ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মুশতারী শফী

তানজিনা আফরিন ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মুশতারী শফী

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, সৃজনশীল সাহিত্য ও সাহিত্য সংগঠক হিসেবে ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৪’ পাচ্ছেন  লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফী।

আগামী ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের টিআইসি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

এই প্রথম অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন লেখক-সাংবাদিক আবুল মোমেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন নারীনেত্রী লেখক অধ্যাপক মালেকা বেগম এবং মুখ্যবক্তা হিসেবে থাকবেন লেখক অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম। সভাপতিত্ব করবেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।

শহিদজায়া ও শহিদভগ্নি বেগম মুশতারী শফী বর্তমানে চট্টগ্রাম উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, সম্পাদক, উদ্যোক্তা, নারীনেত্রী, সমাজসংগঠক এবং সর্বোপরি সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি লিখেছেন উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর গল্পগ্রন্থ, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই। সব মিলিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা গোটা বিশেক।

মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী ডা. মোহাম্মদ শফী ও তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটভাই এহসান শহিদ হন। পরিবারটি সবসময়ই চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

মুশতারী শফী ষাটের দশকের শুরুতেই চট্টগ্রামে নারীদের সংগঠন ‘বান্ধবী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে প্রকাশ করেন নারীদের নিয়মিত পত্রিকা ‘বান্ধবী’, এমনকি চালু করেন নারী পরিচালিত ছাপাখানা, ‘মেয়েদের প্রেস’। কম্পোজ করা থেকে শুরু করে, মেশিন চালানো, বাঁধাই সব কাজই একসময় ‘বান্ধবী’ রাই করতে লাগল। মুশতারী শফীর বাড়ির নিচের গ্যারাজের জায়গাতে ছাপাখানা বসানো হলো। ৬৮, ৬৯ এ রাজনৈতিক পোস্টার, লিফলেট এসব ছাপানোর কাজ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের’ সূত্রপাত হয়েছিল তার বাড়ি ‘মুশতারী লজ’ থেকেই। মেয়েদের গান, গিটার, তবলা, সেলাই, এমনকি চামড়া কেটে ডাইস করে ব্যাগ তৈরি করাসহ নানারকমের কুটিরশিল্পের কাজ শেখানো হতো বান্ধবী সংগঠন থেকে। ‘বান্ধবী পুরস্কারও’ প্রবর্তন করা হয়েছিল। একাত্তরে বান্ধবী সংঘের পক্ষ থেকে ৩টি বড় নারী সম্মেলন হয়। জীবিকাসূত্রে বেতার কথিকা, নিবন্ধ ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত কলামধর্মী লেখা লিখতেন মুশতারী শফী। গল্প, উপন্যাস ও ছোটদের জন্যও লিখেছেন। তবে তার লেখালেখির প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ : ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’। বইটির অনেকগুলো সংস্করণ বের হয়েছে। পরে এর ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটি গবেষণাধর্মী বই: ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কিছু ছোটগল্প লিখেছিলেন আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রের জন্য। সেগুলোও একপর্যায়ে ‘দুটি নারী ও একটি মুক্তিযুদ্ধ’ নামে বই-আকারে বের হয়। এ ছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ ও ‘একুশের গল্প’ নামে তার আরো দুটো ছোটগল্পের সংকলন রয়েছে। ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একসময় ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ নামে দীর্ঘ একটি গ্রন্থও রচনা করেন। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ওপর লিখেছিলেন ‘আমি সুদূরের পিয়াসী’। আর বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন ‘স্মৃতিতে অমলিন যারা’ গ্রন্থটি।

উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিককে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এপর্যন্ত যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন-সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, ড. সন্‌জীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, ড. নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন, সোনিয়া নিশাত আমিন এবং বেগম আকতার কামাল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৭/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়