ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সমুদ্রে সূর্যাস্ত ঘিরে সৈকত জনারণ্য

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমুদ্রে সূর্যাস্ত ঘিরে সৈকত জনারণ্য

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার : শহরের যান্ত্রিক জীবন যেন একটু শীতল হাওয়ার সৈকতের প্রেম মোহে আটকে গেছে। তাও আবার বছরের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য। সাগরের জলরাশি, ঢেউয়ের সুর যেন বিমুগ্ধ সৌরভ দিয়েছে মানুষের মনে। আর তাই বছরের শেষ সূর্যাস্তকে ঘিরে মানুষের জনারণ্য ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

 

আর এসব মানুষ বছরের শেষ সূর্যাস্ত উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় দিয়েছেন একটি বছর। তাদের সবার প্রত্যাশা ছিল যেন আগামী বছরটি সুন্দর হোক, স্বচ্ছ হোক।

 

শনিবার বিকেলে লাল সূর্যটি যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রে অস্তমিত হচ্ছিল তখন দেখা যায় কক্সবাজার সৈকতে লক্ষাধিক মানুষ আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। হাত নেড়ে বিদায় জানায় বছরের শেষ সূর্যাস্তকে। কেউ কেউ চিৎকার করে বলে ওঠেন ‘বিদায় ২০১৬’। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় একটি বছরের।

 

 

বিকেলে কুয়াশাছন্ন শীতের আকাশে বছরের শেষ সূর্যটি যখন ধীরে ধীরে সাগরের দিগন্ত রেখায় মিলিয়ে যাচ্ছিল সৈকতে উপস্থিত লাখো মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা বছরের শেষ দিন কক্সবাজারের অবস্থান করছে দুই লাখের বেশি পর্যটন। এসব পর্যটক ছাড়াও কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন বিকেলে সৈকতে অবস্থান নিয়েছেন।

 

বিকেলে কক্সবাজার সৈকতে গিয়ে দেখা গেল অভাবনীয় দৃশ্য। কুয়াশা ঢাকা শীতেও পর্যটকদের বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও ইনানীতে পাথরে সৈকত, হিমছড়ির ঝর্ণা, ডুলহাজারা সাফারিপার্ক, সীমান্ত শহর টেকনাফ, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। সৈকত ঝিনুক মার্কেট, বার্মিজ মার্কেটসহ বিপণিবিতানগুলোতে বেচা বিক্রির ধুম। শুটকি মাছের দোকানগুলোও জমজমাট।

 

হোটেল মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানান, কক্সবাজারে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ রয়েছে। এতে লক্ষাধিক পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এক সঙ্গে বিপুল পর্যটকের উপস্থিতি আবাসন সংকটে পড়তে হয়। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাত কাটানোর আয়োজন করেছে কেউ কেউ। কেউবা যানবাহনেও রাত যাপন করছেন। অনেকে সকালে এসে রাতের গাড়িতে গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

 

 

ঢাকার উত্তরা থেকে এসেছেন পর্যটক দম্পতি আতিক হাসান ও রুবি। তারা জানান, সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে একটি বছরকে বিদায় জানানো অন্যকরম সুখানুভূতি। সমুদ্রের বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে পুরনো সব গ্লানি মুছে নতুনকে গ্রহণের শপথ নিয়েছেন তারা।

 

চট্টগ্রাম থেকে থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী গোলাম রহমান। তিনি জানালেন, সাগরের নীল জলের টানে ছুটে এসেছি। এখানে আসলে জীবনের ব্যস্ততার কথা ভুলে যাই। ইচ্ছে করে ঝাউবিথী সমৃদ্ধ বালুচরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিই, ঢেউয়ের ভেলায় ভাসিয়ে দিই নিজেকে।

 

অন্যান্য বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে কক্সবাজারের তারকা হোটেলগুলোতে আকর্ষণীয় সব অনুষ্ঠান থাকলেও এবারে কোনো আয়োজন নেই। সন্ধ্যার পরে কোনো অনুষ্ঠান করতে প্রশাসনের বিধি নিষেধ থাকায় এবারে কোনো অয়োজন করা হয়নি। তবে জমজমাট বিচ কার্নিভালের আয়োজন বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে পর্যটকদের। নামিদামি তারকা ও ব্যান্ড দলের সংগীতানুষ্ঠান দেখতে সৈকতে উপচে পড়া ভিড় সামলাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 

 

তবে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী।

 

তিনি জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বয় করে বিচ কার্নিভাল ও লাখো পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে পুরো সৈকত নিরাপত্তার চাঁদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে ও বিচ কার্নিভালের মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ফলে পর্যটকরা আনন্দ, উল্লাস ও উৎসবে সবকিছু উপভোগ করতে পারবে।

 

এ ছাড়াও বিশেষ চেক পোস্ট স্থাপন, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে নজরদারিসহ সব রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/সুজাউদ্দিন রুবেল/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়