলেনি। দামের ব্যাপারেও কারো  কোনো অভিযোগ নেই। আমরা গরিব মানুষ বলে এর আগে টিভি ফ্রিজ এসব কিছুই ছিল না। তাই ভালো-মন্দ বলতে পারবো না। ব্যবহার করে সবাই যখন ভালো বলেছে, তখন আমিও বলবো মার্সেল পণ্য অনেক ভালো। আমি ও আমার আত্মীয়-স্বজন সবাইকে মার্সেল পণ্য ব্যবহার করার কথা বলছি।’

মার্সেলের বরিশাল জোনের এরিয়া ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম জানান, গত ৫ ডিসেম্বর এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইলিয়াস হোসেন বাবুলের হাতে ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচারে কেনা পণ্য তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা বেগম পারুল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু এবং রাজাপুর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মজিবর মৃধা।

উল্লেখ্য, ক্রেতাদের দোরগোড়ায় অনলাইনে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করেছে মার্সেল। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে নিশ্চিত ক্যাশ ভাউচার। মার্সেল প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুম থেকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল্যের পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার এই সুযোগ থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ডিসেম্বর ২০১৭/জাকির হুসাইন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়