ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সত্তরোর্ধ্বদের পেনশনে ফিরে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সত্তরোর্ধ্বদের পেনশনে ফিরে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা

কেএমএ হাসনাত : সরকারি চাকরি শেষে যারা শতভাগ পেনশন তুলে নিয়েছেন এবং যাদের বয়স ৭০ অতিক্রম করেছে তাদের আবার পেনশনে ফিরে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি চাকরি শেষে অনেকেই তাদের পুরো পেনশনের টাকা তুলে নেন এবং নানাভাবে ব্যয় করে আর্থিক সংকটে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হন। সম্পূর্ণ পেনশনের টাকা উত্তোলনকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে মানবিক কারণে তাদেরকে আবার পেনশনের অধীনে আনার অনুরোধ জানান। অর্থমন্ত্রীও বিষয়টি মানবিক কারণে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর মনোভাব ইতিবাচক হলেও অর্থমন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ এ বিষয়ে নেতিবাচক মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের এই সুবিধা দেয়া হলে অন্যান্য ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে অর্থমন্ত্রী বিদেশ সফরে রয়েছেন। তিনি আসার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ‘শতভাগ সমর্পণকারি পেনশনার্স ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে দেখা করেন। তারা এক আবেদনে বলেন, চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর তারা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছেন। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১০ বছর বা তারও বেশি। এদের সকলের বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। এখন তারা আবার পেনশনের আওতায় (প্রতিস্থাপন) নিজেদের নিয়ে আসতে চান।

তারা যুক্তি দিয়েছেন, পেনশন একটি সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। ৭০ বছর ঊর্ধ্ব হওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা স্বাস্থ্যগতভাবে অক্ষম। অসুখ বিসুখে ভুগছেন, হাসপাতালে ভর্তি কিংবা প্রবীণ নিবাসে আছেন। সন্তানাদি থেকেও অনেকে বিচ্ছিন্ন। তাই এ অবস্থায় তাদেরকে আবার মাসিক পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হোক। এতে সরকারের ব্যয় তেমন বৃদ্ধি পাবে না।

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার কথা বললেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা এ সুবিধা না দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, এই দাবি মেনে নেওয়া হলে যারা পেনশন সমর্পন করেননি তারা অন্য কোনো দাবি নিয়ে হাজির হতে পারেন।

সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশনে যাওয়ার পর প্রতিমাসে পেনশনের টাকা পেয়ে থাকেন। তাদের অবর্তমানে উত্তরসুরীরা এ সুবিধা পান। তবে ১৯৮০ সাল থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেউ ইচ্ছে করলে পেনশনের পুরো টাকা একসঙ্গে তুলে নিতে পারেন। অনেক পেনশনভোগী পরিবারের নানা প্রয়োজন মেটাতে পেনশনের পুরো টাকা একসঙ্গে তুলে নেন। কেউ এ টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন কিংবা সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় ব্যয় করেছেন।

শতভাগ পেনশনের টাকা উত্তোলনকারী ৭০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীরা বর্তমানে শুধু উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন। বৈশাখী ভাতার প্রাপ্যতা আছে। পিপিও’র আওতাধীন থাকায় তারা সরকারের সঙ্গে একীভূত এবং সে কারণে তাদের সংখ্যা নিরুপণে কোন জটিলতা নেই।

সূত্র জানায়, ২০০৩-২০০৪ সালে ৩২ হাজার ২০০৭-২০০৮ সালে প্রায় ১৪ হাজার কর্মচারি শতভাগ পেনশন সমর্পন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ৭০ বছর সীমারেখা ধরায় প্রাপ্তিযোগ্য কর্মচারি সংখ্যা খুবই কম হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ ছাড়া অর্থের সংশ্লেষণ খুবই কম। বর্তমান হিসেবে মাসিক ২-৩ কোটি টাকা যা বার্ষিক ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। নতুনভাবে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না।  বর্তমানে পেনশনে জন্য অনুন্নয়ন বাজেটের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা আছে যার পরিমান ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পেনশনারদের সংখ্যা মৃত্যুজনিত কারণে ক্রমাগত হ্রাস পাবে। তাই যে পরিমান অর্থ অব্যায়িত থেকে যাবে তা থেকেই ব্যয় মেটানো যাবে। রাজস্ব খাতের অব্যায়িত অর্থও ক্ষেত্র বিশেষে এতে যোগ হতে পারে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়