ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কটকা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কটকা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ

চিত্রা হরিণের দল

আলী আকবর টুটুল, সুন্দরবন থেকে ফিরে : সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে শরণখোলা রেঞ্জের অধীন সমুদ্রের তীরবর্তী এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য।

এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এ ছাড়া নানান জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি, মনোরম চিত্রা হরিণের দল এবং বিবিধ রকমের বণ্য প্রাণির উপস্থিতির কারণে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় কটকা অভয়ারণ্য সব সময়ই আলাদা স্থান দখল করে আছে।

কটকা অভয়ারণ্যে যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে সুন্দরবন অঞ্চলে। কটকায় বেড়াতে আসার প্রধান মাধ্যম বলতে গেলে শুধু লঞ্চই। আর পর্যটকদের নিয়ে এই লঞ্চ নোঙর করা হয় কটকা খালে। খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেরিয়ে উপরে উঠলেই বন কার্যালয়। এখান থেকে খানিকটা পশ্চিমে এগুলেই দেখা মিলবে ইট বাঁধানো সংক্ষিপ্ত একটি পথের। এর পরে আরেকটু সামনে গেলে সমুদ্র। সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই স্থানটি বেশ মনোরম।

কটকা বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখি কাঠের তৈরি ফুট ট্রেইল। ট্রেইলের উত্তর পাশের মরাখালটির তলায় ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এ ছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে পারলে এখানে দেখা মেলে চিত্রা হরিণেরও।

 


ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট বিশেক হাঁটলে টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। দুই পাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি।

কটকা জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। এখানেই আপনি দেখতে পাবেন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় পাখি হিসেবে স্বীকৃত মদনটাক পাখিকে। আবার শীতের সময় ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে লোনা জলের কুমিরেরও।

কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্বদিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। টাওয়ারের পশ্চিম পাশে ঘন জঙ্গল। পূর্বে আর দক্ষিণে দীর্ঘ ছন বন। মাঝে মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরের পানি পান করেন কমর্রত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার ও স্থানীয় জেলেরা। এখান থেকে আশপাশে তাকালে দেখা মেলে সুন্দরবনের অতি বিপন্ন প্রাণি মাস্কফিনফুট আর উদবিড়ালের দল।

এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার থেকে খানিকটা সামনে এগুলে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খালের মাঝেও দেখা মেলে বিপুল সংখ্যক বণ্যপ্রাণির। সবমিলিয়ে কটকা অভয়ারণ্য যেন প্রকৃতি আর প্রাণেরই এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যময় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত সমুদ্রের তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য।

সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে বনে বাঘের দেখা মেলা ভার। আর তার ওপর বাঘের দেখা মিললেও নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই। তবে বাঘ দেখা ও নিরাপদে থাকা- এ দুই-ই সম্ভব সুন্দরবনের চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য থেকে।

 


কটকা ওয়াচ টাওয়ারকে পিছু ফেলে সোজা উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে জামতলা সমুদ্র সৈকত। পথে চলতে চলতে বিভিন্ন আকারের জামতলা সৈকতটির নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। জামতলা সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিজুড়ে শুধুই দেখা যায় দূরন্ত কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।

কোথাও কোথাও দেখা যায় জোয়ারের ঢেউয়ে ধুয়ে যাওয়া গাছের শেকড়। সৈকতটি সোজা পুবে গিয়ে শেষ হয়েছে কচিখালিতে।

ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের সুন্দরবনে দেখার অনেক কিছু রয়েছে। বিনোদনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। সুন্দরবনের কটকা, করমজল, হাড়বাড়ি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। অনেক ভাল লেগেছে।

কটকায় দেখা হয় বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। এই প্রথম সুন্দরবনে ঘুরতে আসলাম। দুবলার চরেও গিয়েছি। বনবিভাগ যদি পর্যটকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয় তাহলে আরো পর্যটক এখানে আসবে।

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়